নিউজ ডেক্স : বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় মাপের ভূমিকা পালন করছে পর্যটনশিল্প। পরিসংখ্যান এটাই জানিয়ে দিচ্ছে, বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যাদের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে পর্যটন শিল্প হতে। কারণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এ শিল্পের অসামান্য অবদান রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রযুক্তিবান্ধব পর্যটন বদলে দিতে পারে অর্থনীতি। কারণ পর্যটন বর্তমান বিশ্বের একক বৃহত্তম এবং দ্রুত সম্প্রসারণশীল শিল্প। বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে এ শিল্পের বিকাশ হয়েছে অকল্পনীয়ভাবে। ১৯৫০ সালে যেখানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের সংখা ছিল ২৫ মিলিয়ন মাত্র যা ৬০ বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালে এসে দাঁড়িয়েছে এক হাজার মিলিয়ন।
একই সময়ে পর্যটন শিল্প থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ১৯৫০ সালে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৭ সালে এসে এক হাজার মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যাদের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে পর্যটনশিল্প হতে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এ শিল্পের অসামান্য অবদান রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের হিসাব মতে, বিশ্বে মোট কর্মসংস্থানের ৮ শতাংশ পর্যটনখাতে হয়ে থাকে। একই সময়ে এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ বিশ্বের মোট বিনিয়োগের ১১ শতাংশ হারে বাড়ছে।
বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায় আফ্রিকার প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে পর্যটনে বিনিয়োগ। পর্যটন শিল্পের জন্য অপরিহার্য যে সব উপাদানের কথা উল্লেখ আছে তা হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাক্তিক নিদর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থান, পাহাড়, নদী, অরণ্য, সমুদ্র সৈকত, মানুষের বিচিত্র জীবনধারা, বন্যপ্রাণী, নানা উৎসব ইত্যাদি। এসব উপাদানের সবই বাংলাদেশে বিদ্যমান।
বাংলাদেশে আছে বহু ঐতিহাসিক স্থান, বহু পুরাকীর্তি। আমাদের রয়েছে ময়নামতির বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র, মহাস্থান গড়, পাহাড়পুর, কান্তজির মন্দির, রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন।
জাতিসংঘ বিশ্ব পযটন সংস্থার র্পূবাভাস অনুসারে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৬০ কোটি। অঞ্চল হিসেবে আফ্রিকা, এশিয়া প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে এই বৃদ্ধির হার হবে বিশ্ব গড়ের চেয়েও বেশি। এই বৃদ্ধির হার হবে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
আশা করা হচ্ছে আগামী ১০ বছরে এই খাত থেকে আয় বেড়ে ১৫শ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। এ ছাড়াও ২০১৮ সাল নাগাদ পর্যটন শিল্প ২৯ কোটি ৭০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বিশ্ব জিডিপিতে ১০ দশমিক ৫ ভাগ জোগান দেবে।
পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ প্রমাণ করেছে ‘পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসাব মতে সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয়ের ৭৫ শতাংশই আসে পর্যটন খাত থেকে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৬৫ শতাংশ, হংকংয়ের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৩০ শতাংশ। মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই পর্যটন খাতের উপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের পরতে পরতে ছড়ানো রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য, হাজার বছরের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির সমাহার ও অপার নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের হাতছানি। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জাতীয় পরিকল্পনায় পর্যটন শিল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত প্রচার চালানো, দেশের ইতিবাচক ভাবর্মূতি প্রতিষ্ঠা ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রয়োজন। প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোক্তাদরে উৎসাহিত করা। এ জন্য তাদের সহজ র্শতে ঋণ সুবিধা ও ট্যাক্স মওকুফ করা, সর্বোপরি পর্যটন তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।