নিউজ ডেক্স : স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটই নগরী এবং আশেপাশের পাহাড়গুলোতে গড়ে তোলেন অবৈধ বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা। আবার ওই সিন্ডিকেটের নিয়োগকৃত একটি মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছেন যারা বসতঘরগুলোর জন্য বসতি বা ভাড়াটিয়া খুঁজে আনেন। এই মধ্যস্বত্বভোগীরাই অবৈধ স্থাপনাগুলোর তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন অর্থের বিনিময়ে। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের তত্ত্বাবধানে অবৈধ বসতঘরগুলোতে যারা থাকেন তাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের লোকজন। কম দামে ঘর ভাড়া পাওয়ায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশের গড়ে ওঠা অবৈধ ঘরগুলোতে থাকেন।
এদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য। কিন্তু পাহাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ বসতঘরগুলোতে সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয় না খুব একটা। ফলে সাধারণ লোকজনের সংযোগ পেতে বেগ পেতে হলেও পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে ঠিকই পৌঁছে যায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। এইক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের লোকজনই সরাসরি জড়িত। এই অনিয়ম সম্পর্কে সংস্থাগুলোর প্রধানরা অবগত থাকলেও তা স্বীকারও করতে চান না। মূলত, পাহাড় দখলকারী সেইসব রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের ‘চাপ’ এবং ‘ব্যক্তিসম্পর্কের’ কারণেই চুপ থাকেন সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানরা।
চট্টগ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় যেসব পাহাড় রয়েছে তার মালিকানা আছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার। রেলওয়ে, ওয়াসা, গণপূর্ত অধিদপ্তর. চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তবে চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনার যে কমিটি রয়েছে তাতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আহবায়ক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সদস্য সচিব। অর্থাৎ চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষণাবেক্ষণে একধরনের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব আছে জেলা প্রশাসনের। ওই অবস্থান থেকে পাহাড় অবৈধভাবে যারা স্থাপনা তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই জেলা প্রশাসনের। যদিও এ যাবত সেই ‘রাজনৈতিক সিন্ডিকেটে’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি জেলা প্রশাসনকে। কেবল বর্ষা এলে কিংবা ভূমি ধসের সর্তকবার্তা ঘোষণা দেয়া হলেই নিম্ন আয়ের বসতিদের সরিয়ে দেন। যদিও এরা আবার পুনরায় ফিরে যান পাহাড়ে। অথবা অন্য কোন নিন্ম আয়ের লোকজন ওখানে ভাড়ায় থাকতে আগ্রহ দেখান। ফলে পাহাড় নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর দীর্ঘ মেয়াদী কোন সমাধান হচ্ছে না।
পাহাড়ে বসতি গড়ে কারা : গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে পাহাড়ে অবৈধভাবে বসতঘর নির্মাণকারী হিসেবে স্থানীয় (পাহাড়গুলো যে এলাকায় বিদ্যমান) রাজনৈতিক নেতার নাম বলা হয়েছে। কোন কোন প্রতিবেদনে সু-স্পষ্টভাবে নামগুলো উল্লেখ করা আছে। প্রশাসনের আভ্যন্তরীণ নানা প্রতিবেদনেও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে। পাহাড় সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের সর্বশেষ প্রতিবেদনটি ছিল সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়কে ঘিরে। গত ২৩ জুলাই (২০১৭) সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের তৈরিকৃত প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে (দৈনিক আজাদীর কাছে প্রতিবেদনের একটি কপি রয়েছে) বলা হয়, ‘ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদ এবং আলী নগর সমবায় সমিতি’ এই দুই সংগঠনের ব্যানারে অবৈধভাবে পাহাড় দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদ ৩৪টি পাহাড় ও ৮টি টিলা কেটেছে। প্রতিটি পাহাড়ে ৪৭৬টি করে পরিবার থাকে। এ পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজার ৯০০ জন। প্রতিটি পরিবারের আছে একটি করে প্লট। তাছাড়া এই এলাকায় আছে ৮ হাজার ৯৫০টি পরিবার। আছে তিনটি কিন্ডার গার্ডেন, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কাঁচা বাজার, ৪০টি সাধারণ দোকান ও ১১টি সমাজ। ওই এলাকায় সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে ৬টি ব্রিজ এবং ব্যাক্তিগত অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে ১৫টি কালভার্ট।
অন্যদিকে, আলী নগর সমবায় সমিতির অধীনে আছে ২ হাজার ৫শ প্লট। পরিবার আছে ২ হাজার। প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১টি, মসজিদ একটি, এবাদত খানা একটি। এ সমিতির আছে ৫ হাজার সদস্য ও একটি সমাজ। এই এলাকায় পাহাড় আছে ৩টি। সব পাহাড়ই কাটা হয়েছে। প্রতিটি পাহাড়ে বাস করছে প্রায় ২০টি করে পরিবার।
