ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | লোহাগাড়ায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনে এগিয়ে আসেন তারা

লোহাগাড়ায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনে এগিয়ে আসেন তারা

এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে। ইচ্ছে থাকলেও করোনায় মৃতদের শেষ বিদায়ে থাকতে পারছেন না স্বজনরা। আবার কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে অমানবিকতা। করোনায় মারা যাওয়া পিতার লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়েছে পুত্র এমন ঘটনাও কম ঘটেনি। এমন মানবিক বিপর্যয় হয়তো করোনা না থাকলে দেখা লাগতো না। স্বজনদের এই অপরাগতায় মৃতদেহ দাফন-সৎকারে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক। লোহাগাড়ায় ইতোমধ্যে ৫টি স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করে যাচ্ছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন-সৎকার করে আসছেন।

তারা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শের আলীর নেতৃত্বে ‘করোনায় মৃতদের লাশ দাফন-সৎকার কমিটি’, মো. হাবিব ইমতিয়াজ নূরীর নেতৃত্বে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’, মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ‘লোহাগাড়া মানবতার দল’, এস. এম. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ‘সেবাই ধর্ম ফাউন্ডেশন’ ও এডভোকেট ফয়সালের নেতৃত্বে ‘প্রজন্ম লোহাগাড়া’।

করোনায় মৃতদের লাশ দাফন-সৎকার কমিটি : উপজেলায় একদম শুরু থেকে করোনায় মৃতদের লাশ দাফন করে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে শের আলীর নেতৃত্বে ইসলামী ফাউন্ডেশন উপজেলার মডেল কেয়ারটেকার ছৈয়দ বদরুল হক ও সহকারি কেয়ারটেকার রাশেদুল হকের সমন্বয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। টিম লিডার মোহাম্মদ শের আলী জানান, সরকারিভাবে করোনায় মৃতদের লাশ দাফনের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়। করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৬ জনের লাশ দাফন করেছেন। এছাড়া উপজেলায় যেসব সংগঠন করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মৃতদের লাশ দাফনে এগিয়ে এসেছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানান।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন : ‘প্রিয়জনের বিদায় হোক পরম মমতা ও ধর্মীয় অনুশাসনে, আমরা আছি আপনার পাশে’ এই শ্লোগান নিয়ে উপজেলায় করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দাফন-সৎকার কাজে এগিয়ে এসেছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ১২ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম। ধর্মীয় বিধান মেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দাফন-সৎকারের কাজ করে যাচ্ছে তারা। শুধু মুসলিম নয়, অন্যান্য ধর্মালম্বীদের জন্যও বিশেষ দল। এছাড়া নারীদের দাফনে কাজ করছেন ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি নারী দল। আরো ৮০ জন প্রশিক্ষিত কর্মী বর্তমানে লামায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। যারা প্রয়োজনে সেবা দেয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন। টিম লিডার মো. হাবিব ইমতিয়াজ নূরী জানান, দাফন-সৎকার কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেক কভার ও মরদেহের কাফনের কাপড় সবকিছুই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অথায়নে সংগ্রহ করা হয়। মরদেহ বহনের জন্য বিশেষ বডি ব্যাগসহ সুরক্ষার জন্য তিন ধরণের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মরদেহ দাফন-সৎকারের পর সুরক্ষার জন্য পিপিইসহ পরিধেয় অন্যান্য সামগ্রী পুড়ে ফেলা হয়। এ পর্যন্ত উপজেলায় তারা ২টি মরদেহ দাফন করেছেন। এছাড়া করোনায় মৃত গরীব-অসহায় ব্যক্তির লাশ পরিবহণে পরিবারের সক্ষমতা না থাকলে, তাও ফাউন্ডেশন বহন করবে বলে জানান তিনি।

লোহাগাড়া মানবতার দল : উপজেলায় মহামারীতে প্রাণ হারানো মানুষের শেষ যাত্রার সঙ্গী হচ্ছেন এ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসেন ৪০ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক দল। তাদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ৭ জন হিন্দু ও ৬ জন বৌদ্ধ। টিম লিডার মিজানুর রহমান জানান, দাফনকারী ব্যক্তির জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর খরচ সংগঠনই বহন করে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় দাফন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এ পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৪ জনের লাশ দাফন করেছেন। এ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফনে তারা সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন।

সেবাই ধর্ম ফাউন্ডেশন : ‘টাকার বিনিময়ে নয়, মানবতার কল্যাণে স্বেচ্ছায় আমরা কাজ করি’ এ শ্লোগান নিয়ে উপজেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এ সংগঠনটি। কোন পারিশ্রম ছাড়া স্বেচ্ছায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানান টিম লিডার এস এম মিজানুর রহমান। তিনি জানান, দাফনকারী ব্যক্তির জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী তারা নিজেরাই বহন করেন। এ কাজের জন্য এলাকার বিত্তবান ও প্রবাসীরা আর্থিক সহযোগিতা করছেন। এ পর্যন্ত তারা করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৯ জনের মৃতদেহ দাফন করেছেন।

প্রজন্ম লোহাগাড়া : করোনাকালীন সময়ে উপজেলায় মানবসেবায় এগিয়ে এসেছেন এ সংগঠনটি। তারা করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন, অসহায় করোনা আক্রান্তদের আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সংগঠনের টিম লিডার এডভোকেট এ. এম. ফয়সাল জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এজন্য ৫০ সদস্য বিশিষ্ট একটি গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ৩ জনের দাফন করা হয়েছে। লাশ দাফনে সুরক্ষা সামগ্রী সংগঠনই বহন করে থাকে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবেন বলে জানান তিনি।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ জানান, সরকারিভাবে উপজেলায় করোনায় মৃতদের লাশ দাফন-সৎকার কমিটি রয়েছে। এরমধ্যে আরো কয়েকটি সংগঠন করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন-সৎকার কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও লোহাগাড়া মানবতার দল নামে দুটি সংগঠন উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ দাফন-সৎকার করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!