নিউজ ডেক্স : একজন অপরিচিত মানুষ এসে একটি ছোট্ট চিরকুটে লেখা ঠিকানা জানতে চেয়ে অথবা কোনো কারণ ছাড়াই আপনার সঙ্গে কথা বলে হাত মেলালো। এরপর ধন্যবাদ জানিয়ে আবারও হ্যান্ডশেক করলো। এতেই আপনি ওই মানুষটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে যাবেন। একটু পর আপনি তার কথামতো সব কাজ করতে শুরু করবেন। তার হাতে তুলে দেবেন নিজের দামি মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সাসহ সবকিছু।
আপনি স্বাভাবিক অবস্থায় আসার পর আগের ঘটনা কিছুই মনে থাকবে না। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই এমন ঘটনা ঘটতেই পারে যে কারও সঙ্গে। আসলে আপনি এ অবস্থায় পড়েছিলেন একটি ভয়ানক ড্রাগের কারণে সেই ভয়ানক ড্রাগটির নাম ‘স্কোপোলামিন’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’।
স্কোপোলামিন নামক ড্রাগ মূলত লিকুইড ও শুকনো ধরনের হয়। এটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। এই ড্রাগ ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ২০ থেকে ৬০ মিনিট। আবার এই মাদক খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে এর প্রতিক্রিয়া থাকে দু-তিনদিন। এ মাদক গ্রহণে ভুক্তভোগীরা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এই সুযোগটি লুফে নেয় প্রতারকরা।
সম্প্রতি দেশে এক ধরনের নতুন মাদকের উদ্ভব ঘটেছে, যা দিয়ে একজন মানুষের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায়। এরপর তার কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে নিতে পারে প্রতারক। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
ডলি ইসলাম (৫৫)। গত বছরের জুনে ধোলাইপাড় এলাকায় চোখে চোখ রাখতে বলে দুই প্রতারক তার কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, একটি মোবাইল ও নগদ চার হাজার টাকা নিয়ে নেয়।
ঘটনার বর্ণানা দিয়ে ভুক্তভোগী ডলি ইসলাম বলেন, ধোলাইপাড় মোড় থেকে পায়ে হেঁটে ধোলাইপাড় ৩ নম্বর গলির মাথার মিষ্টির দোকানের সামনে পৌঁছালে একজন নারী আমার সামনে এসে বলে, পাশেই একটি এতিমখানা রয়েছে, সেখানে কিছু টাকা দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। উত্তরে আমি না করায় ওই নারী অনেক অনুরোধ করেন। পরে তিনি আমার মাথায় হাত রাখেন এবং চোখে চোখ রাখতে বলেন। এরপর আমার গলায় থাকা একটি স্বর্ণের চেইন, একজোড়া কানের দুল, একটি মোবাইল ফোন ও নগদ চার হাজার টাকা নিয়ে নেন।
ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে আমার মনে হয় বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। বাসায় গিয়ে কয়েক ঘণ্টা পরে আমার মনে হয় কাছে থাকা সব জিনিসপত্র অচেনা নারীকে দিয়ে এসেছি। ঘটনার দিন রাতেই আমার ছেলে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করে। তখন থানা থেকে জানানো হয়, এমন ঘটনা এই এলাকায় আরও দুজনের সঙ্গে ঘটেছে। ঘটনার পর স্বাভাবিক হতে তার সময় লাগে প্রায় চারদিন।
তাজমহল রোড থেকে ৩০-৩৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ আমার হাতে একটি চিরকুট দেখিয়ে ঠিকানা জানতে চান। ঠিকানা বলার কয়েক মিনিট পর আমার কাছে থাকা দুটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকা নিজের অজান্তেই ওই ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেয়। বাসায় এসে তিন-চার ঘণ্টা পর ঘটনার কথা মনে পড়লে নিজেই নিজেকে দোষারোপ করি।