এদিকে চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজারস্থ মতিঝর্ণা পাহাড়টির মালিকানা আছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। রেলওয়ের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মতিঝর্ণা পাহাড়ের ২৬ একর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে ২ হাজার ৪১টি। যেখানে কাঁচাঘর থেকে শুরু করে বহুতল ভবনও রয়েছে। পাহাড়টিতে বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনার মধ্যে আটটি পাঁচতলা ভবন, ১০টি চারতলা ভবন, ১৬টি তিনতলা ভবন, ৩২টি দ্বিতল ভবন, ৫৫টি একতলা ভবন, ৩৫০টি সেমিপাকা ভবন, এক হাজার ৫০টি কাঁচাঘর, চারটি পাকা মসজিদ, তিনটি পাকা মাদ্রাসা, একটি সেমি পাকা মন্দির, দুটি সেমিপাকা বিদ্যালয় এবং ৫১০ টি পাকা, সেমিপাকা ও কাঁচা দোকানঘর রয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে এসব স্থাপনা উচ্ছেদে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাপ্তরিক চিঠি দিয়েছিল রেরওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে (দৈনিক আজাদীর কাছে প্রতিবেদনটি রয়েছে) বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় গড়ে ওঠা কয়েকটি পাহাড়ে ঘর স্থাপন করে তা ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা উর্পাজন করছে।’ ওই প্রতিবেদনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের কাজের সাথে স্থানীয় থানার ওসিরা জড়িয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এতে প্রশাসনের উপর জনগণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে’।
এদিকে গত ২৮ মার্চ নগরীর বাটালি হিলে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ওইদিন পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠা ‘জাগো ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্কুলের খোঁজ নেয়ার সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছিয়া খাতুনকে স্কুলটির সমন্বয়কারী নাছিমা আকতার সিরাজী বলেছিলেন, ‘আমরা কাউন্সিলর মানিক সাহেবের কাছ থেকে এটির জায়গা কিনেছি’। এ বিষয়ে পরদিন দৈনিক আজাদীতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
বসতিতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ যায় কী ভাবে :
কোন বসত ঘরে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য শর্তানুযায়ী ভূমির মালিকানা দলিল উপস্থাপন করতে হয়। এদিকে চট্টগ্রাম শহর এবং আশেপাশের এলাকায় যেসব পাহাড় রয়েছে সেগুলোর মালিকানা আছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার। অর্থাৎ সেখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের কোন ধরনের বৈধ দলিল থাকার কথা নয়। তবু পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলোর বিপরীতে গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির সংযোগ মিলছে কিভাবে? এ প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়ও সেই প্রশ্ন ওঠেছিল। তবে প্রতিবারই সংস্থাগুলোর পক্ষে দাবি করা হয়েছিল, ‘তাদের অগোচরে অবৈধভাবে সংযোগ স্থাপন করা হযেছে’। তবুও প্রশ্ন ওঠে, সাধারণ লোকজনের পক্ষে কী সংযোগ স্থাপনের প্রযুক্তিগত সুবিধা আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দৈনিক আজাদীর পক্ষে অনুসন্ধান করতে গিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্যাস বিদ্যুৎ এবং ওয়াসার মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাই এই সংযোগ স্থাপন করেছেন ‘আর্থিক লেনদেনের’ বিনিময়ে। কোন ক্ষেত্রে সংস্থার প্রধানরাও এ বিষয়ে অবগত।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বারবার সংস্থাগুলোর প্রধানদের চিঠি দিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত ২৪ মে (২০১৭) চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিপনন) বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে নগরীর বিভিন্ন পাহাড় ঘুরে দেখা গেছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ আছে আগের মতই।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে (২০১৭) পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘ঝু্ঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে অবৈধভাবে ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের অভিযানে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পুনরায় সংযোগ কিভাবে দেয়া হয় সে প্রশ্নও উঠে ওই সভায়’। এদিকে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে যে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তার উদ্বোধন করার অভিযোগ আছে সংসদ সদস্য ও উপেজেলা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে।
বসত করেন কারা :
বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশ ঘুরে এবং সেখানে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব এলাকায় বসবাসকারীদের বেশিরভাগই নিন্ম আয়ের লোকজন। কেউ রিকশা চালান, কেউ বা দিনমজুর। কেউ বা আবার ভ্রাম্যামান বিক্রেতা। তবে এদের পিছনে রয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী প্রভাবশালীরা। যারা এসব পাহাড় অবৈধ দখলে নিয়ে এখানে গড়ে তুলেছেন বস্তি এলাকা। আদায় করেন মাসিক ভাড়া। এদিকে অপেক্ষাকৃত কমদামে বাসা ভাড়া পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বাস করেন নিন্ম আয়ের এসব লোকজন।
মতিঝর্ণা এলাকায় বসবাসকারী রিকশা চালক করিম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাতিয়ায় নিজ বসতভিটা ছিল। নদী ভাঙ্গণে সেই বসতঘর বিলুপ্ত হলে পরিবার নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম শহরে। কমদামে ভাড়া (মাসে ১৫ শ টাকা) পাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও পাহাড়ের পাদদেশে থাকছেন’।
সভা-আল্টিমেটামে কি দায় শেষ ?
