Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মহাকাশে বাংলাদেশ

মহাকাশে বাংলাদেশ

1525854800

নিউজ ডেক্স : মহাকাশ জয়ের স্বপ্ন সফল হল বাংলাদেশের। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বিরল এই সম্মান অর্জন করল বাংলাদেশ। হাজারও জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, সকল আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করে ঠিকই সৃষ্টি হল নতুন ইতিহাস। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে এদেশের মানুষের স্বপ্নের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ডানা মেলে মহাকাশে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাস্থ উৎক্ষেপণ স্টেশন থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের নিজস্ব কক্ষপথে ছুটে যায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট–১। বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হয় সাফল্যের আরও একটি পালক। মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্সের সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন–৯ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ে কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যবহার হয় একটি ফ্যালকন–৯ ব্লক ফাইভ রকেট। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছিল।

গতকাল চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় এ ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্বাক্ষী হয়। সফল উৎক্ষেপণের পর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি ধন্যবাদ জানান সকলকে।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “সবকিছু ঠিক থাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে কক্ষেপথের দিকে যাত্রা শুরু করেছে।” বাংলাদেশের এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হল কেনেডি স্পেস সেন্টারের সেই ‘৩৯–এ’ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাপোলো–১১’ মহাকাশযানটি মানুষকে পৌঁছে দিয়েছিল চাঁদে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে। মানুষের মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে এই উৎক্ষেপণ চিহ্নিত হয়ে থাকবে পুনঃব্যবহারযোগ্য ফ্যালকন–৯ রকেটের নতুন সংস্করণের প্রথম সফল উৎক্ষেপণ হিসেবেও। উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় ফ্যালকন–৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। ২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে রকেটের স্টেজ–১ খুলে যায়; স্টেজ–২ কাজ শুরু করে ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের মাথায়। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ–১ উৎক্ষেপণের ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের মাথায় সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং অবতরণ করে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে।

সংশিষ্টরা জানিয়েছেন, মহাকাশে পৌঁছার পর বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইট পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে লাগবে প্রায় এক মাস। এরপর কারিগরি বিভিন্ন বিষয় শেষ করে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও এক মাস সময় লাগবে বলে ধারণা বিটিআরসির। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় নির্মিত হয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশন। স্যাটেলাইট মহাকাশে উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। প্রকল্প পরিচালক মো. মেজবাহুজ্জামান বলেছেন, এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল ট) স্থাপন করা হবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর হতে আরও এক মাস সময় লেগে যাবে। বাংলাদেশ এতদিন বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল; বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুণতে হয় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। নিজস্ব যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ ভাড়ার নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠে অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে বলে সরকার আশা করছে।

এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ব্র্যাক অন্বেষা নামে একটি ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। তা ছিল মাত্র এক কেজি ওজনের। বিপরীতে বঙ্গবন্ধু–১ এর উৎক্ষেপণ ভর তিন হাজার ৫০০ কেজি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে ফ্রান্সের তালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাচ্চবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!