ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | হোয়াইটওয়াশ করতে নেমে উল্টো বিশাল পরাজয় বাংলাদেশের

হোয়াইটওয়াশ করতে নেমে উল্টো বিশাল পরাজয় বাংলাদেশের

নিউজ ডেক্স : ম্যাচের আগের দিন আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়েছিলেন, ৩-০’তে সিরিজ জেতার লক্ষ্য তাদের। আপাতদৃষ্টিতে প্রথম দুই ম্যাচে সহজ জয় পাওয়ার পর, তৃতীয় ম্যাচের ‘বাজির দর’ও বাংলাদেশের পক্ষেই থাকার কথা। কিন্তু কাগজে-কলমের সব আলাপ মাঠের বাইরেই রাখল শ্রীলঙ্কা। দেশে ফেরার আগে বিশাল জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল তারা।

বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনবার জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরা। সঙ্গে ধনঞ্জয় ডি সিলভার ফিফটিতে ভর করে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বিপরীতে দুশমন্ত চামিরার আগুনে বোলিংয়ের জবাবই খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ।

ডানহাতি পেসারের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের বাংলাদেশের ইনিংস থেমে গেছে মাত্র ১৮৯ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৩ রানের জয় পাওয়া স্বাগতিকরা হোয়াইটওয়াশ করতে নেমে উল্টো হারল ৯৭ রানের বড় ব্যবধানে।

এই হারে সিরিজ থেকে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট পাওয়া হলো না বাংলাদেশের। অন্যদিকে ষষ্ঠ ম্যাচে এসে বিশ্বকাপ সুপার লিগে পয়েন্টের খাতা খুলল শ্রীলঙ্কা। আগের সিরিজে স্লো ওভার রেটের কারণে ২ পয়েন্ট খোয়ানোয় তাদের এখন রয়েছে ৮ পয়েন্ট।

লঙ্কানদের করা ২৮৬ রানের জবাবে শুরু থেকে একবারও মনে হয়নি ম্যাচটি জিততে পারে বাংলাদেশ। নিজেদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাসের ব্যর্থতায় দলে সুযোগ পাওয়া নাইম শেখ (১)। ব্যাট হাতে অফফর্মের ধারা বজায় রাখেন সাকিব আল হাসান। চতুর্থ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহীম। সেই দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৩১ ও ৪৭ ওভার উইকেটে থাকতে হয়েছিল তাকে। আজও এই ব্যাটিং ভরসাকে নামতে হয় ইনিংস শুরুর মাত্র ২০ বল পরই। তবে আজ আর লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি মুশফিক। ২৪তম ওভারে অভিষিক্ত রমেশ মেন্ডিসের প্রথম শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫৪ বলে ২৮ রান করেন তিনি।

মুশফিক সাজঘরে ফেরার আগে আউট হন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। থার্ড আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে কট বিহাইন্ড হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাঠের আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন তামিমকে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল যখন তার ব্যাটের কাছে তখন ব্যাট আবার মাটিতে স্পর্শ করেছে। তাই তামিমের ধারণা, বল তার ব্যাটে লাগেনি। থার্ড আম্পায়ার আউট দেয়ার পরও তাই বিস্ময় প্রকাশ করেন টাইগার দলপতি (২৯ বলে ১৭)।

মাত্র ৮৪ রানের মধ্যে তামিম, সাকিব ও মুশফিকের উইকেট হারিয়ে ফেলায় জয়ের আশা কার্যত তখনই শেষ হয়ে যায়। বাকিটা ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যক্তিগত ফিফটির গল্প। দুজনই আবার আউট হয়েছেন ফিফটি পূরণ হওয়ার ঠিক পরপর। যা শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে দলের।

ইনিংসের ৩২তম ওভারে দলীয় ১২৫ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিতে ৭২ বলে ৫১ রান করেন মোসাদ্দেক। পঞ্চাশ পূরণের পর রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন তিনি। আফিফ হোসেন ধ্রুব পারেননি বেশিক্ষণ খেলতে। সুইপ শটে টাইমিং গড়বড় করে তিনি ধরা পড়েন শর্ট ফাইন লেগে, করেন ১৬ রান।

টাইগারদের প্রথম তিন উইকেট নেয়া প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে মাত্র ১১ রান খরচ করেছিলেন চামিরা। তাকে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরিয়ে অলআউট করার কাজটা সারেন লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরা। ইনিংসের ৩৯তম ওভারের চতুর্থ বলে মেহেদি হাসান মিরাজ ও শেষ বলে তাসকিন আহমেদকে আউট করে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফাইফার নেন চামিরা। সবমিলিয়ে মাত্র ১৬ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি।

এরপর লঙ্কানদের জয়ের অপেক্ষাই একটু বাড়ান মাহমুদউল্লাহ। ক্যারিয়ারের ৩২তম ফিফটি পূরণ করে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। অভিষিক্ত বিনুরা ফার্নান্দোর বলে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৩ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৪২.৩ ওভারে।

এই ম্যাচে সিরিজে প্রথমবারের মতো টস হেরেছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরা। প্রথম দুই ম্যাচে টস হেরে পরে ব্যাটিং করতে হয়েছিল সফরকারিদের। আজ টস ভাগ্য বদলে ব্যাটিংয়ের শুরুটাও দুর্দান্ত করে তারা।

