Home | ব্রেকিং নিউজ | সাড়ে তিন ঘন্টার ব্যবধান: পৃথিবীতে এলো সন্তান, চলে গেলেন পিতা

সাড়ে তিন ঘন্টার ব্যবধান: পৃথিবীতে এলো সন্তান, চলে গেলেন পিতা

মোহাম্মদ মারুফ: সন্তানের প্রথম কান্না যখন শুনতে পেল পৃথিবী, তখনই আরেক প্রান্তে ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছিল একজন পিতার জীবনপ্রদীপ। মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টর ব্যবধানে জীবন আর মৃত্যুর এই অদ্ভুত লেনদেন যেন নীরব আঘাত হানে পুরো পরিবারে।

যে মানুষটি সন্তান আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন দিনের পর দিন। যে পিতা মনে মনে প্রথমবার কোলে তোলার অনুভূতিটা কল্পনা করেছিলেন, তিনি আর ফিরে যেতে পারলেন না সেই ছোট্ট মুখটির কাছে। নবজাতকের চোখ এখনও পৃথিবী চিনতে শেখেনি, অথচ পৃথিবী তাকে প্রথম দিনেই চিনিয়ে দিল অনুপস্থিতির শোক, হারানোর নীরবতা।

সন্তানের জন্মগ্রহণের সেই পবিত্র মুহূর্তে পরিবার যে আনন্দ গুছিয়ে রেখেছিল, তা এক ঝটকায় ছড়িয়ে গেল দু:খের বুকে। মা যখন প্রথমবার সন্তানের আঙুল ধরলেন, তখন হয়তো তিনি ভাবেননি এই আঙুলটি কখনোই তার বাবার হাতের ছায়া পাবে না। একটি পরিবারের জন্য এই দিনটি চিরকাল দুই রকম স্মৃতি হয়ে থাকবে। একদিকে জীবনের প্রথম আলো, অন্যদিকে জীবনের শেষ অন্ধকার। নবজাতকটির জন্য এই পৃথিবী দিনটি তার জীবন পথে এক গভীর, নীরব শোকগাথা হয়ে থাকবে।

গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে এক বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতকের জন্ম হয়। আর একইদিন রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পিতা মামুনুর রশিদ (২৮)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের আওয়াল পাড়ার আবদুল গফুরের পুত্র ও কক্সবাজারের টেকনাফের ব্যবসায়ী।

জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর নিজ এলাকা থেকে বাইকযোগে টেকনাফে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন মামুন। সন্ধ্যায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শীলখালী এলাকায় পৌঁছলে একইমুখি দাঁড়িয়ে থাকা একটি খড়বোঝাই মিনিট্রাকের পেছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে সে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রেরণ করা হয়। সেখানে একটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে আইনী প্রক্রিয়া শেষে নিহত মামুনুর রশীদের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের মাঝে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় স্বজনরা বলেন, নবজাতক শিশুটিকে দেখার সুযোগটুকুও পেলেন না মামুন। বাক্যটি উচ্চারণ করতে গিয়েই অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। যেন শব্দগুলোও ব্যথায় ভারী হয়ে উঠছে। সময়ের এমন নিষ্ঠুরতা, যেখানে অপেক্ষার দরজা খুলে যাওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেল এক জীবনের পথচলা। কি অমোঘ এই বিদায়, কি অসম এই বিচ্ছেদ। নবজাতকের পাশে দাঁড়িয়ে এখন শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এক পরিবার। জন্মের প্রথম দিনেই বাবা হারানো শিশুটিকে দেখে সকলে একটাই কথা বলছেন, আল্লাহ যেন তার পথটা সহজ করে দেন।

নিহতের চাচা মাওলানা আবদুস ছবুর জানান, শিশুটি এসেছে ঠিকই। কিন্তু তার প্রথম দিনই বাবা চলে গেলেন। এমন দৃশ্য কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নবজাতকের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা।

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে আওয়াল পাড়া ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বাইক দূর্ঘটনায় নিহত মামুনুর রশীদকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!