Home | উন্মুক্ত পাতা | খালের পানিতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার, রক্ষক, জনজীবন, মৎস্য শিকারী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুষ্টি!!

খালের পানিতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার, রক্ষক, জনজীবন, মৎস্য শিকারী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুষ্টি!!

135

ফিরোজা সামাদ : হায়রে ক্ষুদে প্রজন্ম তোমাদের জন্মদিয়ে ছেড়ে দিয়েছি ধরণীর অাস্তাকুড়ে। একটিবারও ভাবছিনা কী রেখে যাচ্ছি তোমাদের তরে। নিংড়ে গলধগরন করছি ওই রাক্ষুসে ম্যানহোলের মতো। ধরণীর রূপ রস গন্ধ সব চুষে খেয়ে গেলাম, তারপরেও পেট ভরছেনা।

অন্যায় ভাবে নিজ স্বার্থ অাদায়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে অমানবিক দুর্নীতি। কৃষক- মজুর -জেলে – তাতী থেকে শুরু করে উপরমহলসহ গোটা সমাজ অাজ দুর্নীতির কালো চাদরে অাবৃত হয়ে অাছে। অার দায়িত্বশীল এক শ্রেণীর মানুষ ফায়দা লুটছে। এর থেকে পরিত্রানের কি কোনো উপায় নেই অামাদের ?

প্রায় ২৫ বছর পর ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে একটি ব্যক্তিগত জরুরী কাজে বরগুনায় অামার গ্রামের বাড়ি যাই। সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরার পথে একটি সেতু পাড় হওয়ার সময় লক্ষ করলাম খালের দুই পাড়ে সুন্দর সমান্তরাল করে কিছু বিছিয়ে রাখা হয়েছে।

ওখানে গাড়ি থামিয়ে কৌতুহলের বশে অাশেপাশে থাকা লোকজনদের কাছে জানতে চাইলাম খালে এতো সুন্দর করে কী এবং কেনো বিছানো হয়েছে? ওখানকার এলাকাবাসী যা বললেন,তা শুনে অামি বিস্ময়ে হতবাক! লোকজন বললেন সারা খালের মধ্যেই এমনি করে কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখা হয়েছে। খালের মাঝখানে জাল খালের তলদেশ পাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে ইট ছড়িয়ে রাখা হয়। তারপর ৫/৭ দিন এমনি রাখলে মাছ নিরাপদে বাস করতে থাকে। তখন মাছ শিকারীরা চারপাশ থেকে জাল গুটিয়ে পোনাসহ মাছ মারে। জিজ্ঞেস করলাম, মৎস্য বিভাগ বিষয়টি তদারকি করছেনা? জানতে পারলাম,মৎস্য বিভাগ থেকে মাঝে মাঝে এসে তাদের ভাগের মাসোহারা টাকা নিয়ে নেয়। এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়না। এতে প্রভাবশালী মহল ও জেলেরা জড়িত বলে গরীব কৃষক জনসাধারণ বাচ্চাদের মুখে দুটো ছোটমাছও তুলে দিতে পারেনা। এই বিষয়টি অামি তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিয়েছিলাম ছবি সহ।

নিচের তিনটি চিত্রই চলার পথে অামার নিজ হাতে মোবাইল ক্যামেরায় তোলা। খাল বিলের পাশে রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চলতে চলতে এমন অনেক দৃশ্য অামার দৃষ্টিতে পড়েছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি একটি ব্রিজের উপরদিয়ে ধীর গতিতে চলার সময় অামার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, ” খালটি এভাবে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো কেনো ? ড্রাইভার যা বললো তাতে অামার হৃদয় মোচড় দিয়ে উঠলো ক্ষণিকের জন্য, উহ্ ! এও হতে পারে ?

