নিউজ ডেক্স : সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে নির্মূল করতে সারাদেশে নানান রকম সব কাণ্ড-কারখানা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাগো নিউজ
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সব পরিসরকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলছে। ২০১২ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকে বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের পরিসরকে একেবারে সংকীর্ণ করে ফেলছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এখানে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্মূল করার একটা নীলনকশা তারা করেছে।
তিনি বলেন, এর ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে সরকার একতরফা নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে আগের রাতে নির্বাচন করে জনগণের মতামত বাতিল করে একটা প্রতিনিধিত্বহীন সংসদ গঠন করেছে, যার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই একই কায়দায় বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মামলা এবং চরমভাবে হয়রানি করছে। সহিংসতা সৃষ্টি করছে তারা, তাদের লোকজন এবং পুলিশ। সেখানে তারা মামলা দিচ্ছে বিএনপির লোকজনের নামে। একইভাবে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরের দিকে এমন ঘটনা বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৬ অক্টোবর ভাটারায় বিএনপির কর্মীসভায় পুলিশের হামলা হয়, ২৩ অক্টোবর উত্তরখানে বিএনপির কর্মীসভা পণ্ড হয় পুলিশি বাধায়, ১২ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানার বিএনপির নেতার বাসায় ফরম বিতরণের সময় পুলিশ হামলা করে ৫ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, গণতন্ত্র তারা না দিলে আমরা নাকি সমালোচনা করতে পারতাম না। গণতন্ত্র দেওয়ার তারা কে? অধিকার আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের জন্য আমরা আরও লড়াই করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিরকাল ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে এবং সেটাকে পাকাপোক্ত করার জন্য বারবার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য, নির্মূল করার জন্য, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার হত্যা সবকিছু করছে। এটাকে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবেই না, এটা ভয়ংকরভাবে একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা। হিটলার-মুসোলিনিও ছিল ফ্যাসিস্ট। তারা এভাবেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ভোটের অধিকার হরণ করেছে। তিনি বলেন, দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এটা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দিয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দেশে বিরোধীদলশূন্য একটা অবস্থা তৈরি করতে চায়। যারা রাজনীতি করছে বা নির্বাচনের সময় নির্বাচন করতে পারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে পারে, সেটাকে বাধা দেওয়ার জন্য সরকার এসব করছে। এটা সরকারের চিরাচরিত ধারণা বা ভীতি যে বিএনপিকে কোনো মতেই নির্বাচনের কাছে আসতে দেয়া যাবে না। বিএনপিকে নির্বাচনের আশপাশে আসতে দিলেই তারা জানে যে সামনে নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমান যে রাজনৈতিক অবস্থা, তাতে আমরা কোনো মতেই নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনকালীন সময়ে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষের ন্যূনতম অধিকার নেই। মিলাদ করা তো একটা ধর্মীয় অধিকার। এই ধর্মানুষ্ঠান করার অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। সংবিধান অধিকার দিয়েছে সভা করতে, মিছিল করতে। সাংবিধানিক অধিকার সরকার হরণ করে নিচ্ছে অর্থাৎ এই সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার অর্জনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এ সময় তিনি অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব মো. আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।