Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ে ১৮ বছর পর সংস্কার হচ্ছে

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ে ১৮ বছর পর সংস্কার হচ্ছে

(ফাইল ছবি)

(ফাইল ছবি)

নিউজ ডেক্স : নির্মাণের ১৮ বছর পর ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের উন্নয়ন কাজে হাত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্ষয় হয়ে যাওয়া রানওয়ে মেরামত করে ওভার’লে করতে গ্রহণ করা হয়েছে এই প্রকল্প। নতুন এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান রানওয়েকে ১০ ইঞ্চি উঁচু করে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এর ফলে বিমান উঠা-নামা ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এতে নানামুখী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাঁচশ’ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের বর্তমান ভবনটি নির্মাণ করা হয়। একই সাথে রানওয়ে সম্প্রসারণও করা হয়। ২০০১ সালের ২৪ মার্চ নতুন ভবনে বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন যে রানওয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সেটিতেই গত ১৮ বছর ধরে বিমান উঠানামা করছে। তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য সর্বমোট ৯৬৬৫ ফুট। এই রানওয়ে ব্যবহার করে বোয়িং ও এয়ারবাসের মাঝারি সাইজের বিমানগুলো ভালোভাবেই উঠানামা করছে। ইতোমধ্যে ড্রিম লাইনারও অবতরণ করেছে এবং যাত্রী নিয়ে বিদেশের পথে যাত্রা করেছে। কিন্তু ১৮ বছর আগে নির্মিত রানওয়ে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো মেরামত কাজ চললেও গত ১৮ বছরে বড় ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি ওই রানওয়েতে। এর প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর অবশেষে বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভার-লে করার জন্য ৫৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে রানওয়ের উপরে নতুন করে কার্পেটিং করা হবে। বিদ্যমান ৯৬৬৫ ফুট দীর্ঘ রানওয়ে দৈর্ঘ্যে না বাড়লেও ১০ ইঞ্চি উঁচু করা হবে। এতে বিমান উঠানামায় বেশ সুবিধা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা একজন পাইলট  বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেড়েছে। প্রচুর মানুষ বিমানে ট্রাভেল করে। বিমানের ভাড়াও কমে মধ্যবিত্তের নাগালে চলে এসেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে যেখানে ঢাকা চট্টগ্রামের ভাড়া ১২/১৩শ’ টাকা সেখানে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা ভাড়ায় বিমানে যাওয়া যায়। এতে আগে বাসে বা ট্রেনে চলাচল করতেন এমন বহু মানুষ এখন নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করেন। ভাড়া কমানোর ফলে যাত্রী বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ায় রানওয়ের ব্যবহারও বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। বিমান উঠানামায় ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়েছিল।

পাইলট বলেন, আমাদেরকে বিমান নামানোর সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। কোনো ধরনের অঘটন যাতে না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ মনযোগ দিতে হয়। রানওয়ের অবস্থা ভালো না হওয়ায় বিমানের গিয়ারের (চাকা) ক্ষয়ও তাড়াতাড়ি হয়। রানওয়ে ভালো থাকলে বিশ্বের এভিয়েশন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থাকে। যা বিদেশি ফ্লাইট অপারেটরদের এই বিমানবন্দরে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে শাহ আমানত বিমানবন্দর এতদিন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বেশ পিছিয়ে ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই পাইলট গতকাল বলেন, রানওয়ে ১০ ইঞ্জি উঁচু করে ওভার-লে করার যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করলে বিমানবন্দরটির ব্যবহার অনেক বেশি ঝুঁকিমুক্ত হবে। একই সাথে বিদেশি নতুন ফ্লাইট অপারেটরও আসতে আগ্রহী হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিমানবন্দরের রানওয়েকে রাস্তার সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, রাস্তা খারাপ হলে যেমন গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়, ড্রাইভাররা খারাপ রাস্তায় যেতে চান না, রানওয়ের ব্যাপারটাও ঠিক তেমন।

বেসরকারি ফ্লাইট অপারেটর কোম্পানির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের রানওয়ে উন্নয়নের প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। রানওয়ে উন্নীত হলে দেশের এভিয়েশন সেক্টর উপকৃত হবে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জামান জানান, সরকার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। রানওয়ের ওভার-লেও করা হবে। চট্টগ্রাম বিমাবন্দরের ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন আমরা ২৮/২৯টি ফ্লাইট অপারেট করছি। চার হাজারেরও বেশি যাত্রী হ্যান্ডলিং করছি। বিমানবন্দরের ব্যবহার এবং সক্ষমতা দুটোই বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সারোয়ার ই জামান বলেন, যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা বহু কাজ করেছি। এখন রানওয়ে ওভার-লে হয়ে গেলে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

টেকসই বিমান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য রানওয়ে ও ট্যাঙিওয়ে শক্তিশালী করার প্রয়োজন দেখা দেয়ায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্পটি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছে বলে উল্লেখ করে উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জামান বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির টেন্ডারও হয়ে গেছে, ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই রানওয়ে ওভার-লে’র কাজ শুরু হবে বলে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!