Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | পাল্টে যাচ্ছে মাতারবাড়ি

পাল্টে যাচ্ছে মাতারবাড়ি

নিউজ ডেক্স : মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, কন্টেনার টার্মিনাল, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে তোলা মাতারবাড়ি বন্দর আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের চাহিদা পূরণ করতে শুরু করবে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মেগাওয়াট করে দুটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে মাতারবাড়িতে। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ জাপানের জাইকার সহায়তায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানির জন্য গড়ে তোলা বন্দরই গভীর সমুদ্র বন্দর হয়ে উঠছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সহযোগিতায় কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

মাতারবাড়িকে একটি হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে ইতোমধ্যে আড়াইশ মিটার প্রস্থ এবং ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। এই চ্যানেলকে পাশে আরো একশ মিটার বাড়িয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর করা হবে। এখানে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো হবে। ইতোমধ্যে এই বন্দরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিয়ে একাধিক জাহাজ ভিড়েছে। আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে এই বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে শুধু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা গভীর সমুদ্র বন্দরই নয়, এখানে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেওয়ার মতো নানা ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে। এখানে এলএনজি আমদানি এবং সরবরাহের আরো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। গভীর সমুদ্র বন্দরে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ যাতে অনায়াসে ভিড়তে পারে সেই ব্যবস্থা থাকবে। বন্দরের পাশাপাশি বড় ধরনের কন্টেনার টার্মিনালও গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই বন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়িসহ সন্নিহিত অঞ্চলে শিল্পায়নের বড় বলয় তৈরি হবে। এসব কর্মকাণ্ড যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য শুল্কায়ন, ওয়্যার হাউজ, পানি শোধনাগার, বিদ্যুৎ সরবরাহ, গ্যাস সরবরাহ, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১০ বিলিয়ন বা ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে ৬৮টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মহেশখালী দেশের অর্থনৈতিক হাব হয়ে উঠবে।


মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়নের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু হয়েছে। চ্যানেল প্রশস্তকরণ এবং ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে এই বন্দরে পুরোদমে বাণিজ্যিক জাহাজ হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আসছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে ২০২৪ সালে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৬০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট এবং জুলাই মাসে ৬০০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদন শুরু করবে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় ৫৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার আগেই গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়ে যাবে। এর আগে সড়ক উন্নয়নসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজও সম্পন্ন হবে। ২০২৪ সালের আগেই মাতারবাড়ি দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। -আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!