Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে

Chandanaish-pic-108

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। রেললাইন নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম ডুয়েলগেইজ রেললাইন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। খবর দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার।

কক্সবাজার মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। চন্দনাইশে ৫ একর, সাতকানিয়ায় ১৩০ একর, লোহাগাড়ায় ১৩০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রথম পর্বে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কি.মি. রেললাইন স্থাপন হচ্ছে। এ কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় পর্বে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কি.মি. লাইনের কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। কার্যাদেশ পেয়ে চীনের বৃহত্তম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) ও দেশিয় তমা কন্সট্রাকশন কোম্পানি কাজ শুরু করেছে। শর্তানুযায়ী কাজ শুরু করার ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। এটি শেষ হতে সময় লাগবে ৪ বছর। পরে এ লাইনটি মিয়ানমার সীমান্ত তথা ঘুমধুম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে সড়কের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হবে। পরে রেললাইন মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা যায়, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে তার পণ্য পরিবহন, কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটক পরিবহন, আন্তর্জাতিক পণ্য ও যাত্রী পরিবহনসহ বাংলাদেশের ভেতর ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রোডের মিচিং লিঙ্ক উদ্ধারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। বিশ্বের সেরা পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে এর আওতায় এনে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি কক্সবাজারে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের ভোগান্তি লাগবে ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে আ. লীগ সরকার এ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রথম দফায় রেলওয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল। ওই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের একটি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ শুরু করলে, সে দেশের সরকার দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প উদ্বোধন করতে এসে ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছিল দেড় হাজার কোটি টাকা। ২০০০ সালে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১,৮৫৩ কোটি টাকা ধরা হলেও ২০১৩ সালে এসে প্রকল্পের ব্যয় তিনগুণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েলগেজ (মিটারগেজ বা ব্রডগেজ) হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় তিনগুণ বেড়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এ প্রকল্পের নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী স্কুল, মসজিদ, কবরস্থানের অবস্থান ঠিক রেখে রেলপথের কিছুটা দিক পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় আগের চেয়ে বেড়ে ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির উন্নয়ন, প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনও করা হয়েছে বলে জানা যায়। চায়নার একটি কোম্পানির সাথে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সম্প্রতি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

রেলপথটির কাজ সম্পন্ন হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ সহজ হবে। সেইসাথে এ এলাকার অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর রেল যোগাযোগের অন্যতম পথ দোহাজারী রেললাইন সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার এ রেললাইন সংস্কারের জন্য ১১২ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৫ কি.মি. রেললাইন আধুনিকায়ন করা হয়েছে। দোহাজারী পর্যন্ত ৫৭টি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। সব রেলস্টেশনগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!