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও মলম পার্টির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি অথবা মামলা হলে আমরা সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে আসামি গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। কোনো মাদক দিয়ে অথবা মলম পার্টির দ্বারা কেউ ভুক্তভোগী হলে তাদের থানায় এসে সরাসরি অভিযোগের অনুরোধ করছি। নতুন মাদক শয়তানের শ্বাসের বিষয়ে নাগরিকদের সতর্ক থাকারও অনুরোধ জানান তিনি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাস করছেন জোবায়ের আহমেদ নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, জানুয়ারিতে তাজমহল রোড থেকে ৩০-৩৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ আমার হাতে একটি চিরকুট দেখিয়ে ঠিকানা জানতে চান। ঠিকানা বলার কয়েক মিনিট পর আমার কাছে থাকা দুটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকা নিজের অজান্তেই ওই ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেই। বাসায় এসে তিন-চার ঘণ্টা পর ঘটনার কথা মনে পড়লে নিজেই নিজেকে দোষারোপ করি।
এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা খোয়া গেছে তো গেছেই, তা আর খুঁজে পাবো না। এ কারণে ঝামেলা এড়াতে কোনো আইনি সহায়তা নেইনি।
ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের শ্বাস নামক এই ড্রাগটি স্কোপোলামিন (scopolamine) হিসেবেও পরিচিত। এ মাদকটি মূলত প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে। এই ড্রাগ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।
স্কোপোলামিন নামক ড্রাগ মূলত তরল (লিকুইড) ও শুকনো এই দুই ধরনের হয়। এটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। এই ড্রাগটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ২০ থেকে ৬০ মিনিট। আবার এই মাদক খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে এর প্রতিক্রিয়া থাকে দু-তিনদিন। এ মাদক গ্রহণে ভুক্তভোগী সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এই সুযোগটি লুফে নেয় প্রতারকরা।
রোগীকে অপারেশনের আগে অজ্ঞান করতে এটা ব্যবহার করা হয়। এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ড্রাগটি দেখতে হুবহু কোকেন পাউডারের মতোই সাদা; তবে এর ক্ষতির মাত্রা কোকেন থেকে বহুগুণে বেশি।
মস্তিষ্কের ওপর শয়তানের শ্বাস মাদকের প্রভাব
কোনো অনুভূতি যেমন- শব্দ, তাপ, চাপ, ব্যথা নিউরনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। নিউরনগুলো একটার সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হয় সিন্যাপস নামক সংযোগস্থলের মাধ্যমে। সিন্যাপসে নিউরোট্রান্সমিটার নামক তরল থাকে। এটি স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহনে প্রধান ভূমিকা রাখে। স্কোপোলামিন, শয়তানের শ্বাস মাদক দেহে প্রবেশের পর রক্তে মিশে যায় এবং নিউরো ট্রান্সমিটারে প্রবেশ করে। এটি নিউরো ট্রান্সমিটারকে ব্লক করে দেয়, ফলে স্নায়ু উদ্দীপনা ও অনুভূতি পরিবহনের হার হ্রাস পায়। এটির প্রভাবে জলজ্যান্ত মানুষ রোবটের মতো আচরণ করে। নেশা কেটে যাওয়ার পর অনেক সময় ব্যক্তির কোনো কিছুই আর মনে পড়ে না।
দেহের ওপর শয়তানের শ্বাস এর প্রভাব
স্কোপোলামাইন, শয়তানের শ্বাস মাদক দেহের অনেক কাজে বাধা সৃষ্টি করে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, চোখের মণি বড় হয়ে যায়, এক ধরনের ঘুমঘুম ভাব তৈরি হয় ও প্রচণ্ড ঘুম পায়। চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া ও চোখের পেশির দুর্বলতার কারণে চোখ বন্ধ করতে না পারার অবস্থাকে twilight sleep বলা হয়। সেই সঙ্গে এর প্রভাবে মুখের লালা কমে যায়, যে কারণে মুখের ভেতরটা শুষ্ক হয়ে যায়। ইচ্ছা করলেও থুতু ফেলতে পারে না মানুষ। উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি বা কমে যেতে পারে। প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখতে পারে।
