ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | সাংবাদিক ও সাঙ্ঘাতিক

সাংবাদিক ও সাঙ্ঘাতিক

61593_sajol

আবু সাঈদ সজল : আজকাল অনেক সাংবাদিকদের সাঙ্ঘাতিক বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়। শব্দ দুটি পরস্পর বিপরীতধর্মী, ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয় একটি ভালো অর্থে অন্যটি নেগেটিভ বা মন্দ অর্থে। সংবাদ প্রস্তুত, পরিমার্জন, পরিবেশন, চিত্রগ্রহণ, প্রচার ইত্যাদি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। এ কাজে জড়িত কর্মীদের বলা হয় সাংবাদিক। সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় সত্যনিষ্ঠ ও জনকল্যাণকর। সমাজ ও দেশের কল্যাণে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সঠিক তথ্য উপস্থাপন সাংবাদিকের দায়িত্ব। সঠিক, সত্য ও কল্যাণ এ তিনটি উপাদান মিলে সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা সম্পর্কে মন্দ বলার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

পক্ষান্তরে সাঙ্ঘাতিক শব্দের ব্যবহার নেগেটিভ অর্থে ক্ষতিকর, ভয়াবহ, অস্বাভাবিক, মৃত্যু সম্পর্কিত ইত্যাদি। দুটি পরস্পর বিপরীত অর্থের শব্দকে সমার্থক হিসেবে ব্যবহারের যে প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। কেন এই বিপরীত বিশেষণ সাংবাদিকের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে? এটি সবাইকে ভাবায়।

সত্য প্রকাশ ও প্রচার নির্ভীকচিত্ত সাংবাদিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। ভুল সংশোধন করে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সঠিক সংবাদ পরিবেশন না হলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। একজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভুল শেখালে তা পরবর্তীতে সংশোধন করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সকলের ভুল শুধরে দেয়া যায়; কারণ শিক্ষার্থী সংখ্যা সীমিত। এবং তারা শিক্ষকদের সংস্পর্শে থাকেন। ফলে সংশোধনটি সবার কাছে পৌঁছায়। কিন্তু ভুল সংবাদ পরিবেশিত হলে সংশোধনী দিলেও তা সবার কাছে পৌঁছাবে- এটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। পরিবেশিত সংবাদ যাতে সঠিক হয় সেজন্য সাংবাদিককে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সাংবাদিকের দায়িত্বশীলতা অন্যান্য পেশার মানুষের থেকে অনেক বেশি।

প্রচারিত সংবাদ জনসাধারণ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর কিনা সেটিই সাংবাদিকের ভাবনার বিষয়। অন্য কারও, এমনকি সরকারের জন্য ক্ষতিকর কিনা সাংবাদিকের জন্য তা বিবেচ্য নয়। এ ধরনের সংবাদে সরকার লাভবান হয়, সঠিক কাজটি করে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেট সংবাদ প্রচারের ফলে জনগণের কাছে খল চরিত্রে প্রকাশিত হয় তারা সাংবাদিকের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত। সাংবাদিকের ক্ষতিসাধনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহুদেশে সমাজবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠীর হতে সাংবাদিকরা নিগৃহীত এমনকি নিহত হয়েছেন এরূপ অগণিত নজির রয়েছে। সাংবাদিকরা সাঙ্ঘাতিক, তবে জনগণ ও রাষ্ট্রের জন্য নয়।, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী দুষ্কৃতকারীদের জন্য। তাই দুষ্টচক্ররা যদি সাংবাদিককে সাঙ্ঘাতিক বলে তবে তা প্রশংসাসূচক বিশেষণ হিসেবে গ্রহণ করাই যথার্থ। তবে একটি সংবাদ কোন নির্দোষ ও নিরপরাধ ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোনো সাংবাদিকের পক্ষে তা করা কখনই  উচিৎ নয়।

এর প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের লেখার একটি গল্প মনে পড়ে গেল। গল্পটি হলো এই; যাত্রাপালায় এক অভিনেতা খল চরিত্রে এত নিখুঁত অভিনয় করছিলেন যে, একজন দর্শক ধৈর্য হারিয়ে তার দিকে জুতা ছুড়ে মারে। আশ্চর্যের বিষয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও অভিনেতাটি শান্তভাবে এসে জুতাটি তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার অভিনয় জীবন আজ সার্থক হলো, আমার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার আজ আমি পেলাম। সাংবাদিককে সেই অভিনেতা আর দর্শককে সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধীদের আসনে বসিয়ে বিবেচনা করলে সাংবাদিকদের সাফল্য কখন আসবে তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

বস্তুনিষ্ঠতা সাংবাদিকদের আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতিরঞ্জিত নয়, সঠিক সংবাদটি  করা জরুরি। বক্তব্যকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হবে এই ভয়ে অনেকেই সাংবাদিককে এড়িয়ে চলেন। সাংবাদিকরা একটু সচেষ্ট হলেই অনেকের এই ভীতি কমে যাবে, সাংবাদিকতার কাজটি আরও সহজ হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক ও সাঙ্ঘাতিক শিরোনামে লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো ভিন্ন দুটি শব্দ সমার্থে ব্যবহার হলেও এটি একটি বিশেষ ক্ষেত্রে সঠিক। সাংবাদিকরা জনসাধারণের শত্রু- দুষ্কৃতকারীদের কাছে সাঙ্ঘাতিক। কিন্তু জনসাধারণ ও দেশের কাছে সত্যের মশালবাহী। এদেশ সেসব সাংবাদিকের দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে যারা জনসাধারণ ও রাষ্ট্রের শত্রুদের জন্য সাঙ্ঘাতিক।

লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!