ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কক্সবাজারে শ্যুটিং দলসহ আড়াই লাখ ইয়াবার চালান আটক

কক্সবাজারে শ্যুটিং দলসহ আড়াই লাখ ইয়াবার চালান আটক

004544k_pic

নিউজ ডেক্স : দেশে ইয়াবার চালান ঢুকে পড়ার প্রধানতম স্থান টেকনাফ সীমান্ত এখনো পর্যন্ত মাদক বিরোধী কোনো অভিযান শুরু না হলেও ইতোমধ্যে সেখানকার পরিস্থিতি আকস্মিক বদলে গেছে। বদলে গেছে টেকনাফ সীমান্তের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিও।

স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতিতেও ব্যাপক ধ্বস নেমেছে। সেই সাথে সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের নিয়ে পুলিশের গোপন চুক্তির অভিযোগ থাকার পরেও টেকনাফ থানা পুলিশের এক কর্মকর্তাকে অবশেষে কক্সবাজার ডিবি অফিসে বদলি করা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তার বদলী হয়েছিল টেকনাফ থেকে খাগড়াছড়ি। সাবেক বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকা সত্বেও এই পুলিশ কর্মকর্তার খাগড়াছড়ি কাটিয়ে কক্সবাজারেই পোস্টিং দেওয়া হয়।

টেকনাফের স্থানীয় বাজারে সামুদ্রিক মাছের মূল্য আকস্মিকভাবে কমে গেছে। সীমান্তের ইয়াবা কারবারিরা গা ঢাকা দেওয়ায় বাজারে উচ্চ মূল্যে মাছ-মাংস ক্রয়ের ক্রেতাও নেই। আকস্মিক গা ঢাকা দিয়েছে সীমান্ত এলাকার শত শত মোটরবাইক চালক তরুণের দল।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, টেকনাফ সীমান্তে কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন হাজার মোটরবাইক রয়েছে। প্রতিটি দুই থেকে তিন-চার লাখ টাকা দামের মোটরবাইক নিয়ে তরুণের দল ইয়াবা পাচার করে থাকে।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার সুলতান আহমদ বুধবার সন্ধ্যায় মোবাইলে কালের কণ্ঠকে জানান, আমাদের টেকনাফে যদিওবা কোনো অভিযান নেই তবুও আচমকা বর্ষণ থামার মত চারিদিকে স্যুনসান নিরব হয়ে গেছে। সীমান্তের বেড়িবাঁধসহ রাস্তা-ঘাটে সন্ধ্যার পর থেকেই শত শত মোটরবাইকের ছুটোছুটিতে ছিল এক অন্যরকমের দৃশ্য। কিন্তু এখন বেশ আরামে আছি।

সাবেক ইউপি মেম্বার বলেন, তিনি স্থানীয় বাজারে গিয়ে রীতিমত অবাক হয়েছেন। কেননা তরতাজা বড় সাইজের কোরাল মাছের কেজি ছিল দেড় হাজার টাকা। দেশী মুরগির কেজিও ছিল হাজার টাকা। সেই সাথে অন্যান্য মাছেরও দাম ছিল সাধারণ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসবের ক্রেতাই ছিল কেবল ইয়াবা কারবারিরা। এখন সেই কারবারিরা গা ঢাকা দেওয়ায় এসব পণ্যের মূল্য নেমে এসেছে অর্ধেকে।

টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বুধবার রাতে জানান, সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা কারবারিরা গা ঢাকা দিয়েছে। এ কারনে মোটরবাইক বলতে গেলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কারবারিদের গা ঢাকার কারনে স্থানীয় বাজারে পণ্যসামগ্রীর মূল্যও কমে গেছে-এটা সত্যি।

তিনি বলেন, সীমান্তে ইয়াবা বিরোধী অভিযান বন্ধ নেই। তবে কারবারিরা গা ঢাকা দেওয়ায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। টেকনাফ থানায় আড়াই মাস আগে যোগ দিয়ে ইতোমধ্যে ১৬ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছেন। বুধবার চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের সম্মেলনে তিনি বিভাগীয় সেরা ওসি হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।

এদিকে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলাকালেই কক্সবাজার এবং টেকনাফে পৃথক অভিযানে বুধবার এক দিনেই উদ্ধার করা হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ইয়াবার চালান। এসবের মধ্যে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা টেকনাফ সীমান্তে ৫০ হাজার পিচ ইয়াবার একটি চালান উদ্ধার করেছে।

অপরদিকে বিজিবি- ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা টেকনাফের খারাংখালী লবণ মাঠ থেকে উদ্ধার করেছে এক লাখ পিচ ইয়াবা। এসব উদ্ধার অভিযানে কাউকে আটক করা হয়নি।

সর্বশেষ কক্সবাজারে শ্যুটিং করতে এসে লক্ষাধিক পিস ইয়াবাসহ আটক র‌্যাব সদস্যের হাতে আটক হয়েছেন শ্যুটিং গ্রুপের ১০ সদস্য। কক্সবাজার সৈকতে শ্যুটিং করার নামে এসে এক লাখ আট হাজার পিচ ইয়াবাসহ ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’ নামে একটি শ্যুটিং টিমের ১০ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা।

বুধবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়।

আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে, ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’ নামে ওই শ্যুটিং টিমের প্রধান আসলাম সরকার (৪০), তার ড্রাইভার মাসুদ রানা (৩২) এবং শ্যুটিং টিমের আরো আট সদস্য।

এ ব্যাপারে র‌্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহী ভিত্তিক মিউজিক ভিডিও নির্মাণ সংস্থা ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’র শ্যুটিং টিমের ১০ জনকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে আসলাম সরকার ও তার ড্রাইভার মাসুদ রানা ছাড়া অন্য ৮ জন হচ্ছেন অভিনয় ও নৃত্য শিল্পী। তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।

মেজর রুহুল আমিন জানান, মিউজিক ভিডিও নির্মাণের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচারে জড়িত এই ভয়ংকর চক্র। এই চক্রটির কক্সবাজারের সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে। তাদেরকে আটক করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!