Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | একুশে পদক পেলেন চট্টগ্রামের তিনজন

একুশে পদক পেলেন চট্টগ্রামের তিনজন

p-1-3

নিউজ ডেক্স : ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষা, গবেষণা এবং শিল্পকলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় এবার ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি পাচ্ছেন একুশে পদক। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার তাদের নাম ঘোষণা করেছে। একুশে পদকের জন্য যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদের তিনজনই চট্টগ্রামের। এর মধ্যে গবেষণায় ড. মাহবুবুল হক, শিক্ষায় ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া এবং ভাষা ও সাহিত্যে হরিশংকর জলদাসের নাম ঘোষণা করা করা হয়েছে।

মাহবুবুল হক : ম্যাক্সিম গোর্কির বিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’ নিয়ে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ড. মাহবুবুল হকের। রুশ সাহিত্যের বিখ্যাত এই উপন্যাস নিয়ে করা কাজটি প্রশংসিত হয়েছিল। এখান থেকে পেয়েছিলেন প্রেরণা। এরপর লিখেছেন অনেকগুলো গ্রন্থ। বেশিরভাগই গবেষণামূলক এবং প্রবন্ধের। ফলে গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেই পরিচিতি গড়ে ওঠা। অবশেষে সেই গবেষণার জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন তিনি।

যখন একুশে পদকের জন্য ড. মাহবুবুল হকের নাম ঘোষণা করা হলো তখন তিনি অবস্থান করছিলেন ভারতে। মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় বললেন, যেকোনো পুরস্কার আনন্দের। একজন লেখক এবং গবেষককে এ পুরস্কার উৎসাহিত করে। পাশাপাশি তৈরি করে দায়বদ্ধতা। দায়বদ্ধতটা এমন, কাজ করতে হবে মানুষের জন্য এবং সমাজের জন্য।

প্রসঙ্গত, ড. মাহবুবুল হকের পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে। তবে ছোটকাল থেকে জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। ১৯৬৯-এ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএ সম্মান এবং ১৯৭০ সালে প্রথম শ্রেণি পেয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ষাটের দশকে তিনি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১-এ অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনা, ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, অনুবাদ, সম্পাদনা ও পাঠ্যবই রচনা করে তিনি দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর চল্লিশটির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। তিনি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বাংলা পাঠ্যবইয়েরও রচয়িতা। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১২ ও ২০১৩ শিক্ষাবষের বাংলা শিক্ষাক্রম ও বাংলা পাঠ্যবই প্রণয়নে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন আহ্বায়ক হিসেবে।

ড. মাহবুবুল হক বানান বিষয়ক একাধিক বই লিখে গুণীজনের প্রশংসা অর্জন করেছেন। বাংলা বানানের সমতা বিধানে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কাজে ছিল তাঁর সক্রিয় ভূমিকা। তিনি বাংলা একাডেমির বানান অভিধান ও প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নের কাজ ছাড়াও একাডেমি প্রকাশিত ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ গ্রন্থের সহযোগী সম্পাদক ও লেখক হিসেবে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের তিনি অন্যতম সম্পাদক। লেখালেখি ও গবেষণার জন্য তিনি ফিলিপস পুরস্কার, মুক্তিযুদ্ধ পদক, মধুসূদন পদক, চট্টগ্রাম একাডেমি পুরস্কার, অবসর সাহিত্য পুরস্কার, রশীদ আল ফারুকী সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

ড. মাহবুবুল হক ভারতের কলকাতা, যাদবপুর, বিশ্বভারতী, কল্যাণী, পাতিয়ালা, গৌড়বঙ্গ ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ত্রিপুরায় ও কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে ভাষা-সাহিত্য, ইতিহাস ও ফোকলোর বিষয়ে সম্মেলন ও সেমিনারে অংশ নিয়ে গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ২০০৭ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সার্ক ফোকলোর উৎসবে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, তিনজন আধুনিক কবি, ইতিহাস ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতি, বইয়ের জগৎ : দৃষ্টিপাত ও অলোকপাত, বাংলা কবিতা : রঙে ও রেখায়, ভাষার লড়াই থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ, ফোকলোর ও অন্যান্য, বাংলার লোকসাহিত্য : সমাজ ও সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা : কয়েকটি প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, বাংলা সাহিত্যের দিক-বিদিক, কৃতীজন কৃতিকথা, মাঙ্মি গোর্কির মা, প্রবন্ধ সংগ্রহ ইত্যাদি। এছাড়া তিনি রচনা ও সম্পাদনা করেছেন শিশুতোষ অনেক গ্রন্থ। তাঁর এক দশকের গবেষণার ফসল ‘নজরুল তারিখ অভিধান’। এটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে।

প্রণব কুমার বড়ুয়া : দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া। শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায়ও রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। যার স্বীকৃতি হিসেবে পাচ্ছেন একুশে পদক।

