ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ৫ কোটি টাকার এনজিওগ্রাম মেশিনের সেবা বন্ধ ৭ মাস

৫ কোটি টাকার এনজিওগ্রাম মেশিনের সেবা বন্ধ ৭ মাস

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে একটি এনজিওগ্রাম মেশিন ৭ মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি যন্ত্রাংশ (এক্স-রে টিউব) নষ্ট হওয়ায় সেবা বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা দামের মেশিনটির। নষ্ট হওয়া ওই যন্ত্রাংশের (এক্স-রে টিউব) খরচও প্রায় সোয়া কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দীর্ঘ দিন অকেজো পড়ে থাকায় সাধারণ রোগীরা এর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মেশিন অকেজো থাকার তথ্য নিশ্চিত করে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আশীষ দে বলেন, বিষয়টি আমরা একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আমাদের দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন। এর মধ্যে একটি অকেজো। এখন যেটি চলছে, সেটিও মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব দিচ্ছে। কোনো কারণে যদি এটিও অকেজো হয়ে পড়ে, তবে রোগীদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না বলে জানান বিভাগীয় প্রধান।

বিষয়টি নিয়ে নিজেরাও দুশ্চিন্তায় আছেন জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি। যে মেশিনটি এখন চলছে, কোনো কারণে সেটিও যদি অকেজো হয়ে পড়ে; তবে এই এলাকার রোগীদের বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। বিশেষ করে গরিব ও অসহায় রোগীদের দুর্ভোগটা বাড়বে বেশি।

এনজিওগ্রামের নষ্ট যন্ত্রাংশটি পরিবর্তনে ঢাকায় একাধিকবার চিঠি দেয়ার পাশাপাশি ফোনেও কথা বলেছেন জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আজ-কালের মধ্যে আমরা আরেক দফা চিঠি পাঠাবো। প্রয়োজনে ফোনেও কথা বলবো।

হৃদরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুটি মেশিনে আগে দৈনিক ১৫-২০ জন রোগীর এনজিওগ্রাম করা যেত বিভাগে। তবে একটি মেশিন অকেজো থাকায় এখন দিনে ৭/৮টির বেশি এনজিওগ্রাম করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ ৭ মাস ধরে এ ভাবেই চলছে। একটি মেশিন অকেজো থাকায় গরিব-অসহায় রোগীদেরই ভোগান্তি বেড়েছে বলে মনে করেন হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজোয়ান রেহান।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে (হৃদরোগ বিভাগে) একটি এনজিওগ্রাম করতে সবমিলিয়ে ৮ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। এর মাঝে সরকারি ফি ২ হাজার টাকা। এর বাইরে আনুষঙ্গিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বাবদ আরো ৫/৬ হাজার টাকা খরচ হয়। সবমিলিয়ে ৮ হাজার টাকার কিছু বেশি বা কম। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ খরচ কয়েকগুণ বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই সব রোগীর পক্ষে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই এনজিওগ্রাম পরীক্ষা করানো সম্ভব নয়। বিশেষ করে গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য এই হৃদরোগ বিভাগই একমাত্র ভরসা। কিন্তু আমাদের একটি মাত্র মেশিনের সেবা চলমান আছে। হঠাৎ করে সেটিও যদি অকেজো হয়ে পড়ে, এখন আমরা সে ভয়ে আছি। তাই অকেজো থাকা মেশিনটি চালু করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন ডা. রিজোয়ান রেহান। আর রোগীর চাপ অনুযায়ী বিভাগে অন্তত তিনটি এনজিওগ্রাম মেশিন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আশীষ দে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের এনজিওগ্রাম মেশিনটি বিভাগে স্থাপন করা হয় ৭ বছর আগে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ৫ বছর পর্যন্ত মেশিনটির ওয়্যারেন্টি সেবা দেয়। তবে চুক্তি অনুযায়ী ওয়্যারেন্টি সময়সীমা শেষ হওয়ায় এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই যন্ত্রাংশের (এক্স-রে টিউবের) খরচ বহন করতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও স্থানীয় ভাবে এক কোটি টাকার বেশি খরচের অনুমোদন নেই। যার কারণে এই যন্ত্রাংশ ক্রয়েও ঢাকার মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া উপায় নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

এনজিওগ্রাম কি ও কখন করতে হয় : চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এনজিওগ্রাম রক্তনালির একটি পরীক্ষার নাম ও চিকিৎসাপদ্ধতি। এই পরীক্ষাটি এক ধরনের স্পেশাল এক্স-রে পরীক্ষার মতো। যার সাহায্যে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির, মস্তিষ্কের রক্তনালি, কিডনির রক্তনালি ও হাত-পায়ের রক্তনালি দেখা যায়। যে পদ্ধতিতে এই পরীক্ষা করা হয় তাকে এনজিওগ্রাফি বলা হয়ে থাকে। আর পরীক্ষার পর এক্স-রে ইমেজ বা ফিল্ম যেটি বের হয় তাকে এনজিওগ্রাম বলা হয়। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির সমস্যা দেখার জন্য যে এনজিওগ্রাম করা হয় তাকে বলা হয় করনারি এনজিওগ্রাম।

চিকিৎসকরা বলছেন, হৃৎপিণ্ডের একটি রোগ আছে, যা করনারি আর্টারি ডিজিস বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিস নামে পরিচিত। কোনো কারণে যদি করনারি আর্টারির ভিতর চর্বি জমে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির অক্সিজেন ও নিউট্রিশন সরবরাহ ব্যাহত করে, তখন বুকে ব্যথা হতে পারে। এ সব রোগীর অবশ্যই করনারি এনজিওগ্রাম করা উচিত। যদি করনারি আর্টারিতে চর্বি জমে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তবে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হবে।

সঙ্গে সঙ্গে বমি হতে পারে। ঘাম হতে পারে, বুক ধড়ফড় করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই রোগকে তখন একিউট মায়োকর্ডিয়াল ইনফারর্কশন (Acute Myocardial Infarction) বলে থাকে। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি যদি করনারি আর্টারিতে চর্বি জমার জন্য অক্সিজেন ও নিউট্রিশন না পায় তখন হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি শুকিয়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি তখন পাম্প করতে পারে না। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং একিউট মায়োকর্ডিয়াল ইনফারর্কশন হওয়ার আগে এনজিওগ্রাম করাটা অপরিহার্য। হৃৎপিণ্ডের সব রোগের জন্যই এনজিওগ্রাম করার প্রয়োজন নেই। শুধু করনারি আর্টারি ডিজিস বা Ischaemic Heart Disease এর জন্য করা যেতে পারে এবং এর চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

যেভাবে এনজিওগ্রাম করা হয় : চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক রোগী এনজিওগ্রাম করতে ভয় পান। তাদের ধারণা এনজিওগ্রাম বুক কেটে বা বড় কোনো অপারেশন করে করা হয়। আদতে তা নয়। ডান কুঁচকির একটা রক্তনালি আছে তার নাম ফেমরাল আর্টারি। লোকাল এনেসথেসিয়া ব্যবহার করে ইনজেকশনের একটি নিডল দিয়ে ফেমরাল আর্টারিতে প্রবেশ করানো হয়। এ সময় একটি ক্যাথেটার-এর মাধ্যমে সরাসরি হৃৎপিণ্ডের করনারি আর্টারি দেখা হয়। এভাবেই এনজিওগ্রাম করা হয়। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!