তবে তাদেরকে বেশিদূর যেতে দেননি তাসকিন আহমেদ, ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে দিয়েছেন প্রথম ব্রেক থ্রু। একই ওভারে এনে দিয়েছেন দ্বিতীয় উইকেটও। প্রথম দুই ম্যাচে উইকেটের দেখা না পাওয়া তাসকিন, আজ নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তুলে নেন দুইটি উইকেট।

তাসকিনের এক ওভারে জোড়া উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার ইনিংসের হাল ধরেন কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। তাদের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২৫ ওভারের মধ্যেই দেড়শ রান করে ফেলে তারা। পেরেরা-মেন্ডিসের জুটিতে ৬৮ রান হওয়ার পর ইনিংসের ২৬তম ওভারে তৃতীয়বারের মতো আঘাত হানেন তাসকিন।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান গুনাথিলাকা। প্রথম ওভারে আরও একটি চারের মারে আসে ৯ রান। দ্বিতীয় ওভারেই সিরিজের সফলতম বোলার মেহেদি হাসান মিরাজকে আক্রমণে নিয়ে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু সফলতা মেলেনি।

একপ্রান্ত থেকে রান থামিয়ে রাখার কাজটি ভালোভাবেই করেন মিরাজ। কিন্তু অন্যপ্রান্তে দেদারসে রান বিলিয়েছেন শরিফুল, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও তাসকিন আহমেদরা। এ কারণেই মূলত প্রথম দশ ওভারের মধ্যে এক পাশে মিরাজকে রেখে, অন্যপাশে তিন বোলারকে ব্যবহার করতে হয়েছে তামিমকে।

ইনিংসের এগার নম্বর ওভারে আনা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২৪ ও ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিল লঙ্কানরা। এবার শেষ ম্যাচে গিয়ে তাদের উদ্বোধনী জুটি যোগ করে ফেলল ৮২ রান। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে গুনাথিলাকাকে বোল্ড করেন তাসকিন। আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হন ৩৩ বলে ৩৯ রান করা গুনাথিলাকা।

একই ওভারের শেষ বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন লঙ্কান প্রতিভাবান তরুণ নিসাঙ্কা। চার বল খেলেও রান করতে পারেননি তিনি। অধিনায়ক পেরেরাকে সঙ্গ দিতে চার নম্বরে নামেন সহ-অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। দুজনের জুটিতে তাসকিনের সেই ওভারের ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামাল দেয় লঙ্কানরা।

জুটি ভাঙতে পারত ইনিংসের ২৩তম ওভারে। সাকিব আল হাসানের নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন পেরেরা। শর্ট থার্ডম্যানে সেটি তালুবন্দি করতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান। ফলে ব্যক্তিগত ৬৮ রানে জীবন পেয়ে যান লঙ্কান অধিনায়ক।

এর আগে ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে ক্যারিয়ারের ১৫তম ফিফটি পূরণ করেন কুশল পেরেরা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে মাত্র ৪৪ বলে ৮ চারের মারে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তার ব্যাটে ভর করে ১৬ ওভারের মধ্যেই দলীয় শতক ছিয়ে ফেলে লঙ্কানরা।

শুরুতে খানিক খোলসবন্দী থাকলেও ক্রমেই হাত খুলে খেলতে থাকেন কুশল মেন্ডিসও। মোসাদ্দেকের করা ২৪তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান মেন্ডিস। তার দেখাদেখি দুই বল পর নিজের প্রথম ছক্কা মারেন কুশল পেরেরাও। সে ওভারেই পেরেরা-মেন্ডিস জুটির পঞ্চাশ হয়ে যায়।

সাকিবের করা ২৫তম ওভারেও আউট হতে পারতেন লঙ্কান অধিনায়ক। বড় শটের আশায় স্লগ করেছিলেন পেরেরা, বল উঠে যায় আকাশে। শর্ট মিড উইকেট থেকে মিড অনের দিকে দৌড়ে বলের নিচে গেলেও, সেটি তালুবন্দী করতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। ফলে ৭৯ রানে দ্বিতীয় জীবন পান পেরেরা।

তবে অধিনায়কের মতো ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না মেন্ডিসের। তাসকিনের করা ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লগ করতে গিয়ে শর্ট মিড অফে দাঁড়ানো তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান সহ-অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ২২ রান করেন তিনি। এরপর আবার জীবন পান কুশল পেরেরা।

ইনিংসের ৩২তম ওভারের পঞ্চম বলে ৯৯ রানে খেলছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে অনসাইডে খেলতে গিয়ে লিডিং এজ হয় পেরেরার, বল চলে যায় মিড অফে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। কিন্তু সেটি হাতে রাখতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফলে তৃতীয়বারের মতো বেঁচে যান পেরেরা। পরের বলেই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।

সেঞ্চুরির পর অবশ্য হাত খুলতে পারেননি পেরেরা। শেষ পর্যন্ত তাকে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি পেসার শরিফুল। ইনিংসের ৪০তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১২২ বলে ১২০ রান করেন লঙ্কান অধিনায়ক। এরপর প্রত্যাশামাফিক খেলতে পারেননি নিরোশান ডিকভেলা, রানআউট হন ৯ বলে ৭ রান করে।

বেশি কিছু করতে পারেননি প্রথম ম্যাচে ঝড় তোলা ভানিন্দু হাসারাঙ্গাও। তাসকিনের চতুর্থ শিকারে পরিণত হওয়ার আগে খেলেন ২১ বলে ১৮ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে বড় সংগ্রহে পৌঁছে দেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭০ বলে ৫৫ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। অন্য উইকেট গেছে শরিফুল ইসলামের ঝুলিতে। জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!