নিউজ ডেক্স : করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনের হুবেই প্রদেশে থাকা ১৭১ বাংলাদেশিকে এখনই না ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ‘ঝুঁকি’ বিবেচনায় নিয়ে দেশের এবং জনগণের স্বার্থ চিন্তা করেই বাংলাদেশকে এমনটি ভাবার কথা বলেছেন তিনি।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টকে’ রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর গত ১ ফেব্রুয়ারি হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরত আনা হয়। তাদের আশকোনার হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন অবস্থায় (কোয়ারেন্টাইন) রেখে সুস্থতা নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। হুবেই প্রদেশ থেকে ফিরতে আগ্রহী আরও ১৭১ বাংলাদেশি। এজন্য তারা আবেদন জানালেও এ ব্যাপারে সময় নিচ্ছে ঢাকা।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ১৭১ জনকে এখনই ফেরত আনার দরকার নেই। কারণ ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তারা যেখানে আছেন, সেখানে সুরক্ষিতই আছেন। সেখানে যে ফ্লাইট তাদের আনতে যাবে, ওই প্লেন এবং তার পাইলট-ক্রুদের এখন অন্য কোনো দেশ ঢুকতে দেবে না।
সেই ১৭১ বাংলাদেশিকে ফেরানোর ক্ষেত্রে চীনের অনুমতি মিলছে না বলে খবর ছড়ানোর বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, অনুমতি কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো টেকনিক্যাল। ফ্লাইটের পাইলট-ক্রুরাও এই টেকনিক্যাল জটিলতায় পড়বেন।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় চীনের দূতাবাস চীনাদের এ দেশে থাকার ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন কাজে যুক্ত যারা চীনে ফিরে গেছেন, তাদের এখনই ফিরে আসতে নিষেধ করেছে। বাংলাদেশে থাকা কোনো চাইনিজ এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি। আবার চীনে থাকা কোনো বাংলাদেশিও আক্রান্ত হননি। দুর্ভাগ্যক্রমে সিঙ্গাপুরে পাঁচ বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা চলছে।
বাংলাদেশে আট হাজারের মতো চাইনিজ কর্মী রয়েছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনা নববর্ষ উপলক্ষে এই কর্মীদের এক দশমাংশ স্বদেশে ছুটিতে গেছেন। এই সংখ্যা খুব বড় না হলেও এরা কি-পারসন বিধায় প্রকল্পগুলোর কাজ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
লি জিমিং বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানিতে হয়তো সাময়িক প্রভাব পড়েছে। তবে চীন সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। চীনা নববর্ষের ছুটি শেষ হয়েছে। সবাই কাজে যোগ দিতে শুরু করেছে। পণ্য আমদানি-রফতানিতেও গতি আসবে।
করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণে চীনের বদলে বিকল্প বাজার খোলার বিষয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কথা-বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত বলেন, হুট করে অন্য কোনো দেশ থেকে পণ্য খোঁজা এবং সে অনুযায়ী আমদানি করার সিদ্ধান্ত সহজ হবে না।
ভাইরাস চীন থেকে ছড়িয়েছে, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই
রাষ্ট্রদূত
বলেন, উহানে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত পাওয়া গেলেও এই ভাইরাস চীনেই
সৃষ্টি হয়েছে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। পশ্চিমারা বারবার অপপ্রচার
করছে যে, এই ভাইরাস চীনে সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্য নয়। অনেক দেশ চীনকে দোষারোপ
করছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। চীনের সরকার এ ইস্যুতে খুবই সতর্ক ভূমিকা পালন
করছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মানুষের জীবন রক্ষায় সবচেয়ে বেশি
গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা চীন অথবা চীনের বাইরে যেখানেই হোক না কেন।
রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, চীন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আড়াই হাজার চিকিৎসাকর্মীকে উহান শহরে নিয়োগ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে চীন স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে এবং সকল তথ্য বিশ্বকে জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে নানা গুজব বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে লি জিমিং কোনো গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তিনি গোটা বিশ্বকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে করণীয় নির্ধারণে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান।
ভাইরাসের কোনো দেশ-সীমান্ত নেই মন্তব্য করে লি জিমিং বলেন, ১৬০ দেশ চীনকে এ নিয়ে সহমর্মিতা দেখিয়ে বলেছে, তারা আমাদের পাশে আছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে লেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভাইরাসের আক্রমণে স্বজন হারানো চীনা পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সরকার কর্তৃক দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সঠিকভাবে সেবা প্রদানেরও প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গাউন ও হাতমোজা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) শনাক্ত করতে বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ৫০০টি স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপকরণ (কিট) দিচ্ছে চীন। আগামী দুই দিনের মধ্যে উপকরণগুলো বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন খুব নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার মিলে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে বেশকিছু কৌশল প্রণয়ন করছে। রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিষয়। চীন শুধু এটা নিয়ে ইতিবাচক সহযোগিতা করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।