ব্রেকিং নিউজ
Home | অন্যান্য সংবাদ | উত্তম চরিত্রের গুণাবলী

উত্তম চরিত্রের গুণাবলী

242

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী : ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সব দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। আর সেজন্য উত্তম চরিত্রকে ইমানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে উল্লেখ করেছে। প্রিয় রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ইমানদার হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। ’ মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি।

সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ইমানের প্রমাণ ও প্রতিফলন। উত্তম চরিত্র ছাড়া ইমানের প্রতিফলিত হয় না। তাই তো নবী করিম (সা.) সংবাদ দিয়েছেন, তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব চরিত্রের উত্তম দিকগুলো পরিপূর্ণ করে দেওয়া। রসুল (সা.) বলছেন, ‘আমি চরিত্রের উত্তম দিক পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি। ’ মুসনাদে আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ।

এ কারণেই আল্লাহতায়ালা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবিবের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ সূরা আল-কালাম : ৪।

ইসলামে ইবাদতগুলো চরিত্রের সঙ্গে সংযুক্ত। আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রসুল (সা.) আমাদের যেসব উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতার চরিত্র। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও। ’ সূরা আত-তাওবাহ : ১১৯।

হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়, একজন লোক সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদিতার প্রতি অনুরাগী হয়, ফলে আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ’ মুসলিম।

মুসলমানদের যেসব উত্তম চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার একটি হচ্ছে আমানতসমূহ তার অধিকারীদের কাছে আদায় করে দেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে আদায় করে দিতে। ’ সূরা আন নিসা : ৫৮।

উত্তম চরিত্রের আরেকটি দিক হচ্ছে একজন মুসলমান তার অন্য মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করবে। সে ধনী হোক বা গরিব। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার বাহু মুমিনদের জন্য অবনত করে দাও। ’ সূরা আল-হিজর : ৮৮।

হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ আমার কাছে ওহি করেছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও যাতে একজন অন্যজনের ওপর অহংকার না করে। একজন অন্যজনের ওপর সীমালঙ্ঘন না করে। ’ মুসলিম।

উত্তম চরিত্রের অন্যতম একটি দিক হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব, আর তা ছিন্ন করা জান্নাত থেকে মাহরুম ও অভিশাপের কারণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা তো ওইসব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। এতে তিনি তাদের বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন। ’ সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩।

হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। ’ বুখারি ও মুসলিম।

প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দরতম ব্যবহার হচ্ছে উত্তম চরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। প্রতিবেশী হচ্ছে সেসব লোক যারা আপনার বাড়ির আশপাশে ৪০ ঘরে বসবাস করে। যে আপনার সবচেয়ে নিকটবর্তী সে সুন্দর ব্যবহার ও অনুগ্রহের সবচেয়ে বেশি হকদার।

লেখক : এম.ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!