কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থান এখন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে। বিদেশী ও দেশীয় এনজিওদের সাথে নিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার সবটুকু করছে বাংলাদেশ সরকার। এ সংকটের শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ ও বনায়ন ধব্বংসের অভিযোগ করে আসছিল পরিবেশবাধী সংগঠনের নেতারা। এ সংকটের ১১ মাসের মাথায় জালানিতে পরিবর্তন আনে সরকার। বর্তমানে রোহিঙ্গারা কাঠ নয় গ্যাস ব্যবহার করছে। যার ফলে পরিবেশ যেভাবে বাঁচবে তেমনি বাঁচবে সরকারের সামাজিক বনায়ন।
বন-বিভাগ সুত্রে জানাযায়, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন জালানি হিসেবে ব্যবহার করতো প্রায় ১০ হাজার টন কাঠ। যার বেশীরভাগই আসতো উখিয়া-টেকনাফের সামাজিক বনায়ন উজাড় করে। উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা প্রায় ৫ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ঝুপড়ি নির্মাণ করে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিপুল বনভূমি উজাড় হওয়ায় ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্য ও বনসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে গত এক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের জালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে এসব এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা যেমন খুশি তেমনি কমেছে জালানি কাঠের চাহিদা। চাহিদা না থাকায় অনেকটা কমছে বন উজাড়।
উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানাযায়, এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ২৭ শ‘ বাংলাদেশী পরিবারকে এ গ্যাস প্রদান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে সামনে নতুন প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে সকল রোহিঙ্গা পরিবার এ গ্যাসের সুবিধা পায়।
কুতুপালং ১ ক্যাম্পের বি ব্লকের ৪ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জমির উদ্দিন বলেন, আগে রান্নার জন্য আমরা গাছ কর্তন করতাম। কিন্তু এখন আর করা লাগে না। কারণ আমাদেরকে এখন গ্যাস দেয়া হচ্ছে। গ্যাসে রান্না করতেও সুবিধা তাই আমরা গ্যাস ব্যবহার করছি।
বালুখালী ১ ক্যাম্পের সি ব্লকের রোহিঙ্গা হামিদা বেগম বলেন, কাঠ দিয়ে রান্না করতে খুব কষ্ট হতো। তাছাড়া কাঠ আনতে যেতে হতো। গ্যাসে রান্না করতে সুবিধা তাই এখন আর কাঠে রান্না করা হয়না। কাঠ আনতেও যেতে হয়না। প্রতি মাসে আমাদের গ্যাস ও চুলা দেয়া হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারকে যদি জালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হয় তাহলে পরিবেশ বাঁচবে। পাশাপাশি তাদের গাছ কর্তন না করার পরামর্শ দিতে হবে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, শুনেছি রোহিঙ্গাদের জালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি এ কর্মসূচী যদি সকল রোহিঙ্গার মাঝে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে যে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে সেটি ফিরে আসতে পারে। রোহিঙ্গারা ধারাবাহিকভাবে গাছ কর্তন করায় উখিয়া -টেকনাফের পরিবেশ শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে। জালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহারে সরকারের আরও গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, গত ১১ মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে আমুল পরিবর্তন এনেছে সরকার। যার মধ্যে অন্যতম জালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা। হয়তো আগামীতে এর সুফল পাবে সরকার। যদিও একটু ঝুকি রয়েছে। কারণ রোহিঙ্গাদের অনেকে গ্যাস ব্যবহার করতে জানে না। তাদের এবিষয়ে পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জমান জানান, জালানির চাহিদা মেটাতে গিয়ে রোহিঙ্গারা যেভাবে বন উজাড় করে আসছিল সেটা অনেকাংশে কমে গেছে। এলপি গ্যাস ও চুলা বিতরণ শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গারাও গ্যাসে রান্না করছে। আমরা মনে করছি আগামীতে বন উজাড় শুন্যে’র কোটায় নেমে আসবে।