বন্ধুগণ ! একবার ছবির প্রতি চোখ বুলিয়ে দেখুন ! পুরো খালটির পাড় থেকে অতল পর্যন্ত বিছানো হয়েছে কারেন্ট জাল। উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জোয়ার – ভাটা। মাছেরা রেণুসহ চলাফেরা করে নিশ্চিন্তে। তাপর মৎস্য শিকারী সুযোগ সুবিধা মতো চুপিসারে চারপাশ থেকে ঘেরাও করে মা ও শিশুমাছ নিধন করে পেটপুরে খায়। একবারের জন্যও ভাবেনা ওরা, কি খাবে তাদের প্রজন্ম পরম্পরায়।

একটু খোঁজ নিতে বেড়িয়ে এলো অারো মর্মান্তিক কথা। যারা এই মাছের পোনার রক্ষক, তাদেরকে অাবার দিতে হয় মাসোহারা। হায়রে হতভাগা দেশের মানুষ। কবে অাবার তোরা মানুষ হবি ? শুদ্ধ দেশের পরিশুদ্ধ মানুষ চাই ! কবে অাসবে ফিরে সেইদিন।

সেই খালের তখনকার দৃশ্য :

৩/৪ দিন অাগে অামার একজন ফেসবুক বন্ধু মাছ শিকারের একটি অাশ্চর্যজনক।ভিডিও পাঠায়। ভিডিওচিত্র এবং কথোপকথন থেকে দেখা ও জানা যায় যে, সুন্দরবন সংলগ্ন খালগুলি এখন অসৎ।মৎস্য শিকারীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা পুরো খাল জুড়ে জালের ফাঁদ পেতে খালের পানিতে বিষ ঢেলে মিশিয়ে দিচ্ছে। ছোট মাছের জন্য এক ধরণের বিষ এবং বড় মাছের জন্য একধরণের বিষ পানিতে মেশান তারা। বিষ পানিতে মেশালে মাছগুলো নিস্তেজ হয়ে জালে অাটকে যায়। সুন্দরবনের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত চলছে এমন অবৈধভাবে মাছ শিকার। ভিডিওতে অারো দেখা যায় কেউ একজন জানতে চাইছে এভাবে মাছ শিকারে তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা?

সেখান থেকে জানা যায় একটি মহলের।ছত্রছায়ায় তারা এমন প্রক্রিয়ায় মাছ ধরছে এবং সেই মহলটিকে মাসোহারা দিতে হয়। তারা নির্বিঘ্নে পানিতে বিষ মিশিয়ে পানি ছেকে মাছ সংগ্রহ করছে। ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মৎস্য প্রজাতি।

ভিডিও চিত্র :

এ ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে মাছের সাথে সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণী মারা গিয়ে একদিকে যেমন পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে শিকার করা মাছ খেয়ে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রপত্রিকায় এনিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হয় না। গত কয়েক মাসে প্রকাশিত দেশের দৈনিক পত্রিকা পর্যবেক্ষণ করলেই এর সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও ভিডিও চিত্রে যা দেখতে পাওয়া যায় তা ভয়ঙ্কর এবং আমরা মনে করি দিনে পর দিন এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এই মারাত্মক ক্ষতিকর প্রক্রিয়ায় মাছ ধরার ফলে একদিকে যেমন সুন্দরবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে রেহাই পাচ্ছে না নদী আর খালের মতো জলাশয় সমূহ। আবার সেই বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত মাছ খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেবার পাশাপাশি বিষাক্ত জলাশয়ের পানি পান করে জীবন হারাচ্ছে জলজ ও স্থলজ বন্যপ্রাণী। তাই এখনই এবিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শুধু আইন প্রয়োগ করে এর সমাধান যেমন করা সম্ভব নয় তেমন কেবলমাত্র সচেতনতা বাড়িও এর প্রতিকার পাওয়া অসম্ভব। তাই প্রয়োজন আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্যকর ও টেকসই কৌশল অবলম্বনের। নাহলে এই বিষক্রিয়ার ফলে অাগামীতে অামরা হয়তো পেতে থাকবো ভয়ঙ্কর বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী এক প্রজন্মকে। যা দেশের জন্য কখনো কাম্য হতে পারেনা।

লেখক : কলামিষ্ট, কবি ও গীতিকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!