ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতার বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত আজ

জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতার বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত আজ

ec-jamat7

নিউজ ডেক্স : বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আজ রবিবার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হতে যাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের ৪১তম সভার আলোচ্যসূচিতে অন্যতম বিষয় হিসেবে এটি রাখা হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রবি-সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ১৮ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে ২৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষণা ও বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) করা একটি আবেদন তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ইসির প্রতি নির্দেশটি দেওয়া হয়। আবেদনটি করেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, সমাজকল্যাণসচিব শাহ মোহাম্মদ আলী হুসাইন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সংগঠনটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. এমদাদুল হক।

এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একই সঙ্গে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল এবং ২৫ প্রার্থীকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল শনিবার এ আদেশ দেন। নির্বাচন কমিশন আজ ওই আবেদনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারে।

হাইকোর্টের আদেশের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জামায়াত নেতাদের নির্বাচন করতে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের পরিপন্থী। তিনি প্রশ্ন করেন, যে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে তার নেতারা প্রার্থী হন কেমন করে?

জানা যায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে দেওয়া ২২টি আসন ও স্বতন্ত্রভাবে তিন আসনে জামায়াত নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ২১টি আসনে বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ এবং চার আসনে ‘আপেল’ প্রতীকে তাঁরা নির্বাচন করছেন।

তাঁরা হচ্ছেন ঢাকা-১৫ আসনে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ, কুমিল্লা-১১ ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ মুক্তিযোদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, যশোর-২ মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন, বাগেরহাট-৩ আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ শহীদুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনওয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ ইকবাল হুসাইন, রংপুর-৫ গোলাম রব্বানী ও পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী। এর মধ্যে কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ ধানের শীষ প্রতীক পাননি। তিনি আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর স্বতন্ত্র হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নুরুল ইসলাম বুলবুল, পাবনা-১ আসনে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান (নাজিব মোমেন) এবং চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের এসব প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানায়। বৈঠকের পর প্রতিনিধিদলের প্রধান দলটির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে সেই প্রার্থীদের নাম, পদসহ উল্লেখ করা আছে। কাজেই তাঁরা অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তাই তাঁরা প্রার্থী হিসেবে থাকতে পারেন না। আদালতও নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তাই আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জামায়াতের যেসব সদস্য ধানের শীষে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছি।’

এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছেন, আইনগত দুর্বলতার কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিবন্ধিত বা নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, এমন দলের নেতাদের জোটভুক্ত হয়ে নিবিন্ধত দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জোটের যে দলের প্রতীকে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সে দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন তাঁরা।

গত ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য এবং যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরি কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দাবি জানায় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। ওই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘জামায়াতের সদস্য বা যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরিদের স্বতন্ত্র বা জোটগতভাবে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আইন নেই।’

এরপর গত ৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তারা অন্য দলের প্রতীকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলে তাদেরকে আটকানোর মতো আইন বাংলাদেশে নাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!