নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামবাসীকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সুন্দর জীবন দিবো। সেই ওয়াদা করছি। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কারণ সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। আমি যখন দেশে এসেছি তখন আপনাদের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি হারানো বাবা-মা ও ভাইয়ের স্নেহ। তাই আপনাদের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। যেভাবে আমার বাবা আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আপনারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সুন্দর জীবন দিবো। সেই ওয়াদা করছি।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে নৌকার পক্ষে ভোট চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেন, আমি আপনাদের উন্নয়ন দিতে পারবো। আমরা যদি নৌকায় ভোট পাই, আগামীতে ক্ষমতায় আসি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে। আমরা আজকে দেশের উন্নতি করছি, কাদের স্বার্থে? আপনাদের স্বার্থে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হবে। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা আমার এ কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিবেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আগামীতে ক্ষমতায় আনবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ গৃহহারা থাকবে না। কেউ কুঁড়ে ঘরে থাকবে না। যাদের জমি নেই, তাদের খাস জমি দেবো। যাদের টাকা নেই, তাদের টাকা দেব। একটি মানুষও কুঁড়ে ঘরে থাকবে না, থাকেও না। আওয়ামী লীগ আসলে উন্নয়ন হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে কি করে? মানুষ খুন-লুটপাট। তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না।
এ সময় নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৪ সালে ও সরকার হঠানোর নামে ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় সংগঠিত সহিংস ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তাদের হাত থেকে মা-বাবা থেকে শুরু করে কোলের শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি। ড্রাইভার-হেল্পার কেউ না। খালেদার নির্দেশে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এসব মানুষ। কোনো মানুষ মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে পারে? পারে না। ওরা কোনো মানুষ না।
জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে শায়েখ আবদুর রহমান বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গি সৃষ্টি করেছে। তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার করার সময় উদ্ধার করা হয়েছে। কে করেছে এটা? তার ছেলে তারেক রহমান। ক্ষমতায় থাকতে কালো টাকা বানিয়েছে আবার কালো টাকা সাদা করেছে। এত টাকা আসে কোথা থেকে? মানি লন্ডারিং করেছে, দুর্নীতি করে টাকা পাচার করেছে। তারা দুর্নীতি করে ধরা পড়েছে। এ জন্য সিঙ্গাপুর কোর্টে বিচার হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে টাকা এনে বাংলাদেশের টাকা বাংলাদেশের জনগণের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এই মাটিতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ স্থান হবে না। বাংলাদেশ হবে শান্তির দেশ।
তিনি বলেন, আজকে এতিম খানার জন্য টাকা আসছে। কোরআন শরীফে লেখা আছে এতিমের হক কেড়ে নিও না। এতিমের সম্পদ লুট করো না, এতিমকে তার ন্যায্যা হক দিয়ে দাও। সেই কোরআন শরীফের নির্দেশ না মেনে এতিমের টাকা মেরেছে, একটা টাকাও এতিমকে দেয়নি। সব নিজেরা আত্মসাৎ করেছে। মামলা তো আওয়ামী লীগ সরকার দেয়নি। দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কারা? তারই বেছে নেয়া মাঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন-ইয়াজউদ্দিন। তারাই দিয়েছে মামলা, সেই মামলায় আজ শাস্তি হয়েছে। সেই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন এ মামলা করেছে, কোর্ট রায় দিয়েছে। কোর্টের রায়ও তারা মানে না। এটাই তাদের চরিত্র। তারা আইন মানবে না, কানুন মানবে না, কিছুই মানবে না। মানুষের সম্পদ কেড়ে খাবে, এতিমের টাকা কেড়ে খাবে শান্তি দিলো কেন এ জন্য হুমকি-ধামকি আন্দোলন। জনগণ কোনো দুর্নীতবাজ, জঙ্গি, সন্ত্রাসীর সঙ্গে নাই।
চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, এত নাম বলেও শেষ করতে পারবো না। জামালউদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেলো বিএনপির লোক। ৬ মাস পর তার কঙ্কাল পাওয়া গেলো। তারা শুধু আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তা নয়, নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও ছাড়ে নাই। ওয়াদা করেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো, করেছি। বিচার করে রায়ও কাযকর করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে উন্নয়ন করতে চাই। আমার একটাই চিন্তা এ দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। বাবা-মা বুকের রক্ত দিয়ে গেছে। আমি চাই প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সবাই উন্নত সুন্দর জীবন পাবে। আমার রাজনীতি জনগণের কল্যাণের, জনগণের উন্নয়নের জন্য। আমার রাজনীতি জনগণের কল্যাণের জন্য, প্রতিটি মানুষের উন্নত-সুন্দর জীবনের জন্য।
তিনি বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতির জনক এই দেশে স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে, কারও কাছে হাত পেতে নয়। কেউ ভিক্ষুকের অপবাদ দিতে পারবে না। আপনারা জানেন পদ্মা সেতু নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো বিশ্বব্যাংক। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই, বাবা-মা হারিয়েছি। ভাইদের হারিয়েছি। একজন আপনজন হারালে আপনারা কি সেই কষ্ট সইতে পারেন? আর একই দিনে আমি আমার মা-বাবা, তিন ভাই, ছোট রাসেল ও ভাইয়ের বৌদের, একমাত্র চাচা, মেজো ফুপু, সেজো ফুপুর বাড়িতে আক্রমণ করে কাউকে বাঁচতে দেয়নি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রমুখ।