নিউজ ডেক্স : রুট পারমিট ফিটনেস ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লেগুনা ও টুকটুকি। শনিবার রাতে লোহাগাড়ার চুনতিতে দুর্ঘটনা কবলিত লেগুনা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীনিয়ে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ থেকে চকরিয়া যাচ্ছিলো।
লবণবাহী ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া লেগুনার ১৩ যাত্রী ঘটনাস্থলে ও পরে দুইজনসহ ১৫ জন মারা যায়। লেগুনায় চালক ও হেলপারসহ প্রায় ১৮ জন যাত্রী ছিল। শুধু টুকটুকি কিংবা লেগুনা নয়। মহাসড়কে চলছে ইজিবাইক, অটোরিক্ধসঢ়;শা আর মোটশা।
অভিযোগ উঠেছে থানা, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক চাঁদা দেয়ার বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা কিছু ব্যক্তি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অবৈধ এসব যানবাহন নামিয়ে মাসে চাঁদাবাজি করছে লাখ লাখ টাকা। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় একই গ্রুপের নেতৃত্বে চলছে সব লেগুনা। দৈনিক পূর্বকোণ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের মইজ্জ্যারটেক থেকে চকরিয়া পর্যন্ত রুট পারমিট ও ফিটনেস ছাড়া এক হাজারেরও বেশি লেগুনা চলাচল করছে। এরমধ্যে অধিকাংশ লেগুনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বেশ কয়েকজন দূরপাল্লার বাস চালক জানান, মইজ্জ্যারটেক থেকে চকরিয়া পর্যন্ত কক্সবাজার সড়কে লেগুনা, টুকটুকি ও সিএনজি চালিত ট্যাক্সির কারণে গাড়ি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এসব যানবাহনের পাশাপাশি চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া অংশে মোটর রিকশাও রয়েছে। অথচ মহাসড়কে এধরনের যানবাহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, কিন্তু কেউ মানছে না।
লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি) জাকের হোসেন মাহমুদ জানান, আমিরাবাদ থেকে চকরিয়া পর্যন্ত সড়কে কোন বাস সার্ভিস নেই। এ অংশে লেগুনাসহ নানা ধরনের ছোট যানবাহন চলাচল করে। তাছাড়া সড়কের যানবাহনের বিষয়টি দেখাভাল করার জন্য আরো বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে। শুধুমাত্র থানা পুলিশের পক্ষে তা সমাধান সম্ভব নয়। তারপরও বাস মালিক সমিতির সাথে আমি কথা বলেছি। চেষ্টা করছি আমিরাবাদ থেকে চকরিয়া পর্যন্ত বাস সার্ভিস দেয়া যায় কিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন লেগুনা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় থানা, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক টাকা দেয়ার বিনিময়ে তারা সড়কে গাড়ি নামিয়েছে। কিছু গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলেও অধিকাংশ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। নেই কোন ফিটনেস, রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। যেমন- চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া রুটে প্রায় এক হাজারের বেশি অবৈধ লেগুনা চলাচল করছে। সিরিয়াল নম্বর নিতে (ওয়াবিল চালকের ভাষায়) প্রতিবার ১০০ টাকা দিতে হয়।
এছাড়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলে প্রতিগাড়ি মাসিক ২৫০০ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া প্রতিগাড়ি মাসিক ৩০০০ টাকা দিতে হয়। শুধুমাত্র অবৈধ লেগুনা থেকে প্রতিমাসে আট থেকে দশলাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হয়। আইনগতভাবে নিষেধ সত্ত্বেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল করে। লেগুনা নামে যে ছোট গাড়িটি শনিবার রাতে ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায়, সেটির রুট পারমিট নেই।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ২৭ দশমিক ৫ কিলোমিটারের প্রস্ত মাত্র ১৮ ফুট। এর বাইরে আছে পাঁচটি বড় বড় উপজেলা স্টেশন, যেগুলো পার হতে যানবাহনগুলোর অনেক বেশি সময় লেগে যায়।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পটিয়া এবং আমিরাবাদ থেকে চকরিয়া পর্যন্ত সড়কে বাঁকের পর বাঁক। ফলে ভিড় ঠেলে গতি বাড়িয়ে চলতে গেলেই দুর্ঘটনার মুখে পড়ার শঙ্কা থেকে যায়। ১৯৯৫ সালে এই সড়কের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশ প্রশস্ত করা হয়। কিন্তু দুইলেনের সড়কের কর্ণফুলীর শিকলবাহা থেকে দোহাজারী স্টেশন পর্যন্ত অংশটি অতি সরু। দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কটির ব্যস্ততা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
দোহাজারী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, সরু ২৭ কিলোমিটার এবং বাঁকের আরো দুই কিলোমিটার ৩৪ ফুটে প্রশস্ত করার জন্য একটি প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে গাড়ি চলাচল সহজ হবে। শনিবারের দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে সড়ক যথেষ্ট প্রশস্ত ও ভালো আছে। কেবল ট্রাফিক আইন না মানার কারণে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। গাড়ি দুটিরই গতি ছিল বেপরোয়া।