Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় সাহসী তিন যোদ্ধা

চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় সাহসী তিন যোদ্ধা

নিউজ ডেক্স : করোনা ভাইরাস চিনিয়েছে মানুষ, চিনিয়েছে মানবতা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই মহামারীতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাও যেন ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলো রোগীকে চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ উঠছে প্রতিদিনই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবখানেই মানুষের আর্তনাদের চিত্র।

এতোসব নেতিবাচক ঘটনার মধ্যেও রয়েছে ইতিবাচক কিছু গল্প। হাসপাতালগুলো চিকিৎসা না দিলেও কিছু চিকিৎসক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার নজির স্থাপন করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন রাত-দিন।

চট্টগ্রামে এমনই তিন চিকিৎসক হলেন- ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ডা. হোসেন আহম্মদ এবং ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা।

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া : চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। গত ২১ এপ্রিল হাসপাতাল চালুর পর থেকে দুই মাস ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

চিকিৎসক নার্সসহ এই হাসপাতালে নিয়োজিত প্রতিটি কর্মী স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়োজিত। শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, রোগীদের মন ভালো রাখতে যে সকল উপকরণ প্রয়োজন তার সব কিছুরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ হাসপাতালে।

বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, শুধু হাসপাতাল বানানো কিংবা ওষুধ দেওয়া বড় কথা নয়, রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা সেবার পাশাপশি নার্স এবং স্বেচ্ছাসেবক সবকিছুই নিশ্চিত করতে হবে।

‘চিকিৎসা একটি সামগ্রীক টিমওয়ার্ক। শুধু ওষুধ কিংবা চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালানো যায় না। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন ঘটাতে হলে অবশ্যই হাসপাতালগুলোকে রোগী ভর্তি নিতে হবে এবং সুচিকিৎসা দিতে হবে। হাসপাতালের জন্য রোগী নয়। রোগীদের জন্য হাসপাতাল হওয়া প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখিয়েছি চেষ্টা করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তবে আমাদের এই মহৎ উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন নাভানা গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ফিল্ড হাসপাতাল থেকে কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সেটাই আমাদের স্বার্থকতা।

ডা. হোসেন আহম্মদ : চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবা যখন প্রশ্নবিদ্ধ তখনই করোনা রোগীদের সেবা দিতে এগিয়ে আসেন ডা. হোসেন আহম্মদ। তার উদ্যোগে পতেঙ্গার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল।

গত ১৩ জুন থেকে চালু করা হয়েছে এটি। ইতোমধ্যে বেশ সাড়াও মিলেছে। পতেঙ্গা ইপিজেড এলাকায় কোনো হাসপাতাল না থাকায় এই হাসপাতালে মানুষের আস্থা ফিরেছে।

ডা. হোসেন আহম্মদ বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে এই হাসপাতাল স্থাপনের চেষ্টা করেছি। এই কাজে এলাকার স্থানীয়রাসহ সবাই আমাকে সহায়তা করেছেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালে এখন পাঁচ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন আরও সাত জন। যেহেতু এই এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই তাই এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে কোনো রোগী সুস্থ হয়ে উঠলে সেটাই আমাদের স্বার্থকতা।

ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা : করোনা যদ্ধে হার না মানা একটি নাম ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার কোলজুড়ে জন্ম নিয়েছে পুত্র সন্তান। চার মাস বয়সী শিশুকে বাসায় রেখে প্রতিদিন তিনি হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন করোনা রোগীদের।

ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজার স্বামী মাহমুদুল হাসান শাওন বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার আগে রাতে খেয়ে বাসা থেকে বের হন আফরোজা। যতক্ষণ হাসপাতালে থাকেন নিজের এবং বাচ্চার সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বাসা থেকে বের হওয়া পর থেকে পরের দিন বাসায় ফেরা পর্যন্ত কোনো খাবার গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত তার।

‘এমনকি সার্বক্ষণিক পিপিই পরে থাকেন। চাকরি শেষে হাসপাতালে ব্যবহৃত পিপিই খুলে নতুন আরেক জোড়া পিপিই পরে বাসায় আসেন। এভাবে করে তিনি গত দশ দিন ধরে কাজ করছেন।’ বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!