ফিরোজা সামাদ : অারব অামিরাতে কেমন কেটেছিলো শুভ্রতার বারোটি বসন্ত ? অার এখনই বা কেমন দিন কাটাচ্ছে শুভ্রতা জানতে অামার কৌতুহল বেড়ে গেলো। কারন শুনেছিলাম শুভ্রতা অার ফিরে যায়নি স্বামীর কাছে বা ও বরকেও কেউ দেখেনি শুভ্রতাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অাসতে। চঞ্চলা মনে শুভ্রতার ফোন মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে একদিন ফোন করলাম শুভ্রতাকে। অামার পরিচয় দিতেই চিনে ফেললো অামায়।
কেমন অাছো তুমি ?
ভালো, অাপনি কেমন অাছেন ?
অামি ভালো অাছি,তোমায় ফেসবুকে
দেখি কিন্তু সামনাসামনি দেখতে
ভীষণ ইচ্ছে করছে। তুমি কি ঢাকায়
থাকো? অামি ঢাকায় থাকি, তা
একদিন এসোনা? তোমাকে দেখতে
ইচ্ছে করছে।
শুভ্রতা সম্মতি জানালো, অামার ঠিকানাটা চেয়েই নিলো অার বললো
হ্যাঁ অামি খুব তাড়াতাড়ি অাসবো
অাপনাকেও অামার দেখতে ইচ্ছে
করছে। সেই ছোট্টবেলা দেখেছি।
এসো অামি খুশি হবো,ভালো লাগবে।
অতপর কয়েকদিন পরে ঠিকই ফোন এলো, চেয়ে দেখি শুভ্রতার নাম্বার। চটজলদি ফোন রিসিভ করতেই বললো…..
অান্টি অামি শুভ্রতা।
হ্যাঁ মা, তোমার নাম সেভ করা অাছে
তুমি কোথায়? কেমন অাছো?
অামি অাপনার বাসার কাছাকাছি,
এসেছিলাম একটি কাজে, কাজটি
তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ায় ভাবলাম
অাপনার সাথে দেখা করে যাই।
তা বেশ ভালো করেছো মা,চলে এসো
অামিও একা, বেশ গল্প করা যাবে।
তোমার তাড়া নেই তো ?
না অামি অাসছি, লোকেশনটা দিন।
অামি বাসার লোকেশন দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে শুভ্রতা চলে এলো। প্রায় অাড়াই যুগ পর দেখছি শুভ্রতাকে। প্রথমে সালাম দিয়ে দাড়াতেই বুকে জড়িয়ে ধরলো। সেই মুখ,সেই চোখ, সেই হাসি, সেই দুধে হলুদে অালতা মেশানো, সোনায় গলানো গায়ের রঙ। পার্থক্য শুধু উচ্চতা ও একটু ভারী গড়ন। অাধুনিক স্মার্ট।
খাওয়া দাওয়া শেষে কথায় কথায় কিছু জানলাম ওর কথা। অতপর নিজের কৌতুহল অার দমিয়ে রাখতে না পেরে বলেই ফেললাম তোমার সব কথা জানতে ইচ্ছে করছে। শুনে শুভ্রতা অামার বাসার জানালায় চোখ রেখে কোথায় হারিয়ে গেলো। অামি কিছুটা লজ্জা পেলাম। অামি কি তাহলে ভুল করলাম ? বললাম…..
মা তুমি যদি বলতে না চাও তাহলে
থাকনা?
হ্যাঁ অাপনাকে বলতে ইচ্ছে করছে।
মনে হচ্ছে এতোগুলো বছরের
জমানো কথাগুলি অাপনাকেই বলা
যায়। অামার মনে স্বস্হীর বাতাস বয়ে
যাবে। অামি সব বলবো। যে কথা
অামার মায়ের শোনার অধিকার ছিলো
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অামি
মাকে বলার সুযোগ পাইনি। তাই
অাজো অামার বুকের ভেতরের কষ্টরা
কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অামায় ।
শুভ্রতার মুখে স্মিত হাসি ও চোখে জলের ধারা। পাঠক এখন থেকে অামরা শুভ্রতার মুখ থেকেই শুনে নেই ওর জীবনের না বলা লুকিয়ে থাকা ঘটনাবহুল কাহিনী।
বিয়ের পর চলে গেলাম অজানা অচেনা স্বামী নামক এক লোকের হাতধরে সেই সুদূরে অারব অামিরাতে। যেখানে অাপনজন তো নেই, সর্বোত্র অনিশ্চয়তা, শংকা ও অাতঙ্কে অাচ্ছন্ন থাকতে হতো অামায়। যার সাথে থাকছি, সবসময় মনে হতো সে কেউ নয়, দূরের অচেনা কেউ। তারপরেও নিয়তির কাছে নিজেকে সপে দিয়ে সংসার করার একটি নিরব সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাবলাম মানুষ একজনমে সবকিছু পায়না। যা পাইনি তা অামার নয়, যা বর্তমান তাই হোক চলার পথ।
(ক্রমশ:)