Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভয় ও শঙ্কায় দিন পার করছে নুসরাতের পরিবার

ভয় ও শঙ্কায় দিন পার করছে নুসরাতের পরিবার

images6

নিউজ ডেক্স : শোকে স্তব্ধতার পাশাপাশি ভয় ও শঙ্কায় দিন পার করছে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা নিহত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবার। নুসরাত হত্যা মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার পর সেই ভয় ও শঙ্কা যেন আরও জেঁকে বসেছে। আসামি ও তাদের স্বজনদের অব্যাহত হুমকি-ধমকির কারণে গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলতে চাচ্ছেন না তারা।

নুসরাতের বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের উত্তর চরচান্দিয়ায় গ্রামে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন এলাকার মানুষ। দু-একজন কথা বললেও বার বার অনুরোধ করেন নাম প্রকাশ না করার জন্য।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর এলাকার পরিস্থিতি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের স্বজনরা এর আগে প্রকাশ্যে কথা না বললেও রায় ঘোষণার পর রাস্তা-ঘাটে প্রকাশ্যে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। হাট-বাজার ও রাস্তায় নুসরাতের স্বজনদের শুনিয়েও হুমকি স্বরূপ আসামির স্বজনরা আকার-ইঙ্গিতে হুমকি দিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, নুসরাতের বাড়ির পাশেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির বাড়ি। পার্শ্ববর্তী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, ইফতেখার উদ্দিন রানা, কামরুন নাহার মনি ও মো. শামিমের বাড়ি নুসরাতের বাড়ির আধা কিলোমিটারের মধ্যে। ফলে আসামিদের স্বজনদের সঙ্গে নানা কারণে নুসরাতের পরিবার ও স্বজনদের সাক্ষাৎ হয়ে যায়। এ সময় তারা নানা ধরনের কটূক্তি করে হুমকি-ধমকি দেন। একইভাবে সোনাগাজী পৌর শহরের তাকিয়া সড়কে আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনের বাড়ি। সেখানে অবস্থান নেয়াসহ বাজারে তার অনুসারীদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে কথা-বার্তা বলতে শুনেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

গত ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন আদালতে মাহমুদুল হাসান নোমানকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন আসামিরা। এরপরও নানাভাবে তার কাছে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি আসছে।

গতকাল রোববার দুপুরে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার মা শিরিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, আর কি বলবো। সবতো ইতোমধ্যে বলা হয়ে গেছে।

এদিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুসরাতের বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৬ এপ্রিল থেকে নুসরাতের বাড়িতে একজন এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্য তাদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। রায়ের পর গণমাধ্যমে নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার কথা জানালে নিরাপত্তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এছাড়াও নুসরাতের বাড়ির আশপাশে একাধিক টহল পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।

রায়ে সন্তুষ্ট খালাসপ্রাপ্ত আসামিরাও : নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন খালাসপ্রাপ্ত আসামিরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিনা অপরাধে ২ মাস চারদিন জেল খেটেছি। আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে কি ঝড়টাই না বয়ে গেছে। সে সব কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। পিবিআইকে বার বার ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না বলে জানিয়েছি।

রায় নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তারা বলেন, অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নিশ্চই অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের (১৬ আসামি) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আসামিদের বাড়িতে কান্নার রোল : নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। মামলার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, ও সিরাজ উদ দৌলার বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানরা কেউ নেই। তাদের বাড়িতে স্বজনদের কান্না করতে দেখা যায়। তাদের স্বজনদের দাবি- আদালতের দেয়া রায়ে তারা ন্যায় বিচার পাননি। অন্যায়ভাবে তাদের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নুর উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা রাহেলা বেগম বিলাপ করছেন। আত্মীয় স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান।

একই দৃশ্য অপর দণ্ডপ্রাপ্ত মো. শামীমের বাড়িতেও। তার মা হোসনে আরা বেগমকে আত্মীয়-স্বজনরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তার মাও বিলাপ করে কাঁদছেন। ফাঁসির দণ্ডাদেশের পরও তার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করছেন।

আবদুর রহিম শরিফের মা নুর নাহার কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলে কোনোভাবেই নুসরাত হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত নয়। অধ্যক্ষের সঙ্গে সু-সম্পর্কের কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এ রায় মানি না উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমার ছেলেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ছাড়িয়ে আনবো।

মামলার অপরাপর আসামিদের বাড়িতেও চলছে স্বজনদের কান্না। এমন রায় কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের দাবি- রায়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের কথা বলা থাকলেও সবার একই রায় কীভাবে হয় সেটাই বুঝতে পারছেন না তারা।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ। রায়ে নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!