Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভাসানচরের পথে আরো ১১শ রোহিঙ্গা

ভাসানচরের পথে আরো ১১শ রোহিঙ্গা

নিউজ ডেক্স : উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প থেকে আরো ১ হাজার ১৩৪ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের পথে রওয়ানা দিয়েছে। ২৩টি বাসে করে যাত্রা করেছে তারা। আজ সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয় এসব রোহিঙ্গা।

এর আগে তাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে নিয়ে এসে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠের অস্থায়ী পয়েন্টে জড়ো করা হয়। সেখানে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সন্ধ্যার পরে আরো ২১ বাস যোগে ৬৩২ জন রোহিঙ্গা নিয়ে যাত্রা করার কথা রয়েছে।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দুপুরে কক্সবাজারের শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দ্বীপ ভাসানচরে পৌঁছেছিল।

আগের দিন ভাসানচরে যেতে আগ্রহী এসব রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে গত ৩ ডিসেম্বর গাড়িতে এনে চট্টগ্রামের শাহিন স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। এবারও সেভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের।

এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ২৩টি বাস দ্বিতীয় দফা ভাসানচরে যাত্রা করেছে। সেখানে কতজন নারী-পুরুষ রয়েছে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না কিন্তু বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৩টি বাসে ১১শয়ের বেশি মানুষ রয়েছে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার-এর প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, “তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় একশ’ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়া রওনা দিয়েছে। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে পৌঁছেছিল।”

আগামীকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে দ্বিতীয় দফা রোহিঙ্গার দলটি ভাসানচরে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) খোরশেদ আলম খান।

ডিসি খোরশেদ আলম খান বলেন, “স্বেচ্ছায় রাজি ৭শ’ রোহিঙ্গা ভাসানচরে হস্তান্তরের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”

সকালে সরেজমিনে টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শরাণার্থী শিবিরে দেখা গেছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে ক্যাম্পে বাস আসলে সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তোলা হয়। এসময় তাদের স্বজনরা তাদের দেখতে ভিড় করে। এরা আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজনরাও প্রথম দফায় ভাসানচরে পৌঁছেছিল। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই ক্যাম্প থেকে ১০০ জন মানুষ ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করে।

পরিবার দিয়ে ভাসাচরের উদ্দেশে যাত্রাকালে টেকনাফ শালাপুরের মো. জাহেদ হোসাইন বলেন, “কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছিল। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা করছি।”

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম বলেন, “আমার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে উদ্দেশে উখিয়া রওনা দিয়েছে। আজ সেখান থেকে চট্রগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। মঙ্গলবার তাদের সকালে ভাসানচর পৌঁছার কথা রয়েছে।”

ভাসানচর থেকে মুঠোফোনে মো. ইসমাইল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা কিশোর বলে, “টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পরিবারের সঙ্গে ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে এসেছি। এখানে আমরা সবাই খুব ভালো আছি। এখানকার পরিবেশ ক্যাম্পের চেয়ে অনেক ভালো। এই ভাসানচর দ্বীপে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নৌবাহিনীর সদস্যরা খুব ভালো ব্যবহার করেন। তারা সবসময় সহায়তা করেন আমাদের। ক্যাম্প থেকে যাওয়া আমার এক বোন এখানে চলে আসার জন্য বারবার ফোন করছে।”

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বর্তমানে সেখানে ৩০৬ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, যারা সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে গত মে মাসে ফিরে এসেছিলেন। দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!