নিউজ ডেক্স : বিভিন্ন বাহিনীর বেসামরিক পদে চাকরির দেওয়ার নামে ৫-৭ লাখ টাকা আদায় করা হতো। মেডিক্যাল চেকআপের কথা বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো ভুয়া সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে।
একপর্যায়ে বাহিনীর লোগো সম্বলিত নিয়োগপত্র দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো গ্রামে। নির্ধারিত দিনে চাকরিতে যোগদান করতে গেলে তারা জানতে পারতেন প্রতারিত হয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা খুইয়েছেন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভুয়া সেনা কর্মকর্তাসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।আটকরা হলেন- সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল (৪০), শামীম হাসান তালুকদার (৩৮) ও আলমগীর হোসেন (৪০)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে হতে ১ টি ভুয়া সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র, ২ টি ভুয়া বিজিবির পরিচয়পত্র, ৩ টি ভুয়া নিয়োগপত্র, ১৬ পাতা ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ১ টি ব্যাংক চেক ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল-মোমেন।
তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে আটক জুয়েল দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে সুকৌশলে পরিচিত হতেন। তার পরিচিত কয়েকজন উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে বাহিনীতে বেসামরিক পদে চাকরি দিতে পারবেন জানিয়ে ৫-৭ লাখ টাকা দাবি করেন।
টাকা দিকে রাজি হলে চাকরিপ্রার্থীদের মেডিক্যাল চেকআপ করার কথা বলে ঢাকায় আনা হতো। সেনাকর্মকর্তার পিএ পরিচয় দানকারী আটক আলমগীরের মাধ্যমে ভুয়া সেনা কর্মকর্তা আটক শামীমের সঙ্গে দেখা করাতে সেনানিবাসের কাছাকাছি বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান।
পরবর্তী সময়ে তারা চাকরিপ্রার্থীকে বাহিনীর মনোগ্রামসহ ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করতেন। নিয়োগপত্রে ভিকটিমের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষরসহ নিয়োগপত্রের পেছনে আঙুলের ছাপ নিয়ে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি চলে যেতে বলতেন।
পরে নির্ধারিত সময়ে নিয়োগপত্র নিয়ে তারা বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে যোগদান করতে গেলে জানতে পারেন তাদের নিয়োগপত্র ভুয়া। এভাবে চক্রটি বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাসহ আনুমানিক ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, জুয়েল এই চক্রের মূল হোতা। তার নামে ইতোপূর্বে অস্ত্র, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও মাদকসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। সে বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।
২০১৫ সালের দিকে চক্রের বাকি দুই সদস্যের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আলমগীর ও শামীম দুইজনই কম্পিউটার প্রিন্ট, ফটোকপি, অনলাইন জব অ্যাপ্লিকেশনের দোকানের মালিক। তাদের দোকানে চাকরির আবেদন করতে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমেই তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য সংগ্রহ করতেন। এমনকি সেসব চাকরি প্রার্থীদেরকেই তারা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করতেন।
জুয়েল শুরু থেকেই নিজেকে বিজিবির সদস্য হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। ফলে, অনেকেই চাকরির আশায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি। -বাংলানিউজ