Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | শিশু বান্ধব ক্যাম্পে আনন্দে রোহিঙ্গা শিশুরা

শিশু বান্ধব ক্যাম্পে আনন্দে রোহিঙ্গা শিশুরা

K H Manik Pic 06-11-2017 (1)

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : শিশু বান্ধব ক্যাম্পে এই শিশুরাই মনের আনন্দে ফুল, পাখি, নদী, গাছপালা আর পাহাড়ের ছবি আকঁছে। সব হারানো শিশুদের কেউ কচি হাতের রংতুলিতে মনের মাধুরি মিশিয়ে আকঁছে প্রিয়জনের প্রতিচ্ছবি। কখনো সাজছে বাঘ, বানর আর ভাল্লুকের বেশে। আবার মনের আনন্দে খেলছে সমবয়সীদের সাথে। এই বয়সে কত বিভৎসতা দেখেছে রোহিঙ্গা শিশুরা। দুঃসহ এসব স্মৃতি বার বার উঁকি দেয় তাদের মনে। মানুষ এমন হিংস্রও হয়! উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের মন থেকে সেই দুঃসহ স্মৃতি মুছতে আছে ভিন্ন উদ্যোগ।

সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত কচি বয়সে নিষ্ঠুর নির্মমতার স্বাক্ষী রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্যই গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক শিশু বান্ধব কেন্দ্র। আর সেসব কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিনই হাজারো শিশু পদচারণায় মুখরিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়ে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গার ৬০ শতাংশই শিশু। কোনো না কোনো ভাবে যাদের সকলেই মানসিকভাবে বির্পযন্ত। এসব শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের লক্ষ্যেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে তোলা হয়েছে একশো শিশু বান্ধব কেন্দ্র। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিশুবান্ধব কেন্দ্র খোলা থাকে। সব বয়সী শিশুদের জন্য এটি উন্মুক্ত। ইচ্ছে মতো সময়েই তারা ওখানে যেতে পারে। এ নিয়ে রোহিঙ্গা শিশু মোহাম্মদ আলম বলে, আমি প্রতিদিনই এখানে আসি। খেলতে পারি বলেই আসি। এখানে আসতে আমার অনেক ভালো লাগে। অন্য আরেক শিশু আলী জুহর বলেন, এখানে এসে আমরা ছক্কা খেলি, হরিণ খেলি, ছবি আঁকি। গান গাই। আর কত কিছু করি। উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার গুলশান পাহাড়ের শিশু বান্ধব কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০-৪০ ফুটের একটি কক্ষে জনা অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে। এদের অনেকেই ছবি আকঁছে। কেউ কেউ নানা ধরণের খেলা খেলছে বন্ধুদের সাথে। আবার অনেকেই দু:সহ স্মৃতি ভুলে প্রাণ খুলে গাইছে গান। এ যেন রোহিঙ্গা শিশুদের স্বর্গরাজ্য। রোহিঙ্গা শিশু তসলিমা বলে, প্রায়ই প্রতিদিনই আমি এখানে আসি। এখানে দুই তিনঘন্টা সময় ব্যয় করি। যতক্ষণ আমি এখানে থাকি ততক্ষণ আমি ভালো থাকি। মনে হয় এ যেন অন্যরকম এক জগৎ। ওই কেন্দ্রের শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা রহিমা খাতুন বলেন, এখানে আসা শিশুদের কাছ থেকে আমরা কখনো রাখাইন সম্পর্কে জানতে চাই না। তাদের অতীত নিয়ে কোন প্রশ্ন করি না। আমরা সবসময় চেষ্টা করি শিশুদের হাসিখুশি রাখতে। আমাদের ভাল লাগে তাদের সাথে খেলতে, দুষ্টমি করতে।

ইউনিসেফ এর কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ফারিয়া সেলিম বলেন, মানসিক বির্পযস্ত শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে অনেকগুলো উপায় রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমধাপ হচ্ছে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা। এখানে আসলে শিশুরা ছবি আকতে পারে, খেলতে পারে, গান গাইতে পারে। এর মধ্যে দিয়েই তাদের মন থেকে ফেলে আসা দুঃসহ স্মৃতিগুলো মুছে যাবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সদ্য স্বচক্ষে দু:সহ স্মৃতি দেখে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোয় বাংলাদেশ সরকারের এ একটি বড় অর্জন। রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা সহ এতিম শিশুদের সুরক্ষায় সরকার বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তারই একটি এই শিশু বান্ধব কেন্দ্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!