কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা বাড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বান্দরবানের তুমব্র“ এবং ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চারের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা। সীমান্তের খুব কাছেই লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। রাতে বিজিবি সদস্যদের টহলের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে সোলার লাইট। মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পর্যবেক্ষণের জন্য তুমব্র“ সীমান্তে ইতোমধ্যে বেশক’টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে সীমান্ত বাতি। সক্ষমতা বাড়াতে আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানিয়েছে বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়ন। এ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, আমরা সিসিটিভির সহযোগিতা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমাদের আরো কিছু সিস্টেম আছে, সেগুলো কাজে লাগাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের ইন্টেলিজেন্সি কিছু কার্যক্রম আছে; সেগুলো আমরা নিজেরা করে থাকি। বাংলাদেশ-মিয়ানামার ২০৮ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৫২ কিলোমিটার নাফ নদী, ১৬ কিলোমিটার উখিয়া। সীমান্তের বাকি অংশ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সঙ্গে। যার দৈর্ঘ্য ১৫০ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিরোধপূর্ণ সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত ঘুমধুম ও তুমব্র“। খুব কাছে হওয়ায় প্রায়ই মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবস্থান নিচ্ছে এখানকার সীমান্ত এলাকায়। এর বাইরে তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান নিয়ে আছে সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় চরম আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তমব্রু সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার থেকে সীমান্তে নতুন করে মিয়ানমার সেনা মোতায়েন, বাংকার খনন, ভারী অস্ত্র-সরঞ্জাম মজুদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার ভোরে দুদফা গুলি বর্ষণ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে আমরা আতঙ্কিত।’ আরেক বাসিন্দা দিলদার আহমেদ বলেন, নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা রাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে যার কারণে আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘আমাদের একদম কাছে মিয়ানমার সীমান্ত, পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। কোনো প্রকার যানবাহনের প্রয়োজন হয় না। এর ফলে এখানকার স্থানীয়ারা বেশি আতঙ্কিত রয়েছে।’ গত বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় ফাঁকা গুলি বর্ষণ, মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ এবং সৈন্য সমাবেশের মতো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণের জন্য তুমব্রু সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা আরো বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, সীমান্তে বিভিন্ন পোস্ট বাড়ানো উচিত। যাতায়াতের সুব্যবস্থাও করা উচিত। এ ছাড়া এখানে কোনো প্রকার সমস্যা হলেই যেন দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ঘুমধুম ইউনিয়নে সীমান্ত রয়েছে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। আর এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কথা বলা হয়েছে।