নিউজ ডেক্স : জামালপুরের বকশিগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী-সন্তানরা।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ এ ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাদিমের মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন নাদিম। পরে স্থানীয় সাংবাদিক এবং পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
গোলাম রাব্বানী নাদিম উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা। এমন নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নিহতের স্ত্রী মনিরা বেগম, ডিগ্রি পড়ুয়া বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত, অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ুয়া মেয়ে রাব্বিরাতুল জান্নাত ও প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলে রিশাদ আব্দুল্লাহসহ স্বজনরা। লাশঘরের সামনেই তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ।
নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিরাতুল জান্নাত বলেন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবুর অপকর্ম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আমার বাবা সংবাদ করেছিলেন। এরপর থেকেই আমার বাবার ওপর চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত ছিলেন। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করেছিলেন। গতকাল বুধবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল সেই মামলা খারিজ করে দেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন আমার বাবা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই রাতে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বাবার ওপর বাবু চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা করে। সেসময় চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল ছাড়াও রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চেয়ারম্যানসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, একজন সাংবাদিকের কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। আমার স্বামী সেটাই করেছেন। আর এজন্য আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, আমার স্বামীকে হত্যার যেন উপযুক্ত বিচার হয়। বাবু চেয়ারম্যানসহ যারা জড়িত তাদের সবার ফাঁসি চাই। এমন কঠিন শান্তি হয় যেন আর কোনো সাংবাদিককে নির্যাতনের শিকার ও প্রাণ দিতে না হয়।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিহত সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। ইতোমধ্যে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে সংবাদ করেন গোলাম রাব্বানী নাদিম। পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। চেয়ারম্যান বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও সংবাদ করেন নাদিম। এর আগে গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ১৪ জুন আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।