ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | নগরের ৩ স্কুলের চল্লিশ সদস্যের ‘ডট গ্যাং’

নগরের ৩ স্কুলের চল্লিশ সদস্যের ‘ডট গ্যাং’

নিউজ ডেক্স : ‘ডট গ্যাং’ একটি কিশোর গ্যাং। নগরীর স্বনামধন্য তিনটি স্কুলের প্রায় চল্লিশ শিক্ষার্থী এ গ্যাংয়ের সদস্য। ফেসবুকে প্রকাশ্যে অপরাধকর্মের বিবরণ শেয়ার করে নিজেদের বীরত্ব প্রকাশ করে তাদের ‘গ্যাং লিডার’ হোসাইনুল আমিন মিম। আগে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।

নগরীর চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। এরপর লেখাপড়া ছেড়ে চলে যায় চকরিয়ার বদরখালীতে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। কিশোর অপরাধী চক্র বা কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগে মিমসহ নগরীর তিনটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল দুপুরে নগরীর চকবাজার বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের চকবাজার থানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে গ্যাং লিডার হোসাইনুল আমিন মিমের বাবা ডাক্তার, মা চাকরিজীবী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। তার ঘনিষ্ট সহযোগী মাশহাদ হোসেন। মাশহাদ ও মিম একই স্কুলে পড়ালেখা করেছে। সেই সুবাধে তাদের পরিচয়। মাশহাদের বাবা প্রবাসী ও মা গৃহিণী। তিন ভাই–বোনের মধ্যে মাশহাদ ছোট। সামিউল আমিনের বাবা পেশায় মুদি দোকানদার ও মা গৃহিণী। পরিবারের ৩ ভাই–বোনের মধ্যে সামিউল সবার ছোট। তারিক মিয়ার বাবা পেশায় একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার ও মা গৃহিণী। পরিবারের ৫ ভাই–বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। শানিপ শাহিদের বাবা ইপিজেডে একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার ও মা গৃহিণী। র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে জানার পর তার মা–বাবাই বলেছেন ছেলের অন্যায় সম্পর্কে। আহনাফ শাহারিয়ারের বাবা সিএনজি চালক, মা গৃহিণী। পরিবারের ৩ ভাই–বোনের মধ্যে সে ছিল ছোট। শরিফুল ইসলামের বাবা অয়েল কোম্পানিতে চাকরিরত, মা গৃহিণী। পরিবারের ৪ ভাই–বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।

র‌্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে, কিশোর গ্যাংগুলোর বড়ভাই হিসেবে তারা ইতোমধ্যে চকবাজার এলাকার মো. আকিব প্রকাশ ছুরি আকিব, ফাহিম মুন সুমন এবং জামালখান এলাকার তানজীরুল আলম ও জাহেদুল আলমের নাম পেয়েছে, যারা কয়েকটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে। ডট গ্যাংও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

র‌্যাব জানায়, কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়ে চকবাজার–জামালখান এলাকায় বিভিন্ন আড্ডায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে একসময় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে গ্রুপের সদস্যরা। এরপর নিজেরাই ডট গ্যাং বা ডট সুপ্রিমেসি নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। ছাত্রলীগ নেতা নামধারী কয়েকজন ‘বড় ভাই’ এই কিশোর অপরাধী চক্রের মূল মদদদাতা বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব।

র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানিয়েছেন, সম্প্রতি র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নগরীতে ৫০টিরও বেশি কিশোর অপরাধী চক্র শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ডট গ্যাংকে ফেসবুকে নজরদারির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। এই চক্রটি মূলত দেড় বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে তারা ‘ছুরি আকিবের’ গ্রুপ নামে একটি চক্রের সঙ্গে ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে ডট গ্যাং সৃষ্টি হয়, যা ডট সুপ্রিমেসি নামেও ফেসবুকে পরিচিত। ডট গ্যাংয়ে ৪০ জনের বেশি সদস্য থাকলেও সক্রিয় ৮–৯ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে র‌্যাব, যাদের মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রায়ই দেখা যায়। তাদের হাতে ছুরি, চাকু ও হকিস্টিক দেখা গেছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। তারা মূলত চঁাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং, আধিপত্য বিস্তার এবং সিনিয়র–জুনিয়র দ্বন্দ্বে মারামারি করে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, গ্যাং লিডার ফেসবুকে ডট গ্যাং গ্রুপের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। অস্ত্র হাতে দৌড়াদৌড়ি, মারামারির ছবি–ভিডিও শেয়ার করে। কিশোর বয়সের হিরোইজম বা বীরত্ব প্রদর্শনের প্রবণতা থেকে তারা ফেসবুকে বিষয়গুলো শেয়ার করে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে, যার নিয়ন্ত্রণও লিডারের হাতে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্ল্লিষ্টতা নেই। তবে মদদদাতা হিসেবে কয়েকজন তথাকথিত বড় ভাইয়ের নাম পেয়েছি। এরাই তাদের আর্থিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জমি দখল, মারামারি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। এসব মদদদাতার কারও কারও রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আবার মদদদাতাদের যারা কথিত বড় ভাই তাদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজনীতিক আছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সদর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, ছয় ছাত্রের সবাই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাসিরাবাদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ জন করে ছাত্র আছে, যারা মিমের নেতৃত্বে গত দেড় বছরে চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত এলাকায় ১২–১৪টি মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছে।

র‌্যাব অধিনায়ক মাহবুব আলম বলেন, ডট গ্যাং ছাড়াও চকবাজারে আরও অন্তত পাঁচটি গ্রুপ আছে। আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের মদদদাতা হিসেবে যাদের নাম আসছে, তাদের কয়েকজনের ওপর নজরদারি শুরু করেছি। সম্পৃক্ততা পেলে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!