ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | “আমি এক চট্টগ্রামের বাবা”

“আমি এক চট্টগ্রামের বাবা”

6396_1

ছোট একটা চাকরি করি।গত মাসে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে। আজ ইফতারি দিয়েছি জামাইয়ের বাড়িতে, প্রায় ১৫০০০ টাকা খরচ করে। একটু আগে মেয়ের ফোন।

বাবা কেমন আছেন?

-হ্যা মা ভাল। তুই ভাল আছিস ত?

আছি বাবা ভাল।

-এইভাবে বলছিস কেন?? তোর শ্বাশুর রা খুশি হয়েছে ত?

উরা কিছু বলেনি। ফুফু (জামাইয়ের ফুফু) বলেছে ইফতারি একটু কম হয়েছে।

-(তখন আমার চোখের পানি টলটল করছিল) আচ্ছা মা বলিছ, পরের বার থেকে আরো বাড়িয়ে দিব।

বাবা শুন। তুমি আমাদের বাড়িতে ঈদে কাপড় দিবে না?

-হ্যা মা দিব। কেন?

তুমি কাপড় দিওনা। খালা (জামাইয়ের খালা) বলেছে কাপড় দিলে সবার পছন্দ হবে না। কাপড় না দিয়ে টাকা দিয়ে দিতে। ৩০,০০০ টাকা দিলে, সবার নাকি হয়ে যাবে।

-আচ্ছা মা। তুই চিন্তা করিছ না। আমি এখন ও বেঁচে আছি।
(আমার বোঝতে দেরি হলনা, এতক্ষনে মেয়ের চোখের অনেক জল গড়িয়ে পড়েছে)

আচ্ছা বাবা, এখন রাখি।

-আচ্ছা মা ভাল থাকিস।

রাতে ছোট ছেলে নামাজ থেকে আসল।

বাবা তুমি আছ?

-হা আছি। কিছু বলবি?

হ্যা, ঈদের পর ২য় সপ্তাহে সেমিস্টার ফাইলান। আমার টিউশনির কিছু টাকা আছে। আপনি ২০ হাজার দিলে হবে।

-আচ্ছা দেখি। খেয়ে ঘুমিয়ে পর।

না বাবা, লেট হলে এক্সাম দিতে পারব না।

ঈদের পরে আবার কোরবান, মেয়ের বাড়িতে গরু দিতে হবে। গরুর যে দাম কমপক্ষে ৫০০০০ টাকা ত লাগবে। আবার নিজের জন্য ও একটা লাগবে।

এইখানে শেষ নয়, আরো রয়েছে মেয়ের বাড়িতে দেওয়ার বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন আয়োজন।

এই সব চিন্তা করতে করতে না খেয়ে শুয়ে পড়েছি। সাদিয়ার মা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছিল, কিছু না বলে শুয়ে পড়েছি।

মাথায় একটা বিষয় কাজ করছে। টাকা!! টাকা!! আর মেয়ের সুখ।

এইভাবে রাত ১২ টা। সবাই কান্না কাটি করছে। আমার ছোট মেয়ে আর আমার প্রিয় স্ত্রী সব চেয়ে বেশি কাঁদছে। শুনলাম বড় মেয়ে ও ইতিমধ্যে পৌছে যাচ্ছে।স বার দিকে চেয়ে থাকলাম। ঠিক ২ মিনিট পর আর কিছু জানিনা।

এইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমার মত অনেক বাবা। বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত ছেলে মেয়ে। হয়ত অনেকে এখন ও জানে না,তাদের বাবার মৃত্যুর রহস্য।

আপনারা বলেন?

আমার মত মধ্যবিত্ত বাবার পক্ষে এত কিছু সম্ভব?

তারা তা বোঝেনা কেন? বোঝেও এইভাবে হত্যা করছে কেন বাবাদের?

[লিখতে গিয়ে নিজে ও কান্না করে দিয়েছি।এইভাবে প্রতিনিয়ত আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রিয় বাবাদের।।

আমাদের চট্টগ্রামের এই কু প্রচলন কি পরিবর্তন হবেনা??

হচ্ছেনা কেন??

হচ্ছেনা কেন??

চলুন আমরা জেগে উঠি।

ধ্বংস করি এই অপসংস্কৃতি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!