নিউজ ডেক্স : আগামিকাল শুক্রবার দুপুরে বিয়ে। স্থান নগরের মোমিন রোডের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টার। দুইপক্ষের প্রায় ৫শ’ অতিথির খাবার-প্রস্তুতে বাজারসদাই প্রায় সম্পন্ন। এরই মধ্যে বরপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বরের জন্য নতুন ব্লেজার, জুতা, পায়জামা-পাঞ্জাবি এমনকি টুপিটাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কনের বাড়ি থেকে।
বরপক্ষ চান বিয়ের আগেই যেন তাদের বাড়িতে ফার্নিচার পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী তাদের প্রত্যাশিত সোফাসেট, স্টিল আলমারি, বক্সখাট, ওয়্যার ড্রপ তিনটি ভ্যানে তুলে দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে কনেপক্ষ থেকে বরপক্ষকে ফোনে জানানো হয় ফার্নিচারগুলো গ্রহণ করে যেন ভ্যানভাড়া মিটিয়ে দেন।
ব্যস তাতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে বরের পরিবার। দায়দেনা তো সব কন্যাপক্ষের। কেন বরপক্ষকে ভ্যানভাড়া পরিশোধের কথা বলা হলো সেই ‘অপরাধে’ দুই পক্ষের তর্কবিতর্কে শেষপর্যন্ত বিয়েটাই ভেঙে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বাদ আছর লাভলেইন মসজিদে আকদ হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে নগরের মুহাম্মদপুর ৫৬৫ তৈয়ববাগ এলাকার এনামুল হকের বড় ছেলে জয়নাল আবেদিনের সাথে ৫৭ মোমিন রোডের এফজি হিল টাউনের রফিক আহমেদের মেয়ে তানজিন আক্তার হিরার সাথে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়।
বিয়ে ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কনের বড়বোন রোজি বেগম বলেন, ‘শুরু থেকেই ছেলের পক্ষ একের পর এক চাহিদা প্রকাশ করে যৌতুকলোভী মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছিল। তারা প্রথম থেকে ফুলসেট ফার্নিচারের জন্য চাপাচাপি করছিল। পরে চার রকম ফার্নিচারে দফারফা হলে ফের বলা হয় আসবাবপত্রগুলো উন্নত, অত্যাধুনিক হতে হবে। তারপর বললো, বরের সাজানি কাপড়চোপড় দামি এবং ব্রান্ডের হতে হবে। তাও মেনে নিলাম এবং অগ্রিম পাঠিয়েও দেওয়া হলো।’
এরপর বলল, তাদের অতিথি যা বলা হয়েছে তার চেয়ে শখানেক বাড়বে। সেটা মেনে নেওয়ার পর বললো, খাবার মেন্যুতে খাসির সাথে যে মুরগী হবে সেটা অবশ্যই দেশি হতে হবে। পক্ষান্তরে কনেকে ৪ ভরি স্বর্ণালংকার দেওয়ার কথা থাকলেও শেষমুহূর্তে জানালো, স্বর্ণ ৩ ভরিই দিতে পারবেন তারা। তাও মেনে নিলাম। কিন্তু আজ সবচেয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঘটে গেলো বিয়ে ভাঙার মতো বড় ঘটনা। ভ্যানভাড়া পরিশোধ করতে বলার সাথে সাথেই তারা মারমুখী হয়ে ওঠলো, ভেঙে দিলো বিয়েটা। -বলেন রোজি বেগম।
তিনি বলেন, মূলত বর, তার মা এবং এক মামার যৌতুকলোভী মনোভাবের ফলে বিয়েটা ভেঙেছে। মা ও মামার সাথে সুর মিলিয়ে জিনিসপত্রের জন্য বর জয়নালও আমার বোনকে ফোন করে চাপাচাপি এমনকি রাগারাগিও করতো। সামান্য ভ্যানভাড়ার জন্য বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় আমরা মর্মাহত, হতবাক। যোগ করেন বোন রোজি বেগম।
তিনি বলেন, খাবারের বাজারসদাই, আসবাবপত্র ও ছেলের জন্য কেনাকাটা, কমিউনিটি সেন্টার বুকিংসহ বিভিন্ন খাতে আমার বাবার বেশকিছু টাকা নষ্ট হলেও আমরা ফাইনালি বেঁচে গেছি। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। সেই ঘরে বিয়ে হলে আমার বোন সারাজীবন জ্বলতো।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য বর বা বরের মা-বাবা কাউকে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে পাওয়া যায় বর জয়নাল আবেদিনের মামা সায়েম উদ্দিন চৌধুরীকে। তিনি বলেন, ভ্যানভাড়া দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দুইপক্ষের তর্কাতর্কিতে বিয়েটি ভেঙে গেছে বলে আমিও শুনেছি।
ঘটনাটিকে খুবই দু:জনক এবং অনভিপ্রেত উল্লেখ করে সায়েম উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া ঠিক হয়নি। মোটকথা আমি যা বুঝলাম, তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। মেয়ের পক্ষ থেকে ৭০ হাজার টাকার সাজসজ্জার বাজার কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নেবে এবং তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার বিয়ের দিন সবার সামনে মেপে নেবে-এ জাতীয় কথাবার্তা বলায় দুই পক্ষের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। সেই তিক্ততারই ফল বিয়ের আগের দিন বিয়েভাঙন। তিনিও মনে করেন, আল্লাহ যা করেন সবার ভালোর জন্যই করেন।
ভেঙে যাওয়া বিয়ের বর জয়নাল আবেদিন নগরের কাজির দেউড়ি এলাকায় বাবার মুদি দোকান এনাম স্টোরের দেখাশোনা করেন, আর কনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। একুশে পত্রিকা