ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ইয়াবার পথ ধরেই আসছে ভয়ঙ্কর ক্রিস্টাল মেথ

ইয়াবার পথ ধরেই আসছে ভয়ঙ্কর ক্রিস্টাল মেথ

ফাইল ছবি

নিউজ ডেক্স : ইয়াবার পথ ধরেই দেশে ঢুকছে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। মিয়ানমার থেকে মূলত কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত পেরিয়ে আসছে মরণঘাতী এ নেশাদ্রব্য, চট্টগ্রাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা ফেনসিডিল, ইয়াবার মতো এই মরণ নেশাও পরিণত হতে পারে নীরব ঘাতকে। আর তার জন্যই বাংলাদেশকে এর বাজার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আইস পিলসহ প্রথমবারের মতো এক মাদক ব্যবসায়ীকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আর চট্টগ্রামে প্রথম ১৪০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথের একটি চালান ধরা পড়ে র‌্যাবের হাতে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন কেমিক্যালের বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা এই মাদক যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এক গ্রামের দাম ৭-১০ হাজার টাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী জানিয়েছেন, ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহৃত মেথামফেটামিনের সবচেয়ে বিশুদ্ধ অবস্থা আইস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইয়াবা আসক্তদের শরীরে একসময় অনেকগুলো ইয়াবা সেবনের পরেও কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তখন তারা সরাসরি মেথামফেটামিন গ্রহণ করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কঙবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আইস উদ্ধার হয়েছে। তিনি বলেন, দিনে দিনে বাড়ছে আইস আসক্তের সংখ্যা। আইসের চাহিদা এখন সব শ্রেণির মাদকসেবীদের। চাহিদার কারণে এ মাদকের পাচারও বাড়ছে। আর তাতে ধরাও পড়ছে একের পর এক চালান। তবে সমাজের সর্বস্তরের লোকজন এগিয়ে না এলে শুধুমাত্র প্রশাসন একা কখনো মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি সক্ষম হবে না।
সর্বশেষ কঙবাজারের উখিয়া থেকে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ক্রিস্টাল মেথ আইস জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এটি দেশের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় চালান, যেটি ফেলে পালিয়েছে চোরাকারবারীরা। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে উখিয়ার পালংখালী এলাকা থেকে এসব আইস জব্ধ করা হয়। কঙবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধিনায়ক মো. মেহেদি হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর দুইদিন আগে (১৮ জানুয়ারি) বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) টেকনাফের জালিয়ারদ্বীপ সংলগ্ন নাফ নদী থেকে ২২ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪.১৭৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস জব্দ করে। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ও সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে টেকনাফে আড়াই কেজি আইস জব্দ করে বিজিবি ও পুলিশ। দুই কেজি ৬৪ গ্রাম আইস জব্দ করলেও বিজিবি কাউকে আটক করতে পারেনি। পুলিশ ৫০০ গ্রাম আইসসহ দুই রোহিঙ্গাকে আটক করে।

কঙবাজারে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে আইসের বেশ কয়েকটি চালান ধরা পড়েছে; যার সবকটি চালান এসেছে টেকনাফ সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার থেকে। এর কয়েকটি চালান ধরা পড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকাতেও। কঙবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় নেওয়ার পথে মিনি ট্রাকের এয়ার কুলারে লুকিয়ে নেওয়া দুই কেজি ওজনের ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করে পুলিশ। গত অক্টোবরের এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ও সহকারী গ্রেপ্তার হলেও মূল মালিক ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

বিজিবির টেকনাফ-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনাফের স্থল ও নৌপথের সীমান্ত অতিক্রম করে আনা ৯ কেজি ২২১ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) জব্দ করা হয়।

অপরদিকে টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সহকারী পরিচালক সিরাজুল মুস্তফা মুকুল জানান, সদ্য বিদায়ী বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফের বিশেষ জোন বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে দুই কেজি ৮৬৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস জব্দ করে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ভয়ংকর এই মাদক নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ক্রিস্টাল মেথের বাজার তৈরির এই চেষ্টায় জড়িত মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। দেশের ইয়াবা গডফাদারদের মাধ্যমে তারা এই বাজার তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গত চার বছর ধরে। শুরুতে তারা ক্রিস্টাল মেথ মজুত করছে কঙবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলোতে। সেখান থেকে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

ক্রিস্টাল মেথ নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংস্থার চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়। প্রতিবেদনটি আরও বলছে, বাংলাদেশে ক্রিস্টাল মেথ ঢুকতে সহযোগিতা দিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল অর্থাৎ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওসের সীমান্ত এলাকায় আফিম উৎপাদনকারী অঞ্চলে বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে ক্রিস্টাল মেথ। কারখানাগুলোর নিয়ন্ত্রণে আছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!