সমুদ্রে জাহাজে ভ্রমণ করার সময় জাহাজের দুলুনিতে মাথা ঘোরে এবং বমিভাব হয় এ অবস্থাকে সি-সিকনেস বলে। সি-সিকনেস দূর করার জন্য স্কোপোলামিন ব্যবহার করা হয়। অপারেশনের পর বমিভাব কমাতে এটি ব্যবহৃত হয়। পেটের পেশিগুলোর খিঁচুনি কমাতেও ব্যবহৃত হয়। মুখের অপারেশনের সময় মুখের ভেতর যাতে লালা ক্ষরণ না হয় সেজন্য এটি ব্যবহৃত হয়। পারকিনসন রোগে হাত-পা কাঁপে এটি কমানোর জন্য স্কোপোলামিন ব্যবহৃত হয়। প্রস্রবকালীন অ্যামনেসিয়া এবং সিনারজিস্টিক ব্যথা কমানোর জন্য এই ড্রাগটি বছরের পর বছর ব্যবহার করা হতো।
মাদক হিসেবে শয়তানের শ্বাস মাদক ব্যবহার
ভয়ঙ্কর মাদক স্কোপোলামিন বা ডেভিলস ব্রেথ, চূড়ান্ত মাত্রার হেলুসিনেটিক মাদক হিসেবে স্কোপোলামিন ব্যবহার করা হয়। এটি গ্রহণ করার পর মাদকসেবী নিজের চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলে; ফলে নিজের মতো অপার্থিব কল্পনার জগৎ সৃষ্টি করে আনন্দ পায়। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বিশেষ করে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, পেরু, চিলি ইত্যাদি দেশে এটি মাদক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
শয়তানের শ্বাস মাদকের মাধ্যমে যৌন হয়রানি
অপরাধীরা বিভিন্ন বয়সীদের যৌন মিলনে বাধ্য করতে এ মাদকটি ব্যবহার করে, পর্নোগ্রাফিক ভিডিও রেকর্ড করতে বা তাদের নগ্ন ছবি তোলার জন্যও এটি ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো এটির ফলে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। যৌনকর্মীরা নিজেদের কাছে আসা খদ্দেরকে স্কোপোলামাইন ব্যবহার করে সব হাতিয়ে নেয়।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার সানিয়া আক্তার মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় পরিচিত কণ্ঠে পেছন থেকে এক নারী তাকে ডাক দিলেন। পেছনে ফিরতে হঠাৎ এক ব্যক্তি তার মুখের সামনে একটি কাপড়ের রুমাল ওড়ালেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন নারী তাকে একটি চিরকুট হাতে দেয়। এতে তিনি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন। চক্রের সদস্যদের কথামতো সানিয়া স্বর্ণের হাতের বালা, গলার চেইন, কানের দুল ও মোবাইল দিয়ে দেন।
সানিয়ার মতোই সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেকে। এ চক্র এখন রাস্তা ছাড়িয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়েছে। মিরপুর এলাকার মধ্যবয়সী জাহেদা খাতুন নামে এক নারীও পড়েন এমন চক্রের ফাঁদে। একজন তার গা-ঘেঁষে সামনের দিকে চলে যায়। আরেকজন তার কাছে এসে একটি চিরকুট ধরিয়ে এতে লেখা ঠিকানা জানতে চায়। ছোট অক্ষরে লেখা থাকায় জাহেদা একটু কাছে নিয়ে লেখা বোঝার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে তিনজন তাকে ঘিরে দাঁড়ায়। এরপর প্রতারকরা তার কাছে থাকা টাকা-মোবাইল চাইলে তিনি সব কিছু দিয়ে দেন।
কিছুটা অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টির মতো মনে হলেও এটি সে রকম নয়। এটি কারও শরীরের ভেতরে গেলে তার কোনো নিজস্ব হিতাহিত জ্ঞান থাকবে না। প্রতারক যা বলবে তাই সে করবে। অর্থাৎ মানুষ প্রকাশ্যেই মোবাইল, মানিব্যাগ বা টাকা দিয়ে দেবে প্রতারককে। এতে আশপাশের মানুষও বুঝবে না আপনার কাছ থেকে সব লুটে নেওয়া হচ্ছে।
অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করবেন না
ছিনতাইকারী খুব ভালো মানুষ সেজে আপনার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করবে। আপনি জানতেও পারবেন না যে কি ভুল করলেন। ছিনতাইকারীর হাতে থাকে স্কোপোলামিন এটি হ্যান্ডশেক করার সময় আপনার হাতে লেগে যাবে এরপর ধীরে ধীরে রক্তে মিশে যাবে। এরপরই আপনি তার হুকুমের গোলাম হয়ে যাবেন। তার কথামতো আপনি নিজের বাড়িতে গিয়ে সব টাকা-পয়সা তার হাতে দেবেন। নির্দিষ্ট সময় পর যখন আপনার হুঁশ ফিরবে তখন আর কিছু করার থাকবে না। ছিনতাইকারীর চেহারা মনে থাকবে না। সেই সময় কি ঘটেছিল তাও মনে থাকবে না।
