নিউজ ডেক্স : অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আবারও নতুন করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসতে যাচ্ছে নগরীতে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এসব ‘বুদ্ধিমান ক্যামেরা’ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। কেন্দ্রীয়ভাবে সেগুলো মনিটরিং করা হবে। পুলিশের টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্যোগে দেশের সকল মেট্রোপলিটন সিটিতে এ ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত যখন নতুন পুলিশ কমিশনার দায়িত্ব নিয়েছেন, সিসিটিভির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রত্যেকেই সিসিটিভি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন এবং কিছু কাজও হয়েছিল। নগরবাসীর চাওয়া, এবারের পরিকল্পনা যেন স্থায়িত্ব পায়।
এরপর সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দেন। ফলে নগরীর ১৬ থানা এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানোর জোরদার ভূমিকা নেওয়া হয়েছিল। পরে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে অধিকাংশ সিসিটিভি নামিয়ে ফেলা হয়। যেগুলো ছিল, সেগুলোর অধিকাংশই অচল হয়ে যায়।
তার পরে সিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগ দেন ইকবাল বাহার। তিনি বলেন, নতুন যে ক্যামেরাগুলো লাগানো হবে সেগুলোর মধ্যে দুই মেগাপিঙেল এবং চার মেগাপিঙেল রেজুলেশনের ক্যামেরা থাকবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান ক্যামেরাগুলো দিয়ে ভালোভাবে দৃশ্য ধারণ হয় না। এজন্য আমরা বেশি রেজুলেশনের ক্যামেরা লাগাচ্ছি, যে দৃশ্যটা ধারণ হবে সেটা যাতে স্পষ্ট হয়। অপরাধীর ছবি যাতে স্পষ্ট হয়।
পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সফলতা বৃদ্ধি পায় ঠিকই, কিন্তু নষ্ট সিসিটিভি মেরামত না হওয়ায় নগরীতে সিসিটিভির সংখ্যা কমতে থাকে। এরপর সিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগ দেন মাহবুবুর রহমান। নতুন করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন সিসিটিভি লাগানো হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলো অচল হয়ে পড়ে।
সিএমপি কমিশনার হিসেবে সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর এসে চট্টগ্রাম নগরীকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করে তিনি বলেন, এসব ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে পুরো নগরীকে এক স্থান থেকে বসে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এসব আইপি ক্যামেরার সঙ্গে পুলিশের টহল কারের সংযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং ক্যামেরা স্থাপনের কথাও তিনি জানান। নগরীর বিভিন্ন স্পটে ৭০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় ৪১১টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়, যা সিএমপি সদর দপ্তরে স্থাপন করা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আছে। সিএমপি আই অফ চট্টগ্রাম নামে এ প্রকল্প হাতে নেয় তার সময়কালে। পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার মতো দক্ষ লোকবল নেই সিএমপির। ফলে প্রযুক্তি নির্ভর সেবাগুলো ক’দিন পরই মুখ থুবড়ে পড়ে।
এ অবস্থায় চলতি বছরে পুনরায় সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিএমপি। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, কিছু ক্যামেরা চালু আছে। অধিকাংশ ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে সংস্কারের অভাবে। আবার উদ্যোগ নিচ্ছি চালু করার জন্য। এগুলো স্থাপন ও নিয়মিত দেখভাল এবং সংস্কার করার জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করেছি। এখন বন্ধ সিসি ক্যামেরাগুলো চালু করার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে বিশেষায়িত ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিএমপির জনসংযোগ শাখার দায়িত্বশীল সূত্রমতে, পুলিশের টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্যোগে দেশের সকল মেট্রোপলিটন সিটিতে এ ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। আমেরিকা বা জাপান থেকে ক্যামেরাগুলো আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ওইসব দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে। আগে যেসব সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে সেগুলোর তুলনায় নতুন সিসি ক্যামেরাগুলো অনেক উন্নত প্রযুক্তির। ফলে এ ক্যামেরাকে বুদ্ধিমান ক্যামেরা বলা হচ্ছে। এসব ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, চেহারা চিহ্নিতকরণ, গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তিসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা। রাতে কোনো অপরাধ ঘটলে সহজেই অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবে পুলিশ ও র্যাব। আগামী জুন মাসের মধ্যে এসব ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। কেন্দ্রীয়ভাবে সেগুলো মনিটরিং করা হবে। ক্যামেরাগুলো নিজ নিজ মহানগরীর সেন্ট্রাল ডেস্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। বিশেষ করে ক্যামেরাগুলো মহানগরীর প্রবেশ পথে বেশি করে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে যেকোনো যানবাহনের প্লেটের নম্বর ও ব্যক্তির চেহারা দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং স্পষ্ট বোঝা যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীসহ ১০টি শহরের মূল পয়েন্ট, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সংগঠনের আশপাশে লাগানো হবে।
সিএমপির জনসংযোগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্থাপন করা ২৯টি আইপি ক্যামেরার মধ্যে সচল আছে ১৯টি। আর ১১৪টি (ম্যানুয়েল) সাধারণ ক্যামেরার মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ৬টি। সব মিলিয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্থাপন করা মোট ১৩৯টি ক্যামেরার মধ্যে সচল আছে মাত্র ২৫টি।
নগরীর নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, দেওয়ানহাট, দামপাড়া, জিইসি, ষোলশহর, বহদ্দারহাট, টার্মিনাল ও চান্দগাঁও ঘুরে দেখা যায়, সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা নেই। আবার কিছু জায়গায় থাকলেও তা অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা। গুরুত্বপূর্ণ ওইসব পয়েন্টে ক্যামেরা লাগানো হলেও রাতে কম আলোয় কোনো ছবিই ধারণ করতে পারে না। হয় ওইসব ক্যামেরা ঢাকা পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে, না হয় ডিশ লাইনের তারের সঙ্গে। ফলে এসব ক্যামেরায় ভালো রেজুলেশনের ফুটেজ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে নগরীর আলমাস মোড়, কাজির দেউড়ি মোড় ও মইজ্জারটেকসহ প্রায় ১৫টির বেশি জনসমাগমপূর্ণ স্থানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। -আজাদী প্রতিবেদন