ওমর ফারুক : চারপাশটা অদ্ভুত সবুজ। যতদূরে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এখানে যেন সবুজের মেলা বসেছে। লাল মাটির উঁচুনিচু টিলা ও ঢোড়াসাপের মত আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হতে হতে দেখা মিলে চাম্বির।
লোহাগাড়ায় বদলি হয়ে আসার পর থেকে এই এলাকায় দেখার মত কি কি আছে তা পরিচিতদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সুবিধা মত সময়ে তা দেখেও আসছি। একদিন ছুটির দিনে নীলাচলে গেলে অন্য ছুটিরদিনে কেয়াজুপাড়াতে কোয়ান্টাম দেখে আসি। আবার একদিন টংকাবতী পর্যটন ঘুরতে গেলে অন্যদিন চুনতি অভয়ারণ্যতে চলে যাই। পাহাড় জঙ্গল টানা দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমার আগের কর্মস্থল সীতাকুণ্ডে পাহাড় -সমুদ্র দুইই ছিল। একদিন পাহাড়ের ঝর্ণাধারায় শরীর ভিজালে অন্যদিন বাঁশবাড়ীয়া কিংবা আকিলপুরের সমুদ্রতটে হেঁটে আসতাম। কিন্তু এখানে চারিদিকে মন জুড়ানো পাহাড় থাকলেও আশেপাশে পানির দেখা মিলে না।
বাধ্য হয়ে পানির টানে এক ছুটিতে চলে যাই আনোয়ারার পারকিতে কিংবা কুতুবদিয়ার সফেদ বেলাভূমিতে। পানির জন্য এত দূরে যাওয়া আমার জন্য কষ্ট হয়ে দাঁড়ালেও কিন্তু চোখের সৌন্দর্য-তৃষ্ণা মেটাতে কোন শুক্র- শনি আমি ঠিকই পানির কাছে পৌঁছে যেতাম। তবে আশেপাশে পানির সন্ধান কোথায় পাওয়া যায় তা খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম সৌন্দর্য খনি চাম্বিলেকের।
চুনতির পানত্রিশা এলাকায় চাষাবাদের জন্য চাম্বিখালের উপর রাবার ড্যাম দিয়ে পানি জমানো হয়েছে। জমানো পানি উজানে লেকের আকার ধারন করেছে এবং অনেক ছোট ছোট টিলাকে এখানে পাহাড়ী দ্বীপ মনে হয়।
কয়েকদিন আগে সহকর্মীদের সাথে চাম্বি লেক দেখতে গিয়েছিলাম। স্পিডবোট নিয়ে ছোট ছোট পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জেগে উঠা ছড়া দিয়ে মিনিট বিশের পানিযাত্রা করেছিলাম। পানিকে দ্বিখণ্ডিত করে অথবা সবুজের বুক চিরে যাওয়া স্পিড বোটযাত্রার অনুভূতি লেখায় প্রকাশ করার মত না। এই অনুভূতি পেতে হলে লেকে আসতে হবে এবং এই অনুভুতি আমি বারবার পেতে চাই।
যারা ভয় পেতে এবং রোমান্স পেতে ভালবাসেন তারা অবশ্যই চাম্বি থেকে একটু দূরে হাতির প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র দেখে আসতে পারেন। সম্প্রতি একটা হাতি বাচ্চা প্রসব করেছে। হাতি নাকি বাচ্চা প্রসবের পরে উন্মত্ত হয়ে যায়। যারা পাগলা হাতির সামনে এডভেঞ্চার করতে চান তারা ঐখানে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। আমার অবশ্যই সাহস না হওয়ায় সেখানে যাওয়া হয়নি।
কি কি আছে চাম্বিলেকে ?
একটা রাবার বোট, একটা স্পিড বোট, দুইটা প্যাডেল বোট, পাহাড়ের টিলায় তিনটা গোল ঘর যা থেকে পুরো পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এক পলকে উপভোগ করা যায়। ছোট ছোট পাহাড়ী দ্বীপ গুলোতে ছবি তোলার সুন্দর ব্যবস্থা আছে, রাবার ড্যামের উপরের ব্রিজেও ভালো ছবি তোলার সুযোগ আছে।
কিভাবে যাবেন ?
চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া অংশের যে জায়গায় শাহ সাহেব গেট আছে সেখানে নেমে পড়তে হবে। সেখান থেকে ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে সাত-আট কিলো আগালে এবং তারপর কাউকে জিজ্ঞেস করলে আপনি পেয়ে যাবেন চাম্বি লেক।
লেখক : লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)।