নিউজ ডেক্স : চলন্ত ট্রেনের আসনে বসে জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি প্রসারিত করে দেবেন; তাকিয়ে দেখবেন সবুজ বাংলাদেশকে; কিংবা মনে মনে মিলিয়ে ফেলবেন কোনো ছন্দ? এই দিন হয়তো এবার শেষ হতে যাচ্ছে! কারণ চলন্ত ট্রেনের যাত্রীদের আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে পাথর নিক্ষেপ। দেশের প্রায় প্রতিটি রেল রুটেই বালক থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করা পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছুড়ে মজা পায়! কিন্তু এতে ঝুঁকির মুখে পড়ে যায় যাত্রীদের জীবন। খবর দৈনিক কালের কন্ঠের।
চলন্ত ট্রেনে পাথরের আঘাতে এর আগে যাত্রী এমনকী রেলকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকমাস ধরে রেলফ্যানদের দুটি বড় ফেসবুক গ্রুপ ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ এবং ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যান’স ফোরাম’ -এ প্রায় প্রতিদিন আসছে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের খবর। এতে আহত হচ্ছেন, নাক-মুখ-মাথা ফেটে যাচ্ছে অনেকের। নারী-শিশু-বৃদ্ধ কেউ বাদ যাচ্ছে না পাথর নিক্ষেপকারীদের কবল থেকে। এতে ভীষণ আতংকে ভূগছেন যাত্রীরা।
চোখ ও মাথা ফেটে যাওয়া একটি শিশুর ছবি পোস্ট করে লাবিব ইসলাম যেমন লিখেছেন, ‘এমনিতেই ট্রেনে যাতায়াত করি কম। ভাবছি সেটাও ছেড়ে দিব। বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপ কি কোনদিনই বন্ধ হবেনা!!!’
বাংলাদেশ রেলওয়ে গ্রুপে ভাঙা কাঁচের একটি ছবি পোস্ট করে হোসাইন সাফায়েত লিখেছেন, ‘মহানগর এক্সপ্রেসে করে কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসতেছি। কিছুক্ষণ পূর্বে আমাদের ট্রেনটি যখন ভৈরব জংশন এবং নরসিংদীর মাঝামাঝি স্টেশন দৌলতকান্দি পার হচ্ছিলো, তখন পাশের রেললাইন থেকে ৫-৬ জন ২০-২৫ বছরের যুবক পরপর অনেকগুলা পাথর ছুড়ে মারতেছিলো আমাদের ট্রেনের দিকে। হাতে মোবাইল না থাকায় ছেলেগুলোর ফটো বা ভিডিও করতে পারিনি। অবাক করার বিষয় হলো, আগে দেখতাম অল্প বয়সী বাচ্চারা ট্রেনে পাথর ছুড়তো, এখন পূর্ণ বয়স্করা ছুড়ে। অতীতে আমরা ট্রেনে পাথর ছুড়ার ফলে যাত্রী মৃত্যুর অনেক খবর শুনেছি, কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা আজও সচেতন হইনি।’
কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতীর যাত্রী রুদ্র আলম লিখেছেন, ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা অনেক খবর পড়েছি। কিন্তু আজ আমি স্বচক্ষে দেখলাম। যা আমার জানালা বরাবর ছুড়ে মারা হলো। যদিও আমি অক্ষত আছি। জমির শক্ত মাটির দলাটা আছড়ে পরে আমার আসন আর গেইট এর মাঝামাঝি অংশটায়। যতটুকু দেখলাম, পাথর ছূড়ে মারা ছেলেটের বয়স ৮/১০ বছর হবে। হাস্যজ্বল মুখে সে শস্য খেতের শক্ত দলা মাটি ছুড়ে মেরে আনন্দ নিয়ে হাসতেছে!!!!কী পরিমাণ মূল্যবোধ এর অবক্ষয় আমাদের সন্তানদের..!’
প্রতিদিন এমনই অসংখ্য পোস্টে পাথর নিক্ষেপের অভিযোগ উঠে আসছে। প্রতিদিন আহত হচ্ছেন অনেক যাত্রী। মারাত্মক আঘাত পেয়ে কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। এসব ঘটনার বেশিরভাগই মিডিয়ার নাগাল পাচ্ছে না। পাথর নিক্ষেপকারীদের সচেতন করতে এর আগে লিফলেট, মাইকিংসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের পাশাপাশি সাধারণ রেলপ্রেমীরাও এসব সচেতনতার কাজ করেছেন। তবে লাভ হয়নি কিছুই।
রেলযাত্রীদের দাবি, ট্রেনের জানালাগুলোতে অন্ততে নেট লাগানোর ব্যবস্থা করা হোক। জানালায় যে কাঁচগুলো থাকে, সেগুলোও ঢিলের আঘাতে ভেঙে যায়। তাছাড়া গরম আর ভিড়ের মাঝে জানালা আটকে রেখে যাতায়াত করা কোনো কাজের কথা নয়। একটা সময় ট্রেনে নেট লাগানো থাকত। বর্তমানে তা আর দেখা যায় না। কিন্তু মানুষকে তো রেলে যাতায়াত করতেই হবে। তাই জীবন বাঁচাতে দরকার আশু উদ্যোগ। সচেতনতা, সতর্কতার পাশাপাশি প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ।