নিউজ ডেক্স : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তানের লজ্জা থাকলে আর কখনও দুর্নীতি করবেন না।
বৃহস্পতিবার বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার পুরোটা দিন প্রধানমন্ত্রী কাটিয়েছেন দক্ষিণের দুই জেলা পটুয়াখালী ও বরিশালে। প্রথমে পটুয়াখালীতে গিয়ে দুই জেলার সীমানায় নিজের নামে সেনানিবাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে বিকালে বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলায় রায় হয়েছে, তাতে অভিযোগ ছিল এতিমখানার নামে আসা টাকা আত্মসাতের। এই বিষয়টির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমখানার টাকা এসেছে, সে টাকা এতিমের কাছে চলে যাবে, সে টাকা কেন থাকবে?
‘আজকে ধরা পড়ে গেছে ওই এতিমের টাকা মেরে। কারণ এতিমের টাকা মারা ইসলাম ধর্মও সমর্থন করে না। এতিমের টাকা মেরে খেলে তার শাস্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও দেয়। সেই শাস্তি আজকে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, তারাও পেয়েছে।’
‘লজ্জা থাকলে জীবনে আর লুটপাট করবে না, দুর্নীতি করবে না। মানুষের অর্থ সম্পদ নেবে না।’
বিএনপির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এই রায় দিয়েছেন বিচারক। তবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোর্ট রায় দিয়েছে, এখানে আমাদের কিছু করার নাই। কিন্তু অন্যায় করলে যে শাস্তি পায় সেটা আজকে প্রমাণিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির কাজ ছিল অত্যাচার করা, দুর্নীতি করা, মানুষের টাকা লুটপাট করা। খালেদা জিয়ার ছেলে (তারেক রহমান) দুর্নীতি করে টাকা পাচার করেছে। আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট বলেছে, খালেদা জিয়ার ছেলে দুর্নীতিবাজ। আরও একটা (আরাফাত রহমান কোকো) ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের কোর্ট শাস্তি দিয়েছে। আমরা ওই টাকা ফেরত এনেছি।’
‘ক্ষমতায় থাকতে হত্যা, দুর্নীতি, জনগণের সম্পদ লুটপাট ছাড়া তারা কিছুই জানে না।’
দুর্নীতি করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি
কোনো রকম দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতি করি জনগণের জন্য। আমার বাবা সারা জীবন এ দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন। তার নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, তিনি জীবন দিয়েছেন। তার কন্যা হয়ে জনগণের টাকা আমরা মেরে খাব, চুরি করব, দু্র্নীতি করব- এ জন্য ক্ষমতায় আসি নাই।
পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সে সময় বিশ্বব্যাংক আমার উপর, আমার সরকারের উপর, আমার বোনের উপর অভিযোগ এনেছিল যে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনল, তখন আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, আমরা দুর্নীতি করিনি, পারলে প্রমাণ করো।’
‘আল্লাহর রহমতে প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডা ফেডারেল কোর্ট যেখানে মামলা করেছিল, তারা বলে দিয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয় নাই।’
‘আমি কথা দিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আজকে আপনাদের দোয়ায় সেই পদ্মাসেতু আমরা নিজেদের অর্থায়নে করে যাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকতেই পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে ওই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে পদ্মাসেতুর কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা ২০০৯ এসে আবার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করি।’
আওয়ামী লীগ আমলে মানুষ শান্তিতে থাকে
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ ভালো থাকে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে সেই ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয় নাই। কারণ, আমি গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দেই নাই।’
‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসে যে অত্যাচার করেছিল, এই বরিশাল এলাকার প্রতিটি জেলা-উপজেলার প্রতিটি মানুষের উপর অত্যাচার করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। ওই লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী, এতিমের টাকা যারা লুটে খায় তাদের স্থান এই বাংলার মাটিতে হবে না।’
‘তারা ক্ষমতায় আসা মানেই দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। নিশ্চয়ই আপনারা সেটা নিজেরাই দেখেছেন।’
‘আজকে নয় বছরে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি, সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’ -ঢাকাটাইমস