ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তামাক চুল্লিগুলো গিলে খাচ্ছে স্থানীয় বনাঞ্চলের মূল্যবান বনজ সম্পদ

তামাক চুল্লিগুলো গিলে খাচ্ছে স্থানীয় বনাঞ্চলের মূল্যবান বনজ সম্পদ

(ফাইল ছবি)

(ফাইল ছবি)

নিউজ ডেক্স : লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার তামাক চুল্লিগুলো গিলে খাচ্ছে স্থানীয় বনাঞ্চলের মূল্যবান বনজ সম্পদ। চলতি মৌসুমে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে তামাক চুল্লিগুলোতে পুড়বে প্রায় ৫৬০ মে.টন জ্বালানি কাঠ। যার স্থানীয় বাজার মূল্য ৭ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। তামাক চুল্লিগুলোতে বিপুল পরিমাণ এ জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর ফলে স্থানীয় সংরক্ষিত এবং অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চলসমূহে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকায় দেশের প্রধান প্রধান তামাক কোম্পানী গুলোর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এই সকল তামাক প্রক্রিয়া জাতকরণের কাজে ইতিমধ্যে বাড়িতে বাড়িতে নির্মিত হয়েছে তামাক চুল্লি । তামাক কোম্পানীগুলো তামাক চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষীদেরকে বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার পাম্প ও প্রয়োজনীয় অর্থ সহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া তামাক চুল্লি নির্মাণের কারিগরি দিক এবং আনুষঙ্গিক মালামাল দিয়ে সহায়তা করলেও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য তামাক চুল্লির জ্বালানি সরবরাহ করে না। ফলে চাষীদেরকে তামাক চুল্লির কাঠ সংগ্রহ করতে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার সরকারের সংরক্ষিত এবং অশ্রেণীভূক্ত বনাঞ্চলের বনজ সম্পদ ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হচ্ছে। লামা পৌরসভার ছাগলখাইয়া এলাকার তামাক চাষী মোঃ শাহজাহান জানান, তামাক পাতার গ্রেড অনুযায়ী দাম ঠিক হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ঠিকমত তামাকের শোধনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

তামাক শোধন বা পোড়ানের জন্য কৃষকের বাড়ির আঙিনায় তৈরি করা হয় তামাক চুল্লি। যা স্থানীয়ভাবে তন্দুর নামেও পরিচিত। এলাকাভেদে তন্দুরের সাইজ কিছুটা প্রার্থক্য হয়। তন্দুর নির্মাণে তামাক কোম্পানীগুলো চাষীদেরকে অগ্রিম টাকা প্রদান করে। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি তন্দুরে প্রতি মৌসুমে ২ একর জমির তামাক পাতা শোধন করতে ৮ লোড তামাক পোড়াতে হয়। প্রতিলোড তামাক পোড়াতে সময় লাগে শীতকালে ৭২ ঘন্টা এবং গরমকালে ৬০ ঘন্টা। প্রতি লোডে তামাক পোড়ানোর জন্য গড়ে প্রায় ৩৫ মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার প্রায় ১০ হাজার একর জমির তামাক পোড়ানো বা শোধন করতে তামাক তন্দুরগুলোতে চলতি মৌসুমে ৫৬০ মে.টন জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হবে। স্থানীয় বাজারে ১৩০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, পাতার গ্রেড ঠিক রাখার জন্য তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হয়। এখানে জ্বালানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত জ্বালানি হিসেবে বনজ প্রজাতির গাছই বেশি ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যে হারগুজা, দাড়মারা, গুটগুইট্যা, গর্জন, সেগুন, গামারি কড়ই। এছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল গাছও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, তামাক চুল্লিগুলোতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর ফলে এলাকার বনাঞ্চলগুলো ক্রমশ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে। তামাক চুল্লিতে ব্যবহারের জন্য বাগানের অপরিপক্ষ গাছ এবং কৃষকের বাড়ির আঙিনার দেশীয় বিভিন্ন ফলদ গাছও কেটে তামাক চুল্লিতে পোড়াতে হচ্ছে। জানা গেছে, তামাকের বীজ তলা তৈরির পূর্বে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের কাজ শুরু করে থাকে কৃষকেরা। কোম্পানীগুলো এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কৃষকদেরকে অগ্রিম ঋণ দিয়ে থাকে। তামাক মৌসুমকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠা জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে বন বিভাগের রেঞ্জ এবং বিট অফিসারদের একটি অলিখিত চুক্তি গড়ে উঠে। সে চুক্তিরবলে কাঠ ব্যবসায়ীরা তামাক চাষীদের থেকে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করে নেমে পড়ে স্থানীয় বনাঞ্চলসমুহ উজাড় করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের মহোৎসবে। রাত–দিন এসকল কাঠ পরিবহনে ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহনের কারণে এলাকার গ্রামীণ সড়ক গুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্থানীয় বনাঞ্চল উজাড় করে তামাক চুল্লিগুলোতে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে তামাক কোম্পানীগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তারা কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজী না হলেও লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা থেকে কোন ধরনের কাঠ সংগ্রহ করার সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে বনবিভাগ সজাগ রয়েছে। এছাড়া খবর পাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে মজুদকৃত কাঠ অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হচ্ছে।ইটভাটার চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো অভিযান পরিচালনা করলেও তামাক চুল্লির বিষয়ে রহস্যজনক কারণে উদাসীন। লামা ও আলীকদমের বনজ সম্পদ রক্ষায় এখনই তামাক চুল্লিগুলো কাঠ পোড়ানোর নামে বনজ সম্পদ ধ্বংসের মহোৎসব বন্ধ করা প্রয়াজন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!