ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | দুই আসনে জামায়াতের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী নিয়ে বিএনপির টেনশন

দুই আসনে জামায়াতের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী নিয়ে বিএনপির টেনশন

023142BNP-Jamaat_pic

নিউজ ডেক্স : নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে টেনশনে রয়েছে বিএনপি। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জোটের প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার জোর সম্ভাবনা রয়েছে জামায়াতের। এছাড়া চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনেও এই দলের দুই নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ‘টেনশন’ তৈরি হয়েছে! এ অবস্থায় তিন আসনে ‘ভোট বেনিফিট’ নিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, জোটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কে কোন সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করবেন সেই সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি জোটের শীর্ষ পর্যায় থেকে। বাঁশখালী আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সামনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকলেও আলাদা নির্বাচন করার কথা ভাবছে দলটি। এ কারণে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনী যুদ্ধে অবর্তীণ হওয়ার পাশাপাশি জামায়াতের প্রার্থীকেও মোকাবেলা করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত টেনশনে বিএনপি।

জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর জামায়াতের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ায় আলাদা নির্বাচনের ব্যাপারে অনঢ় অবস্থানে নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জহিরুল ইসলাম নির্বাচন করলে কপালে ভাঁজ পড়বে বিএনপির। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ঘরে যেতে পারে ভোটের সুফল।

১৯৯১ সালে বাঁশখালীতে জামায়াত প্রার্থী তৃতীয় হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুলতানুল কবির চৌধুরী জিতেছিলেন। বিএনপি প্রার্থী চতুর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াত তৃতীয় হলেও আওয়ামী লীগ ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী থেকে ভোটের ব্যবধানে সামান্য পেছনে ছিল।

১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এই আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জয়ী হয়ে আসছেন। কেবল ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল। এ আসনে বিএনপির কর্মী সমর্থক রয়েছে প্রচুর। অবশ্য উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোসাইনী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম বিন খলিল, কারাবন্দী বিএনপি নেতা গন্ডামারা ইউপির চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভপতি এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিনও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। যদি জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচন করে তাহলে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভোটের হিসাব পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বাঁশখালীতে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। জোটের প্রার্থী হিসেবে এখানে ধানের শীষই মনোনয়ন পাবে। এ ব্যাপারে দ্বিধা নেই।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ উল্লাহ জানান, আমরা ২০-দলীয় জোট ও স্বতন্ত্র দুইভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি রেখেছি। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া আসন নিয়ে সংকট চলছে জামায়াতে। এ আসন থেকে আ ন ম শামসুল ইসলাম নাকি শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচন করবেন এ নিয়ে দুই প্রভাবশালী নেতার সমর্থকদের মধ্যে চলছে স্নায়ু বিবাদ। অবশ্য দুই নেতাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সাতকানিয়া লোহাগাড়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের বিষয়ে শাহাজাহান চৌধুরী আ ন ম শামসুল ইসলামের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভোট তৎপরতায়।

তথ্য অনুযায়ী, কারাগারে যাওয়ার আগেই শাহাজাহান চৌধুরী কেন্দ্রে কেন্দ্রে কমিটি গঠন করে ফেলেছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। টাচ দিয়ে রাখা হয়েছে সাতকানিয়ার ভোটার অধ্যুষিত নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরকে। সব মিলে নির্বাচনী মাঠে জামায়াতের দুই নেতা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শাহাজাহান চৌধুরীর সাথে এবং উপরের স্তরের নেতাদের শামসুল ইসলামকে সর্মথন করতে দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুবিধা পাবেন এটাই স্বাভাবিক বলছেন ভোটাররা। তবে আ ন ম শামসুল ইসলাম কেন্দ্রিয় জামায়াতের গ্রীণ সিগন্যাল পেয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জামায়াত নেতা জানান। এদিকে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনেও শাহজাহান চৌধুরী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। এখানে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই তিনি মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন। তবে এখান থেকেও তিনি নির্বাচন করতে চান বলে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী তার আইনজীবী জানিয়েছেন।

এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন নিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির টেনশন হচ্ছে জামায়াতের প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত কি হয় তাই দেখার অপেক্ষায় ভোটাররা। মনোনয়ন বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী’র চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমীর জাফর সাদেক সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটিকে ‘নিজেদের’ আসন দাবি করে বলেন, এ আসনে জোটের পক্ষ থেকে জামায়াতই নির্বাচনে থাকবে। কিন্তু কে নির্বাচন করবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম। অবশ্য এ আসনে মনোননয়ন প্রত্যাশী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক বিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবদুল গফ্‌ফার চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন রয়েছেন।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!