ওমর ফারুক : করোনা কোন পাপ নয়। সামাজিক মেলামেশা যেমন হ্যান্ডশেক, পাশাপাশি বসা, শরীরের সাথে শরীরের স্পর্শ লাগলে কিংবা কোলাকুলি করলে এই রোগ ছড়াতে পারে। জন্ম থেকে দেখে আসছি মানুষে মানুষে হ্যান্ডশেক করতে, ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি করতে। এগুলো তো কখনো পাপ হতে পারে না। এগুলো পাপ না হলে করোনা রোগী কিভাবে পাপী হয়।
করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে হওয়ায় এই রোগটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই সরকারিভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বলা হচ্ছে, ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। একজন করোনায় আক্রান্ত হলে তার পুরো পরিবার, এমনকি পুরো কমিউনিটির মধ্যে তা ছড়িয়ে যেতে পারে। হার্ড কমিউনিটি সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য, নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে, ঘরে থাকতে হবে।
অন্যদিকে অসামাজিক মেলামেশায় এইডস হয়। এইডসকে আমরা পাপ বলতে পারি কিন্তু করোনাকে তো কিছুতেই পাপ বলা যায় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য করোনা আক্রান্ত রোগীকে আমরা পাপী বানিয়ে ফেলেছি। প্রতিদিন তারা সামাজিকভাবে বয়কটের শিকার হচ্ছে, করোনা উপসর্গ দেখা দিলে সন্তান তার মাকে পাহাড়ে রেখে আসতেছে, জানাযা পড়াচ্ছে না, মরদেহ বহন করার জন্য খাটিয়া দিচ্ছে না, সৎকার করাচ্ছে না, ভাড়াটিয়া আক্রান্ত হলে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে, এমনকি পুড়িয়ে মারার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। এসব কি? আমরা করোনা রোগীদের সাথে কী রকম বর্বর আচরণ করছি। যে ডাক্তার করোনা ঠেকাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রান্ত হয়েছে, যে পুলিশ চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি করে সংক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে নিজেই সংক্রমিত হয়েছে তাকেও আমরা সন্দেহের চোখের দেখছি, বাসা ভাড়া না দেওয়ার হুমকি দিচ্ছি।
কথায় কথায় আমরা নিজেদের সচেতন দাবি করি, শিক্ষিত দাবি করি অথচ আচরণে আমরা আইয়ামে জাহলিয়াতের মানুষদের চেয়েও বর্বর হয়ে গেছি। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। ইতিহাসের এমন রিপিটিশন তো কখনো কাম্য হতে পারে না।
করোনার একশো কেসের মধ্যে ৯৮ শতাংশ হয় মাইল্ড বাকি ২ শতাংশ হয় সিরিয়াস। যারা শ্বাসকষ্টের রোগী, হার্টের রোগী কিংবা ডায়বেটিসের রোগী তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বেশি। আপনার সুরক্ষা আপনি নিজে নিশ্চিত করলে করোনা আপনাকে কিছুই করতে পারবে না। ধনেপাতা কিংবা দশ টাকার মরিচ কেনার জন্য বের হবেন, শপিং করতে বের হবেন আর গালি দিবেন করোনা রোগীকে; তাতো হতে পারে না।
জন্মিলে মরিতে হইবে। আল্লাহ প্রত্যেকের মৃত্যু কিভাবে হবে আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ যদি আমার মৃত্যু করোনায় লিখে রাখে হাজার চেষ্টা করেও আমি তা ঠেকাতে পারবো না, হাজারটা করোনা রোগীকে অবহেলা করেও পারবো না।
কালকে আমি করোনায় আক্রান্ত হতে পারি, আপনিও হতে পারেন এমনকি যারা করোনা রোগীর জানাযা পড়ে নি, যারা তাদের মাকে পাহাড়ে রেখে এসেছে তারাও আক্রান্ত হতে পারে।
আজকে আমরা যাদের সাথে নিয়ে করোনা রোগীকে ঘৃণা করছি, পুড়িয়ে মারার হুমকি দিচ্ছি কালকে আমি আক্রান্ত হলে তারা যে আমাকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিবে না তার নিশ্চয়তা কী?
আসুন ঘরে থাকি এবং মানবিকতাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখি। লেখক : সহকারী শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।