Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ডাক্তার নেই, রোগীও নেই

ডাক্তার নেই, রোগীও নেই

নিউজ ডেক্স : প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে সিআরবির বিশাল এলাকা জুড়ে রেলওয়ে হাসপাতালের অবস্থান। চিকিৎসার জন্য চমৎকার পরিবেশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদীর্ঘকাল সুনামের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল এই হাসপাতাল। তখন হাসপাতালটি রোগীতে পূর্ণ থাকত। ছিলেন পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স। জটিল অনেক অস্ত্রোপচার হতো এই হাসপাতালে। সুদৃশ্য কেবিনের চারপাশ ছিল গাছগাছালিতে ভরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের পরেই রোগীদের ভরসার স্থান ছিল রেলওয়ে হাসপাতাল।

এটা এখন অতীত। বর্তমানে নগরবাসী তো দূরের কথা, খোদ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান না। রেলওয়ে হাসপাতালের একই করিডোরে ১০৫ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল এবং ৫৫ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এই দুই হাসপাতাল এখন সারা বছরই থাকে রোগী শূন্য। নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। হাসপাতালের বিশাল অবকাঠামো জুড়ে নার্স, ওয়ার্ড বয়, ফার্মাসিস্ট, আয়ারা বসে বসে অলস সময় কাটান আর মাস শেষে বেতন নেন।

গত বৃহস্পতিবার হাসাপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল জুড়ে কোনো রোগী নেই। এমন দৃশ্য সারা বছরই থাকে বলে জানান হাসপাতালের কর্মচারীরা। রেলওয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের ১৭টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন দুজন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকলেও এখানে ৬ জন সিনিয়র নার্সসহ দায়িত্বে আছেন ১৪ জন। রোগী না আসায় তারাও বেকার বসে থাকেন। খবর নিয়ে জানা গেছে, পরিকল্পিতভাবে গত এক দশকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হয়েছে এক সময়ের সুনাম আর খ্যাতি ছড়ানো রেলওয়ে হাসপাতালটি।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবদুল আহাদ বলেন, সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালে দুটি অংশ- একটি জেনারেল হাসপাতাল, অন্যটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। জেনারেল হাসপাতালটিতে বেডের সংখ্যা ১০৫টি। বক্ষব্যাধি হাসপাতালটিতে বেডের সংখ্যা ৫৫টি। বর্তমানে এই দুটি হাসপাতালে রোগী দেখার মতো কোনো ডাক্তার নেই। সিআরবি হাসপাতালে নার্স, ওয়ার্ড বয়, ফার্মাসিস্ট, আয়া সবাই আছেন। এরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কাজ নেই। ডাক্তার না থাকায় রোগীও আসে না। রেলের স্টাফ-কর্মচারীরা কেউ ডায়াবেটিসের, কেউ প্রেসারের ওষুধ নেওয়ার জন্য আসেন। তারা বাইরে ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রিপসন নিয়ে ওষুধ নিতে আসেন।

তিনি জানান, এই দুটি হাসপাতালে ডাক্তারের পদ আছে ১৭ জনের। কিন্তু এখন আছেন মাত্র ২ জন ডাক্তার। তারা রোগী দেখতে পারেন না। তাদেরকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ পাহাড়তলী এবং চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হয়। ডাক্তার নিয়োগের বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। আরো এক বছর লাগবে। নিয়োগবিধি তৈরি হলে তারপর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ডা. আবদুল আহাদ বলেন, আমি একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন। আমি যদি কোনো রোগীর অপারেশন করি তাহলে আমার একজন সহকারী দরকার, সেটাও নেই। একজন অ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার দরকার। কিন্তু কোনোটাই নেই। আর শুধু এমবিবিএস ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা হয় না। এমবিবিএস ডাক্তারদের একটি সীমাবদ্ধতা আছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দরকার। আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির জন্য। কিন্তু রেলওয়েতে এই ব্যাপারে কারো মাথাব্যথা নেই। এখানে যদি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ, একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ এবং একজন কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকতেন তাহলে রোগী আসত। -আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!