নাম ঘোষণার পর অনুভূতি জানতে চাইলে ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া বলেন, আমি সারাজীবন শিক্ষকতা করেছি। শিক্ষার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। কলেজ করেছি, মেয়েদের কলেজ করেছি, হাই স্কুল করেছি। শিক্ষার প্রসারের জন্য, বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছি। মেয়েদের জন্য পদুয়ায় এবং পটিয়ায় দুটো স্কুল করেছি, দুটো কলেজ করেছি। এসব কারণে যে স্বীকৃতিটা পেয়েছি, সেজন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শিক্ষার জন্য কাজ করে সত্যিই ভালো লাগা কাজ করছে। শিক্ষার জন্য কাজ করায় যে মূল্যায়ন করেছে, তার জন্য আমি অভিভূত।

তিনি বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার পুরস্কারটা বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সমস্ত শিক্ষানুরাগীর জন্য উৎসর্গ করছি। পুরস্কার আমার দেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করলাম।

জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পদুয়া ডিগ্রি কলেজ, ঢাকার ধর্মরাজি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়া রাউজানে অগ্রসর বালিকা মহাবিদ্যালয়, পটিয়ার করল উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রয়েছে তাঁর।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট রাউজান উপজেলার আবুরখীল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া। শিক্ষা জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেছেন। একই সঙ্গে এমএ (পাালি) এবং বিএড প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পিএইচডি করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া তিনি ধর্মীয় শিক্ষা পালি সূত্র, আদ্ধ্য, বিনয় আদ্ধ্য, অভিধর্ম আদ্ধ্যর ওপর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

শিক্ষার বিকাশে তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন শিক্ষকতাকেই। দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ পদেও কর্মরত ছিলেন। তিনি কানুনগোপাড়া কলেজ, রাঙ্গুনিয়া কলেজ, অগ্রসর বালিকা মহাবিদ্যালয় এবং কুণ্ডেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

প্রণব কুমার বড়ুয়া দীর্ঘ ৪৫ বছর বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব ছিলেন। বিশ্ব বৌদ্ধ শান্তি সম্মেলন সংস্থা, এশীয় ধর্ম শান্তি সম্মেলন সংস্থা এবং এশীয় বৌদ্ধ ধর্ম শান্তি সম্মেলন সংস্থার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে আন্তঃধর্মীয় শান্তি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ লিখেছেন। এর মধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধদের অবদান’ এবং ‘বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থ দুটো প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে। তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে আছে, অতীশ দীপংকর, বৌদ্ধ আচরণবিধি, মহাথেরোকে যেভাবে দেখেছি, পৃথিবীর পথে পথে, গৌতম বুদ্ধের জীবন ও বাণী, শতবর্ষের বৌদ্ধ সাহিত্যিকদের অবদান ও সমাজজীবন। এছাড়া তাঁর লেখা অনেক প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে।

প্রণব কুমার বড়ুয়া থাই রাজা প্রদত্ত রাজগৌরব সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়া মহাত্মা গান্ধী জাতীয় পুরস্কার, মাদার তেরেসা পুরস্কার, বৌদ্ধ রত্ন উপাধি, ড. আহমেদ কর প্রজ্ঞাদীপ পুরস্কার, অল সিলং বুড্ডিস্ট সম্মাননা, ভারত থেকে ধর্মাদিপতি ও প্রজ্ঞাচর্চা সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি টানা দুইবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন।

হরিশংকর জলদাস : অনেকটা পরিণত বয়সে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন ড. হরিশংকর জলদাস। ‘কবিতা ও ধীবরজীবন কথা’ তাঁর প্রথম গ্রন্থ। তাঁর ডক্টরাল থিসিস ‘নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্ত জনজীবন’। তবে সাহিত্য জগতে তার পরিচিতি কথাসাহিত্যিক হিসেবে। কথাসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। সর্বশেষ পুরস্কার হিসেবে তার ঝুলিতে যুক্ত হচ্ছে একুশে পদক।

এ পদকের জন্য নাম ঘোষণার পর অনুভূতি জানতে চাইলে হরিশংকর জলদাস বলেন, একুশে পুরস্কার মানুষকে উজ্জীবিত করে, আন্দোলিতও করে। আমাকেও উজ্জীবিত করেছে, আন্দোলিত করেছে এবং অবাকও করেছে কিছুটা। কারণ, পুরস্কার পাব সেটা আমি ভাবিনি।

তিনি বলেন, আমার সমস্ত শরীরে নোনাজলের গন্ধ। সমুদ্রে জাল বেয়ে বেয়ে, মাছ ধরে ধরে আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনা করা। এরপর লেখালেখিতে আসা। কাকতালীয়ভাবে আমি আজকে আমার বাড়ি (পতেঙ্গা) এসেছি। বিকালে যখন পুরস্কারটা ঘোষণা করা হলো, তখন কিন্তু আমি সমুদ্রপাড়ে বসেছিলাম। এতে কাকতালীয়ভাবে মনে হয়েছে, আমার জন্ম তো নোনাজলের মধ্যে, আবার রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারটাও নোনাজলের ধারে বসে পেলাম।