২০১৪ সালের ৮ জুন অনুষ্ঠিত ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভায় চট্টগ্রামের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘যারা পাহাড়ে থাকছেন তাদের বাইরেও কিছু মধ্যস্বত্ত্বভোগী রয়েছে, যারা বাড়িঘর তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তাদের একটি তালিকাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’
এর আগে নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ের ঢালে যারা বস্তিঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রথম সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১১ সালে। ওই বছরের ১ জুলাই বাটালি হিল ট্র্যাজেডির পর ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২৫ জুন চট্টগ্রাম ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র অধীনস্থ ভিজিলেন্স সাব-কমিটির বৈঠকেও সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ‘চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ের নিচে অবৈধভাবে বসতি নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হবে’।
বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলেও তার বাস্তবায়ন হয় নি। অবশ্য বর্ষায় মাইকিং, পাহাড়ে বসবাসকারীদের সাময়িক সরিয়েই দায়িত্ব পালন করেছে প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠে, সভা-আল্টিমেটামেই কি প্রশাসনের দায় শেষ?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনে দুইটি ধাপ রয়েছে। প্রধম ধাপে একটি প্রভাবশালী প পাহাড় কেটে কিংবা পাহাড়ের উপর বসতি গড়ে তোলে টাকা কামানোর মানসে। দ্বিতীয় ধাপে শহরে আাশ্রয়ের জন্য মানুষ কম টাকায় পাহাড়ে চড়ে বসে। যারা পাহাড়ে অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছেন তাদেরকে আপনা আপনিই ওইসব বসতি ভেঙ্গে দিতে হবে। অন্যথায় আমরা ভাঙবো। সেই সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেব। আর অবৈধ ওইসব বসতিতে থাকা লোকজনের মধ্যে যারা পুনর্বাসনের যোগ্য তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হবে। পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি সরানোর বড়সড় খবর শীঘ্রই পাবেন।’
কিভাবে পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে বিদ্যুৎ লাইন যায় এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সঞ্চালন লাইন নেয়ার ব্যাপারে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অনেক সময় রাতের আধাঁরে নিজেরাই অবৈধভাবে লাইন টেনে ফেলে। তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, রাজনীতির ছত্রছায়ায়ও অনেক সময় অবৈধভাবে বিদ্যুতের লাইন চলে যায় অবৈধ এসব বসতিতে। আর বড়বড় সমিতির ব্যানারে বিদ্যুৎ লাইনের আবেদন আসে আমাদের কাছে। এতে থাকে রাজনৈতিক তদবিরও। পরে সমিতিকে বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হলে তারা সমিতির নামে বিল পেমেন্ট করে থাকে। তিনি জেলা প্রশাসক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চাইলে যে কোন সময় এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায় বলেও মন্তব্য করেন।
কয়েকদিন আগে দৈনিক আজাদীর সঙ্গে কথা হয়েছিল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হযেছিল। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তবে পাহাড়গুলোর যারা মূল মালিক তাদের পক্ষেও অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা তাদেরকে চিঠিও দিয়েছি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহরে ২৮টি এবং সীতাকুন্ডের ২টি পাহাড় ঝূঁকিপূর্ণভাবে চিহ্নিত। শহরের পাহাড়গুলোতে ৬৬৬টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করে থাকেন। পাহাড় ধসের ঘটনায় শুধু চট্টগ্রাম শহরে গত ১৮ বছরে ১৯৬ প্রাণ হারিয়েছেন।
-আজাদী