নিউজ ডেক্স : অনেক মানবতা দেখিয়েছি, আর কত মানবতা দেখাবো’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য দেশের নেতার কাছ থেকে আশা করা যায় না।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। আমরা আগেই বলেছি তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার চিকিৎসা দরকার এবং সেই চিকিৎসা এ দেশে সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বলেছি, যারা চিকিৎসক তারাও বলেছেন। যে টেকনোলজিতে তার চিকিৎসা করা দরকার সে টেকনোলজি এখানে নেই। সুতরাং তাকে অবিলম্বে বাইরে উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো দরকার। কী দুর্ভাগ্য আমাদের জোর করে ক্ষমতা দখল করে যিনি দেশ চালাচ্ছেন তিনি বলেছেন, অনেক মানবতা দেখিয়েছি, আর কত মানবতা দেখাবো। এটা কোনো সভ্য দেশের নেতার কাছ থেকে আশা করা যায় না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে নেত্রী তার সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য কারাগারে গেছেন। নেই নেত্রীকে আজকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের সফলতা হলো সেখানে যখন তারা সারা জাতির মধ্যে একটা ভীতির সঞ্চার করতে পারে। আমরা কথা বলতে পারি না। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারি না। দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এ পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। তিনি যে পরিবেশে মানুষ হয়েছেন সেটি ছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পরিবেশ। তার বাবা মোহন মিয়া গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। শত বছরের পুরোনো একটা পরিবার। যে পরিবারের মূল বিষয় ছিল জনগণের কল্যাণ। একজন ক্ষমতাবান মানুষ হয়ে কতটা বিনয়ী হওয়া যায় সেটা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের কাছ থেকে শেখার ছিল। আমাদের রাজনীতিতে এ ধরনের নেতা, এ ধরনের ব্যক্তিত্ব এখন একবোরে নেই বললেই চলে। আমরা এখন এ মানুষগুলোকে যে মনে করছি এটাও অনেকের পছন্দ হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি থেকে যখন জ্ঞান, রাজনীতি থেকে যখন উইজডম চলে যায় তখন সেখানে শুধুমাত্র মাসেল, মানি এগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন সেই রাজনীতি ফলপ্রসূ কিছু দিতে পারে না। জাতিকে তো কিছু দিতে পারেই না। এখানে শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করছি অবশ্যই একদিন অন্ধকার কেটে যাবে। নতুন সূর্য উদয় হবে। অবশ্যই একদিন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো মানুষরা আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবেন। অবশ্যই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে ঐক্য। আমাদের গোটা জাতিকে আজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সব মানুষ, সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এ যে একটা মনস্টার, দানব আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে, সেই দানবকে পরাজিত করতে হবে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক কবি আব্দুল হাই সিকদারের সভাপতিত্বে ও শহীদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শাহাজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের কন্যা চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।