কারও ঠিকানা বা প্রেসক্রিপশন দেখে দেবেন না
হাসপাতাল বা ওষুধের দোকানের সামনে খুব অসহায় লোকের ভান করে কোনো মানুষ আপনার কাছে এসে বলবে স্যার আমি মুর্খ মানুষ পড়তে পারি না একটু দেখুন তো ডাক্তার আমাকে কী ওষুধ লিখে দিলো? আপনি যখন প্রেসক্রিপশনটা হাতে নেবেন তখন দেখবেন এর লেখাগুলো খুবই ছোট। ভালো করে পড়ার জন্য প্রেসক্রিপশনটা চোখের আরও কাছে নেবেন তখন এতে লাগানো স্কোপোলামিন শ্বাসের মাধ্যমে আপনার ফুসফুসে পৌঁছে যাবে। এই ড্রাগটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে।
শয়তানের শ্বাস থেকে বাঁচার উপায়
অচেনা বা সন্দেহজনক ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। কোনো কিছু পানও করা যাবে না। ভ্রমণের সময় অচেনা বা সন্দেহজনক ব্যক্তির ব্যবহার করা কোনো বস্তু নিজে হাত দিয়ে ধরা যাবে না। অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে স্পর্শ করুন। অচেনা ব্যক্তি গ্লাভস পরা থাকলে কোনোভাবেই হ্যান্ডশেক করবেন না।
দেশে প্রথমবারের মতো ‘ক’ শ্রেণির মাদক ডাইমেথক্সিব্রোমো অ্যাম্ফেটামিন (ডিওবি) জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
অধিদপ্তরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিওবি সেবনের পর সেবনকারীকে যেকোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্যোমী হন। এজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। বেশি পরিমাণে সেবন মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
তারা আরও জানান, ডিওবি অনেকটা এলএসডির মতো দেখতে হলেও এটি আরও বেশি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও হতে পারে। ডার্ক ওয়েবসাইটে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পোল্যান্ড থেকে ২০০ ব্লট ডিওবি অর্ডার করেন খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডারের পর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ঢাকা মেট্রো উত্তর) মেহেদী হাসান বলেন, আমরা স্কোপোলামিন মাদক সম্পর্কে শুনেছি কিন্তু এই মাদকের এখনও খোঁজ পাইনি। তবে এই মাদকের বিষয়ে অভিযান চলছে।
স্কোপোলামিন মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি র্যাব নতুন নতুন মাদক জব্দ ও আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে গত বছর ও চলতি বছর বিপুল পরিমাণ এলএসডি ও আইস জব্দ করা হয়। তবে স্কোপোলামিন ড্রাগ ব্যবহার করে যারা প্রতারণা করছে তাদের কেউ এখনো শনাক্ত হয়নি। এ ড্রাগের ফলে অনেক ভুক্তভোগী দামি জিনিসপত্র খুইয়েছেন বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। এই মাদক থেকে নিজেদের সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। তাই রাস্তাঘাটে অপরিচিতদের থেকে সবসময় সতর্ক থাকুন।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে জুয়েলারি ও ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় নারী ও পুরুষ সবাই এই ঘটনাগুলো মনে রাখুন এবং সাবধান থাকুন। সাবধান থাকুন রিকশাযাত্রী ও পথচারী থাকাকালেও। অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকুন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রধান) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এই মাদকের কারণে যারা ভুক্তভোগী ও দামি জিনিসপত্র খুইয়েছেন তারা সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করুন। প্রয়োজনে ডিবির কাছে অভিযোগ জানান। -জাগো নিউজ