ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | লোহাগাড়ায় এসিল্যান্ডের বদান্যতায় মেয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন পিতা

লোহাগাড়ায় এসিল্যান্ডের বদান্যতায় মেয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন পিতা

539

এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ্মাসন সিংহ’র বদান্যতায় নিজ মেয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন পিতা। নিজের ভূল বুঝতে পেরে মেয়ের বাল্যবিয়ে বন্ধ করায় গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার পিতাকে নিজ কার্যালয়ে এনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এসিল্যান্ড।

জানা যায়, বন্ধুরা যখন আসন্ন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, তখন আনোয়ারা বেগম (১৪) ব্যস্ত ছিলো বউ সাজা নিয়ে। তার পিতা সাহাব মিয়া বিয়ের ফর্দ ঠিক করেছে, বিয়ের কেনাকাটা শেষ করেছে, ডেকোরেশানের লোকজনের সাথে কথা বলেছে ও স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার পর্বটাও গুছিয়ে এনেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আনোয়ারার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এসিল্যান্ড পদ্মাসন সিংহের বদান্যতায় বাল্যবিয়ের সব আয়োজন ভেস্তে যায়। আনোয়ারা তার বন্ধুদের সাথে জেএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়।

এসিল্যান্ড পদ্মাসন সিংহ উপজেলার চুনতি মেহেরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হকের মাধ্যমে জানতে পারেন, উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের দক্ষিণ সাতগড় এলাকার পাটিয়াল পাড়ার সাহাব মিয়া তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আনোয়ারা বেগমের বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছে। আনোয়ারা চুনতি মেহেরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপও করে। বিষয়টি এসিল্যান্ড জানার পর আনোয়ারার পিতা সাহাব মিয়াকে ডেকে পাঠান এবং বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে কথা বলে উদ্বুদ্ধ করেন। মেয়ের বয়স আঠারো বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সাহাব মিয়া বিয়ে দেবে না মর্মে এসিল্যান্ডের কাছে অঙ্গীকার করেন। পরেরদিন সাহাব মিয়া মেয়েকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান ও নিজের ভুল স্বীকার করে মেয়ের বাল্যবিবাহ ঠিক করার জন্য অনুশোচনা করেন।

এ ব্যাপারে মেহেরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হক জানান, আনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় হোম ভিজিট করে জানতে পারি তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। প্রথমে আনোয়ারার পিতাকে বুঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই তিনি বিয়ে ভেঙ্গে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে এসিল্যান্ড স্যারকে বিষয়টি অবহিত করলে সাহাব মিয়া মেয়েকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন ও নিজের ভুল বুঝতে পারার কথা অকপটে স্বীকার করেন। এসিল্যান্ড স্যার যেভাবে আনোয়ারার বাবাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সত্যি আমরা মুগ্ধ হয়েছি। আগেও বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে কাজ করেছি কিন্তু এভাবে কেউ ফুল দিয়ে উৎসাহিত করেননি।

বাল্যবিয়ের খপ্পর থেকে ফিরে আসা আনোয়ারা বেগম জানান, বাল্যবিয়ে থেকে রেহাই পাওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি। আমি আবার জেএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছি। পড়ালেখার জন্য বাবা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।

আনোয়ারার পিতা সাহাব মিয়া জানান, বাল্যবিয়ের কুফল না বুঝে আমার মেয়ের বিয়ের সব আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু এসিল্যান্ড স্যার বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আমাকে ভিডিও দেখান এবং বুঝান। তখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। বাড়ি গিয়ে ছেলে পক্ষকে না করে দিই। মেয়েকে আবার পড়াশুনা করতে উৎসাহ দিচ্ছি। এসিল্যান্ড সাহেব আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উৎসাহিত করায় ভাল লেগেছে।

এসিল্যান্ড পদ্মাসন সিংহ জানান, আনোয়ারা বেগমের পিতা সাহাব মিয়াকে বাল্যবিয়ে বন্ধ করার অনুরোধ করলে তিনি বিয়ের জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। পরে তাকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝাই এবং বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে ইউটিউবে থাকা বিভিন্ন ভিডিও দেখাই। তখন তিনি মেয়ের বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। ফলোআপ করতে গিয়ে জানতে পারি তিনি মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যান এবং মেয়ের পড়াশুনার ব্যাপারে শিক্ষকদের সহযোগিতা চান। বিষয়টি জেনে আপ্লুত হই এবং মেয়ের বাবাকে ফুল দিয়ে উৎসাহিত করি। বাল্যবিয়ে থামাতে হলে প্রত্যেক বাবাকে সচেতন করতে হবে এবং আমি আনোয়ারা বেগমের পিতাকে অন্যান্য পিতাদের সচেতন করার কাজে লাগাতে চাই বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!