স্মৃতিকাতর হয়ে তিনি বলেন, আজকে আমার দাদিকে খুব মনে পড়ছে। যে দাদি মাথায় নিয়ে মাছ বিক্রি করে করে, গলিতে গলিতে লইট্যা মাছ বিক্রি করে আমার পড়ার খরচ চালিয়েছেন, বই কিনে দিয়েছেন, সেই দাদিকে মনে পড়ছে। যারা আমার পাঠক, যারা আমাকে ভালোবেসে আমার বই-পত্র কিনেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

তিনি বলেন, যারা আমাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে আশীর্বাদ চাইব, কোনো প্রলোভনে মুগ্ধ হয়ে যেন আমি সস্তা লেখা না লিখি। এবারের বইমেলায় নতুন বই সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার বইমেলায় আমার দুটো উপন্যাস বেরিয়েছে।

হরিশংকর বলেন, বঙ্গোপসাগরের মাছের কথা আমরা জানি। আমরা যারা চট্টগ্রামের তারা বঙ্গোপসাগরের মাছ খাই। নানা পদের নানা কিসিমের মাছ আছে। সেই মাছেদের কিন্তু একটা জীবন আছে। ওদের মধ্যেও রাহাজানি আছে, হত্যা আছে, লুণ্ঠন আছে। নারী এবং জায়গা নিয়ে ওরাও কিন্তু যুদ্ধ করে। ঊনপঞ্চাশ রকমের ডাক্তার আছে ওদের মধ্যে; যাদের গায়ের রং আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের জার্সির মতো। এদের সমাজ নিয়ে তাদের মুখে কথা বসিয়ে আমি একটা উপন্যাস লিখেছি। নাম হচ্ছে ‘সুখলতার ঘর নেই’। এ গ্রন্থ সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা ইলিশ কন্যার সাথে একটা পাঙ্গাস ইলিশের প্রেম, দ্বন্দ্ব এবং পরিণয়ের জীবন উঠে এসেছে উপন্যাসে।

তিনি বলেন, ‘জলপুত্র’ ও ‘দহনকাল’ নামে আমার দুটি উপন্যাস আছে। এগুলোর শেষ খণ্ড, যেটাকে ট্রিলজি বলে। সেটাও এবার বেরিয়েছে। এবার চট্টগ্রামের বাতিঘর থেকে ‘নতুন জুতোয় পুরোনো পা’ নামে একটি ভ্রমণের বই বেরিয়েছে। গল্পসমগ্র বেরিয়েছে ‘অনার্য ও অজুন’।

নবীন লেখকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রথমত তাদের পড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। প্রচুর পড়তে হবে। পড়ে লিখতে হবে এবং লিখে দ্রুত প্রকাশ করবার চেষ্টা চালাতে পারবে না। নবীন লেখকরা নানাজনের লেখা যত পড়বে তত নিজের লেখার মান সম্পর্কে বুঝতে পারবে। তাই পড়তে হবে, না পড়লে হবে না। আকেটি বিষয়, তাদেরকে জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। যেমন আমি কোনো ভিক্ষুকের জীবন সম্পর্কে জানি না। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে যদি লিখি তাহলে সেটা লেখা হবে না। কিছুদিন আগে এটা ইন্টারভিউতে হাসান আজিজুল হকও (কথাসাহিত্যিক) বলেছেন, গোঠা জীবনটা আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। সেজন্যই বলছি, যার জীবনের অভিজ্ঞতা যত বিচিত্র হবে, যত সংঘাতপূর্ণ হবে, তার লেখাটা তত সমৃদ্ধ হবে।

নবীন লেখকদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, শুধু চোখ থাকলে হবে না। মানুষকে নিবিড়ভাবে দেখার যে চোখ সেটা অর্জন করতে হবে।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীকে সম্পর্কে তিনি বলেন, আজাদী আমার সূতিকাগার। প্রথম লেখা অন্য পত্রিকায় বেরিয়েছিল। তবে এরপর থেকে আজাদীকে নির্ভর করে আমার লেখার বিকাশ ঘটেছে। ওখানে লিখে লিখেই তো আস্তে আস্তে আমি পরিচিত হয়েছি। একটা সুন্দর বিল্ডিংয়ে মূল ভিত্তি হলো মাটির নিচে থাকা ইটগুলো। ঠিক তেমনি আমার লেখক জীবনের ভিত্তি হলো দৈনিক আজাদী।

হরিশংকর জলদাসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ১২ অক্টোবর। পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্ত জীবন’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে পদক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, এককালীন দুই লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!