Home | সাহিত্য পাতা | মেঘের আড়াল থেকে (পর্ব- ৩)

মেঘের আড়াল থেকে (পর্ব- ৩)

426

শীলা ঘটক : বেশ কয়েকদিন হোল আকাশের সাথে তিতিরের ইনবক্সে কথা হয়। দুজনেরই বেশ ভালো লাগে, ফেলে আসা দিনগুলো যেন ছবির মতো চোখের ওপর ফুটে ওঠে। একটু একটু করে কথা বলার সময় বেড়ে চলে।
‘হ্যালো,
কি করছিস?’ তিতিরের কথাগুলো ফুটে ওঠে মোবাইলে।
‘এই বসে আছি’
‘বসে আছি মানে? কাজ নেই’
‘থাকবেনা কেন? সবসময় কাজ করবো নাকি?’
‘হা হা হা হা তা ঠিক বলেছিস’

আকাশের মনে অনেক প্রশ্ন এসে ভিড় করে, কিন্তু তিতিরের কাছে জানতে চাওয়াটা ঠিক হবে কিনা আকাশ বুঝতে পারেনা।
‘কি ভাবছিস?’ বলে ফ্যাল বলে ফ্যাল’ (একটা হাসির স্টিকার)
‘রুদ্র কেমন আছে রে? কি খবর ওর? কি করে এখন?’
তিতির জানতো যে আকাশ কারোর সাথে যোগাযোগ রাখেনা তাই অন্যথা না করে সরাসরি লিখতে থাকে।
‘তুই তো জানতিস যে ও স্নিগ্ধাকে ভালোবাসতো। কিন্তু রুদ্র মুসলিম হওয়ার জন্য স্নিগ্ধাদের বাড়িতে সে কি অশান্তি! একে হিন্দু তার ওপর আবার ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। ভালভাবে মেনে নেয়নি স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে। কিন্তু রুদ্র এহসানকে তো তুই চিনতিস, কি প্রচণ্ড দাপুটে ছেলে।

একদিন সন্ধ্যেবেলায় স্নিগ্ধা খুব কান্নাকাটি করছিল রুদ্রর কাছে, বলেছিল আমাকে ভুলে যা চিরকালের মতো। বাবা মা রাজি নয় তোর সাথে বিয়ে দিতে। রুদ্র বলেছিল, আমার অপরাধ? আমি দেখতে সুন্দর, পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি, কর্মঠ, শিক্ষিত, সুদর্শন পুরুষ। কিছুদিনের মধ্যে চাকরি পেয়ে হায়দ্রাবাদ যাবো, আর বলিস কি তোদের বাড়িতে কারোর পছন্দ নয়? আমাকে?! আশ্চর্য!…… তিতির লিখে চলেছে।
আকাশ ভাবতে থাকে রুদ্রর কথা। কি অসম্ভব ভালো ছেলে রুদ্র, ভাবা যায়না! এতো সুন্দর গান করতো যে সবাই মহিত হয়ে শুনতো। খুব রোম্যান্টিক, তেমন হাসিখুশি। আকাশ আবার তাকায় ইনবক্সের দিকে। তিতির লিখে চলেছে…..
.
রুদ্রর বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার, উনি ছেলের খবরটা জানতেন। কিছুদিন ধরে রুদ্র যে কিছু একটা নিয়ে চিন্তায় আছে সেটা বুঝতে পেরে একদিন রুদ্রকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিছু হয়েছে মনে হচ্ছে!’ রুদ্র ওর বাবাকে সব জানালো স্নিগ্ধার কথা। শুনে উনি বললেন, ‘আমি যাবো, ওদের বাড়িতে কথা বলতে’। রুদ্র বাধা দেয়, ‘না না আব্বু, তুমি যাবেনা, ওরা তোমায় অপমান করবে’। রুদ্রর বাবা মহম্মদ ওমর এহসান, অত্যন্ত ভালোমানুষ একজন। উনি ছেলের কোন কথা শুনলেন না, একদিন স্নিগ্ধাদের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলেন। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন ওনাদের। ওনারা একটাই কথা বার বার বলতে থাকলেন ‘রুদ্রকে আমরাও খুব পছন্দ করি, কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন সমাজ বলে একটা জিনিস আছে’।

উনি বললেন, ‘মানুষের জীবনের চেয়ে কি সমাজের দাম আপনাদের কাছে বেশী? তাহলে শুনে রাখুন এই বিয়ে হবে আর একটা কথা হিন্দু বা মুসলিম কোন মতেই এই বিয়ে হবে না। ওদের স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে দেবো। ওরা এখন কেউ ছোট নেই। দুজন দুজনকে ভালবাসে। ওদেরই ঠিক করতে দিন ওরা কি করবে। পারলে আমার মতো ওদের পাশে থেকে জীবনকে এগিয়ে দিতে সাহায্য করুন’। কথাগুলো বলে স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে গেলেন।

‘এই হলেন এহসান আঙ্কেল বুঝলি?’
আকাশ এতক্ষণ মন দিয়ে পড়ছিল তিতিরের লেখাগুলো। অতীত আকাশকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে…… কিন্তু না সে আর ফিরতে চায়না, মনের ভেতর এক অজানা অস্থিরতা তাকে ঘিরে ধরছে! নিজের কাছে নিজেই যেন হেরে যাচ্ছে…… এতদিন পর তিতির কেন এলো আবার! কি প্রয়োজন ছিল? কাল থেকে তিতিরের সাথে আর কথা বলবে না সে, এমনটাই মনে মনে ভাবে। কাল বলে দেবে আর যেন না আসে কথা বলতে।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময় এলেই আকাশ মোবাইল খুলে দ্যাখে তিতির কিছু লিখেছে কিনা।

‘কি রে কি করছিস?’ তিতির প্রশ্ন করে।
‘রুদ্রর কথা ভাবছি, কি সুন্দর যে ছিল ছেলেটা, ওদের কি বিয়ে হয়েছিল?’
‘হবেনা মানে? এহসান আঙ্কেল তারপর দুজনের বিয়ে দিয়েছিলেন খুব ঘটা করে। পরে অবশ্য স্নিগ্ধার বাড়ির সবাই রুদ্রকে মেনে নিয়েছে। খুব সুন্দর একটা ছেলে হয়েছে ওদের। একদম রুদ্রর মতো দেখতে। তুই ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠা আমি লিঙ্ক দিচ্ছি তোকে’।
‘ওরা এখন কোথায় আছে?’ আকাশ জানতে চায়।
‘ওরা হায়দ্রাবাদে আছে। তবে আঙ্কেল বলে দিয়েছে চাকরি শেষ হলে আবার কোলকাতায় ফিরে আসতে হবে’।

‘তুই আবার কবে কোলকাতায় আসবি?’ আকাশ জানতে চায়।
‘ কেন রে তোর কি আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে? আগে বল সেদিনের ঘটনার পর তুই আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছিস কিনা। বিশ্বাস কর আমার কোন দোষ ছিলনা। বাপি অমন করে তোকে কথাগুলো বলবে আমি ভাবতেও পারিনি। আজও সে কথা ভাবলে কান্না পায়!’

‘কাকু সেদিন যা করেছিল তোর ভালোর জন্য করেছিল’।
‘ভালো!! হা হা হা হা খুব ভালো করেছিল, সে তো আমি হাড়ে হাড়ে বুঝছি আজও। কি ভালো করেছিল আমার!’
আকাশ মোবাইল বন্ধ করে দেয়।

ক্রমশঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!