তারিকুল ইসলাম তারিক : এই নিয়ে তৃতীয় বারের মত বৌ আমাকে ফেবুতে ব্লক দিলো। ব্লক খেয়ে আমার তো নাজেহাল অবস্থা। সারাদিনে বৌয়ের সাথে আমার দেখা হয় রাত ১০ টায়। কাকডাকা ভোরে আমি বেরিয়ে যাই, আর রাত ১০ টায় ফিরি। তাই আমাদের জীবনটা অনেকাংশেই ফেবু নির্ভর হয়ে গেছে। আমাদের রাগারাগি কিংবা ভালবাসা সব কিছুতেই ফেবু নির্ভরতা চলে এসেছে।
একদিন অফিসে বসে ফেবুতে লগইন করে দেখি, বৌ একটা নীল শাড়ি পরে ছবি আপলোড দিয়েছে। আর আমি মনের ভুলে অন্য সবার মত সে ছবিতে
“Nice Pic” লিখে কমেন্ট দিলাম।
আর যায় কই?
অমনি বৌ আমাকে ব্লক দিল। আর তখনই মনে পড়লো যে, ‘Nice Pic’ টাইপের কমেন্ট আমার বৌয়ের ভীষণ অপছন্দ। প্রথমবার ব্লক খেয়ে আমার অবস্থা একেবারে ডিভোর্সি পুরুষের মত হয়েছিল। আর অফিস থেকে বেরিয়ে ৫৫০০ টাকা খরচ করে একখানা জামদানি কিনে ঘরে ফিরলাম। আর সেই বারের মত ব্লকের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেলাম।
আমার দ্বিতীয় বারের ব্লক খাওয়ার গল্পটা ছিল আরও ইন্টারেস্টিং। অফিস টাইমে বৌ ইনবক্সে লিখলো, “এই শোন, আজ না আমার ভীষণ খাসির মাংস খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি ফেরার সময় আমার জন্য খাসির মাংস নিয়ে এসো। রাতে রান্না করবো”
আমি রিপ্লাই দিলাম, “রাতের বেলা খাসি কোথায় পাই?”
ব্যাস হয়ে গেল কাজ। আবারও তার ব্লক লিস্টে চলে গেলাম। আবারও শুরু হলো হা হুতোশ। অফিসের পিয়ন জয়নাল কে সব খুলে বললাম। সব শুনে জয়নাল পান চিবুতে চিবুতে বললো,”আরে স্যার কোনো ব্যাপারই না। আপনি ৫ হাজার টাকা দেন আমি আস্ত খাসি নিয়া আসছি।”
আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে জয়নাল খাসি নিয়ে হাজির হলো। আমিও রাখালের মত সেই খাসির রশি ধরে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরলাম। আর সব শেষে আস্ত খাসির বিনিময়ে আমার ব্লকমুক্তি ঘটলো।
আজকের ব্লক খাওয়ার কারণটা অবশ্য তেমন মজার নয়। আমার জন্য লজ্জার। এক রামছাগল কোত্থেকে দুই মাথাওয়ালা একটা গরুর ছবিতে আমাকে ট্যাগ দিয়েছিল। ক্যাপশনে লিখা ছিল “সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়কর সৃষ্টি। কেউ “আমিন” না বলে যাবেন না।”
আমিও বোকার মত সেখানে প্রায় ৩/৪ বার আমিন, আমিন লিখে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৌ ইনবক্সে একটা স্ক্রিনশট পাঠালো।
সেখানে তার এক বান্ধবী লিখছে, “কিরে দুলাভাই তো রিয়েল মাথামোটা। একটা ফটোশপ করা ছবিতে গিয়ে আমীন আমীন করছে। হি হি হি৷ তুই কি উনাকে আয়োডিন যুক্ত লবন খাওয়াস নি?”
এরপরই বৌ আমাকে লিখছে “তোমার মত মোটা বুদ্ধির একটা মানুষকে বিয়ে করে আমার মান সম্মান আর থাকলো না। থাকো ব্লকলিস্টে”
এই বলে খট করে আমাকে ব্লক করে দিলো।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ভীষণ ইচ্ছে করছে আজ একটা দুই মাথাওয়ালা গরু কিনে সেটার দড়ি হাতে নিয়ে রাখালের মত বাড়ি ফিরি। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আর ফেবুই চালাবো না। ভালবাসাও আর ভার্চুয়ালে রাখবো না। ভালবাসবো বাস্তবতায়। যে ভালবাসায় কোনো ব্লক লিস্ট থাকবে না। যে ভালবাসায় বৌ ও আর আমাকে ব্লক দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না।
কাল্পনিক
নোট : লেখাটি হাস্যকর হলেও এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, আমরা ভার্চুয়াল জীবন টাকে বেশ সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলছি। ভার্চুয়াল জগৎ এ কাউকে ভালবাসার ক্ষেত্রেও সিরিয়াস হবেন না, আর ঘৃণা করার ক্ষেত্রেও না। নিজের ভালোলাগা, মন্দ লাগা, পছন্দ, অপছন্দের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণে কখনো ভার্চুয়াল লাইফ নির্ভর হবেন না। ওর বাইরেও একটা জগৎ আছে। সে জগৎ এ ভালবাসা গুলো হচ্ছে সচ্ছ আর নাটকীয়তা মুক্ত। যে ভালবাসা সবসময় আপনাকে ঘিরে থাকবে। আর আপনার বিপদে সাহায্যের হাত টাও সেই বাস্তবের জগতের কেউই বাড়িয়ে দেবে। তাই ভার্চুয়ালের দুঃখ কষ্ট আর যন্ত্রণা গুলো ভার্চুয়াল হিসেবেই রাখুন। আর বাঁচলে বাস্তবের ভালবাসা গুলো আকঁড়েই বাঁচুন।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, ঝালকাঠি এইচ.সি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।