এলনিউজ২৪ডটকম : জুয়া খেলার প্রতিবাদ করায় প্রাণ দিতে হয়েছে লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের সাতগড় নয়া পাড়ার কৃষক আবু জাহেদকে। তিনি ছিলেন সাহসী ও অন্যায়ের প্রতিবাদী। সমাজে যেখানে অন্যায় হতো, তিনি প্রতিবাদ করতেন। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও তিনি সম্পৃক্ত থাকতেন। পরোপকারী জাহেদ দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেননি। বসবাস করতেন একটি টিনের বাড়িতে। প্রায় এক বছর আগে প্রবাস থেকে একেবারে চলে এসেছেন। গ্রামে এসে করতেন কৃষিকাজ। রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতে। এলাকার মানুষজন তাকে ভালোবাসতেন। সন্ত্রাসী হামলায় আহতের পর পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সম্পূর্ণ চিকিৎসার খরচ যোগান দিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে এসব কথা বলেছেন নিহতের ভাই আবু ছালেহসহ এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় নিহত কৃষক আবু জাহেদের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় নিহতের স্বজন, প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রাম থেকে দেখতে আসা শত শত নারী-পুরুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। সৃষ্টি হয়েছে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। বাড়ির উঠোনে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন নিহতের স্বজনরা।
নিহতের স্ত্রী উর্মি সোলতানা সাদিয়া সাদেকা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঘটনারদিন বাড়ির পাশে এক মাদ্রাসায় বার্ষিক সভা হচ্ছিল। সেখানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল। রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য সভা থেকে কিছু আনতে যান। যাবার সময় রাতের খাবার তৈরি করতে বলেন। এসেই খাওয়া-দাওয়া করবেন। কিন্তু আর খাওয়া হলো না তৈরি করা খাবার। বাড়িতে ফিরতে দেরি হচ্ছে কেন জানতে জাহেদের মোবাইলে ফোন দেন। ফোন রিসিভ করে অপরপ্রাপ্ত থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সন্ত্রাসীরা বলে, ‘তুর জামাইকে মেরে ব্রিজের নিচে ফেলে রেখেছি, এসে নিয়ে যা’। সন্ত্রাসীরা জাহেদকে আঘাত করার পর তার মোবাইল ফোনে নিয়ে গেছে। ওই মোবাইল থেকে বিভিন্নজনকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। জুয়া খেলার প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসী হারুন ও জাহেদসহ তাদের সহযোগিরা তার স্বামীকে নির্মমভাবে খুন করেছে। তার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবী করেন তিনি।
দুই সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা : জাহেদ দম্পতির অভাবের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। আড়াই বছরের মো. ইয়াছিন আরফাত ও ১৩ দিনের শিশু জাহেদ বিন ফাইজা। অল্পবয়সে পিতাহারা হল দুই সন্তান। বঞ্চিত হল পিতৃ¯েœহ থেকে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়লো স্ত্রী ও সন্তানরা। অল্প বয়সে পিতাহারা এই শিশু দুটির ভবিষ্যত জীবন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট বেলাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, বুধবার বেলা ১২টার দিকে কৃষক আবু জাহেদ হত্যা ঘটনার ৩নং আসামী ওমর ফারুক প্রকাশ ওমর আদালতে আত্মসমর্পণ পূর্বক জামিন আবেদন করেন। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর পূর্বক কারাগারে প্রেরণ করেন।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে সাতগড় ছড়ার ব্রিজ এলাকায় প্রায় দুই মাস পূর্বে কথা কাটাকাটির জের ধরে একদল সন্ত্রাসী আবু জাহেদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। পরদিন আহতের স্ত্রী উর্মি সোলতানা সাদিয়া সাদেকা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্থানীয় মো. হারুন (৪২), মো. জাহেদ (২৮), ওমর ফারুক প্রকাশ ওমর (৩২), মো. রায়হানকে (৩৩) এজাহারনামীয়সহ ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আহত কৃষক আবু জাহেদ নগরীর এক বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রাত সাড়ে ৮টায় নামাজে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে, একইদিন সন্ধ্যায় নয়াপাড়ায় কৃষক আবু জাহেদের খুনি সন্ত্রাসী হারুন ও তার ছোট ভাই জাহেদসহ হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছেন লোহাগাড়ার সর্বস্তরের জনসাধারণ। তারা ঘটনার সাথে জড়িত ও সন্ত্রাসীদের ইন্দনদাতাদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, আবু জাহেদ হত্যা মামলার আসামী ওমর ফারুক গ্রেপ্তার হয়েছে। আদালতে তার বিরুদ্ধে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার পূর্বক আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।