ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | জেলা পরিষদে বিত্তশালী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

জেলা পরিষদে বিত্তশালী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

নিউজ ডেক্স : জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠে বিত্তবান প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এ নির্বাচনে অন্তত ১৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যাদের নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ আছে। কয়েকজন প্রার্থীর জমিই আছে এক হাজার শতকের বেশি। এ নির্বাচনে ৬০ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী এবং ১৭ শতাংশ আছেন আইনজীবী। এছাড়া হত্যা, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা চলছে এমন ১৩ জনও প্রার্থী হয়েছেন। অতীতে মামলা ছিল এমন প্রার্থী হয়েছেন ১৯ জন। স্বশিক্ষিত, সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন থেকে এসএসসি পাশ করেছেন এমন প্রার্থী ১৭.৫ শতাংশ। ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৩৩ জন প্রার্থীর। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রার্থীরা স্বেচ্ছায় এসব তথ্য হলফনামা আকারে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিয়েছেন। ইসির ওয়েবসাইটে কয়েকজন প্রার্থীর হলফনামা পাওয়া যায়নি। কয়েকজনেরটা ছিল অস্পষ্ট। ইসির তথ্যমতে, চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে প্রক্রিয়ায় জেলা পরিষদ ভোট হচ্ছে সেটাকে কি কোনো নির্বাচন বলা যায়? ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো যেভাবে হয়েছে, সেখানে বিজয়ীরা এ নির্বাচনের ভোটার। সুতরাং তাদের ভোটে কীভাবে একজন ভালো মানুষ নির্বাচিত হবেন? তিনি বলেন, নির্বাচনে টাকার খেলা চলছে। এ কারণেই টাকা ওয়ালারা নির্বাচনে ভালো করছে। প্রার্থিতায় তাদেরই দাপট থাকবে-এটাই স্বাভাবিক।

জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনের হলফনামা প্রকাশের ক্ষেত্রেও গড়িমসি করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে। তবে ইসির ওয়েবসাইটে ২৫ জেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়নি। তাদের বেশির ভাগই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু চার প্রার্থীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মো. রুহুল আমিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। যদিও এ নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই প্রার্থীর হলফনামা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ইসি। অপর দিকে মাদারীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার হলফনামাও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। একইভাবে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদে মো. আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও সিলেটে মো. নাসির উদ্দিন খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের হলফনামা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের হলফনামা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে না-এমন কোনো সিদ্ধান্ত কমিশনের নেই। সবার হলফনামাই প্রকাশ করার কথা। কেন কিছু প্রার্থীর হলফনামা ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর দিন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা।

দেখা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি প্রার্থী কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক। ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এম হারুন অর রশীদ ও কনক কান্তি দাস। তাদের মধ্যে কনক কান্তি দাস আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। স্নাতকোত্তর পাশ এ প্রার্থী পেশায় ঠিকাদার। ব্যাংকে তার পাঁচ কোটি টাকা জমা আছে। চার একর কৃষিজমিসহ রয়েছে বিপুল সম্পদ। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, অতীতেও ছিল না। অপর দিকে বিদ্রোহী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এম হারুন অর রশীদ। তার স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ছয় কোটি ২৮ লাখ টাকা। ব্যবসায় পুঁজি রয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের দালান বা ভবন রয়েছে তার। এক হাজার ২০ শতক কৃষিজমি এবং আট একর অকৃষি জমি আছে। ওই জমির মূল্য উল্লেখ করেননি তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে তার সম্পদ রয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী এ প্রার্থী এমবিএ পাশ। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। অতীতে চারটি মামলা ছিল, সেগুলো খারিজ হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন প্রার্থী। তারা হলেন মো. দেলওয়ার হোসেন, মো. তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরী ও আজিজুল ইমাম চৌধুরী। তারা তিনজনই বিত্তবান। তাদের মধ্যে মো. দেলওয়ার হোসেনের ব্যাংকে জমা আছে চার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া তার ২০.৭৩ একর কৃষিজমি, পাঁচতলা বাড়ি ও তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। প্রায় ১০ একর জমিতে স্থাপিত খামারেরও অর্ধেকাংশের মালিক তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী এ প্রার্থী বিএ পাশ। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। অতীতেও ছিল না। তার কোনো ব্যাংক ঋণও নেই। একই জেলার আরেক প্রার্থী আজিজুল ইমাম চৌধুরীও ব্যবসায়ী। তার নগদ এক কোটি ১৮ লাখ টাকা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তার দোতলা দুটি বাড়ি এবং রাইস মিলের শেয়ার রয়েছে। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান। আগে মামলা হলেও তা নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি বিএ পাশ। আরেক প্রার্থী মো. তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরীও ব্যবসায়ী। এসএসসি পাশ এ প্রার্থীর ১৮ একর কৃষিজমি, পাঁচ একর অকৃষি জমি, দুটি বাড়ি ও ব্যাংকে টাকা জমা আছে। তবে জমি ও বাড়ির দাম উল্লেখ করেননি তিনি।

রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন মো. মোছাদ্দেক হোসেন। পেশায় ব্যবসায়ী এ প্রার্থীর নগদ টাকার পরিমাণ ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শেয়ারবাজার, বন্ড ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ আছে এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তার গাড়ির দাম ৩৫ লাখ টাকা। কৃষিজমি আছে ৫৮ লাখ টাকা মূল্যমানের। এ ছাড়া অকৃষি জমির দাম এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ভবন ও দেড় কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সদর উদ্দিন খানের এক কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, সাড়ে ২৬ বিঘা কৃষিজমি, তিনতলা পাকা ভবন, পাঁচটি ফ্ল্যাট ও ইটভাটা রয়েছে। খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হারুনুর রশীদের তিন কোটি ৯২ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। এ ছাড়াও বিপুল পরিমান স্থাবর সম্পদ রয়েছে। একই জেলার এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দারারও এক কোটি ৮২ লাখ টাকা রয়েছে। তারও বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদ আছে। গাইবান্ধার মো. আতাউর রহমানের টাকার পরিমাণ এক কোটি ২১ লাখ। এ ছাড়া সাত বিঘা অকৃষি জমি ও বাড়ি আছে তার।

এ ছাড়া নরসিংদীর মো. মনির হোসেন ভূঁইয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে এক কোটি চার লাখ টাকা, দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার কৃষি ও অকৃষি জমি আছে। যৌথ মালিকনায় তার অংশ হিসেবে ২০ বিঘা কৃষিজমি, ৯০ শতক অকৃষি, ২০টি দোকানের মালিক তিনি। রয়েছে তিন ও দুই তলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি দালান। সুনামগঞ্জের নুরুল হুদা মুকুটের রয়েছে নগদ এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। বন্ড, সঞ্চয় বা শেয়ারবাজারে তার বিনিয়োগের পরিমাণ এক কোটি ৭২ লাখ টাকা। রয়েছে ৬.৩৯ একর কৃষিজমি, চার তলা বিশিষ্ট বাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের সম্পদ। সাতক্ষীরায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. খলিলুল্যাহর নগদ টাকার পরিমাণ চার কোটি ৯২ লাখ টাকা। তার রয়েছে এক হাজার ৮৩৩ শতক কৃষিজমি। চারটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব রয়েছে তার। এ ছাড়া তিনি ১২১ শতক অকৃষি জমির মালিক। শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবিরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা। তার ১৯৬ ভরি স্বর্ণও আছে। ২৮৪ শতাংশ অকৃষি জমি, দুটি ভবন ও একটি বাড়ি আছে তার। সুনামগঞ্জের নুরুল হুদা মুকুটের নগদ টাকার পরিমাণ এক কোটি ১৪ লাখ। বন্ড, সঞ্চয় বা শেয়ারবাজারে তার বিনিয়োগ এক কোটি ২৭ লাখ টাকা। রয়েছে ৬.৩৯ একর কৃষিজমি ও চারতলা বাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদ।
হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা : হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্তত ১৩ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। আগেও তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল; যদিও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। এছাড়া গাইবান্ধার মো. শরিফুল ইসলাম, গাজীপুরের এসএম মোকসেদ আলম, চট্টগ্রামের নারায়ণ রক্ষিত ও জয়পুরহাটের আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ তালিকায় আরও আছেন নড়াইলের শেখ মো. সুলতান মাহমুদ, বগুড়ার মো. আব্দুল মান্নান, রাজবাড়ীর দীপক কুন্ডু, রাজশাহীর মো. আফজাল হোসেন, সাতক্ষীরার মো. খলিলুল্যাহ, হবিগঞ্জের ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, দিনাজপুরের আজিজুল ইসলাম চৌধুরী ও ঝিনাইদহের এম হারুন অর রশীদ।

শিক্ষাগত যোগ্যতা : হলফনামায় দেখা গেছে, ৮০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার কম। শতকরা হিসাবে তা দাঁড়ায় ১৭.৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কেএম নূর ইসলাম সিকদার নিজেকে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন বলে উল্লেখ করেছেন। ময়মনসিংহের মো. নূরুল ইসলাম রানা ও মো. হামিদুল ইসলাম নিজেদের স্ব-শিক্ষিত পরিচয় দিয়েছেন। আর আটজন এইচএসসি পাশ। বাকিরা উচ্চশিক্ষিত।

যেসব জেলা পরিষদ নির্বাচনের হলফনামা প্রকাশ করেনি ইসি : ইসির ওয়েবসাইটে ২৫টি জেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়নি। সেগুলো হচ্ছে কক্সবাজার, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, জামালপুর, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, ফেনী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট ও শরীয়তপুর। বেশির ভাগ জেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। -যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!