
(ফাইল ছবি)
নিউজ ডেক্স : ঘূর্ণিঝড়, খরার মতো আরেকটি দুর্যোগের নাম অগ্নিকাণ্ড। আগুন শুধু সম্পদহানি করে না মূল্যবান প্রাণও কেড়ে নেয়। আগুনের অতিঝুঁকিতে রয়েছে পুরো চট্টগ্রাম নগরী। বিশেষত নগরীর বাজার, মার্কেট, হাসপাতাল থেকে শুরু করে বস্তি রয়েছে আগুনের অতিঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। আগুনের এই অতিঝুঁকি থেকে নগরবাসীকে নিরাপদ করতে ২৬৮ স্পটে ২৮০টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানোর প্রস্তাব করেছে ফায়ার সার্ভিস। এজন্য চলমান পানি সরবরাহ প্রকল্পের সাথে এসব হাইড্রেন্ট বসানোর জন্য ওয়াসাকে লিখিতভাবে সুপারিশ করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরিপ চালিয়েছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এতে অগ্নিদুর্ঘটনাপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ, অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অনেক মার্কেট, বাজার, বস্তি এলাকা ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহানগরীর আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের আওতাধীন এলাকায় ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুনবাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, সিঙ্গাংপুর সমবায় সমিতি মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল, গুলজার মার্কেট, নন্দকানন ফায়ার সার্ভিসের আওতায় রিয়াজ উদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার, তামাকুমন্ডি লেন, চাক্তাই ফায়ার স্টেশনের আওতায় ভেড়া মার্কেট, চাল পট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন ঝুট মার্কেট, ওমর আলী মার্কেট, ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের আওতায় চৌধুরী মার্কেট, রেলওয়ে বস্তি, কলসী দিঘীর পাড় এলাকার কলোনি, আকমল আলী রোড এলাকাধীন কলোনি, বন্দর এলাকার মধ্যে পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশান মিস্ত্রি বাজার মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট, ফইল্যাতলী বাজার, বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের আওতায় ২নং গেইট রেলওয়ে বস্তি, ড্রাইভার কলোনি, অঙিজেন রাস্তা সংলগ্ন বস্তি, বার্মা কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি, শেরশাহ কলোনি এবং কালুরঘাট ফায়ার সার্ভিস এলাকায় বহদ্দারহাট হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া হাট মার্কেট, বলির হাট মার্কেটকে ‘অতিঝুঁকিপূণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, অতিঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকায় পানির প্রাকৃতিক উৎস একেবারে কম, আগুন নেভানোর আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজনও নগন্য। বিশেষ করে মার্কেটগুলোতে পর্যাপ্ত ফায়ার এঙটিংগুইসার নেই। সবচেয়ে জনবহুল রিয়াজ উদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেন, জহুর হকার্স মার্কেটে অবস্থা একেবারে নাজুক। সুঁই সুতা থেকে প্লাস্টিক, মনোহারী, কেমিক্যাল, গার্মেন্টস পণ্যের বিশাল মজুদ থাকে মার্কেটগুলোতে। গিঞ্জি পরিবেশে চলে কেনাবেচা। মার্কেটগুলোর সরু গলিগুলোতে প্রতিনিয়ত মানুষের ভিড় লেগে থাকে। বিশেষ করে গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে জহুর হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক দোকানপাট ও কাপড়ের গুদাম পুড়ে কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হন ব্যবসায়ীরা।

নগরীর এসব অগ্নিঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় প্রয়োজনের মুহূর্তে পর্যাপ্ত পানির সংস্থানের জন্য ২৬৮টি স্পটে ২৮০টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানোর জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসাকে লিখিত সুপারিশ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তন্মধ্যে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের এলাকায় ৪৯টি, নন্দকানন ফায়ার স্টেশন এলাকায় ৪৩টি, চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ৩৫টি, লামার বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকায় ২৬টি, ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকায় ৩৫টি. কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকায় ৩০টি, বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় ২৬টি, কোরিয়ান ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকায় ১৮টি এবং বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকায় ১৮টি হাইড্রেন্ট বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরী বৃটিশ আমল থেকেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে পেছনে যাওয়ার কোন রাস্তাই নেই। যেকোন মুহূর্তেই ঢাকার চকবাজারের মতো মর্মস্পর্শী ঘটনা চট্টগ্রামেও ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। এজন্য নগরীর প্রায় প্রত্যেক মার্কেট, বাজার, বস্তিগুলো সার্ভে করেছি। ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাশয়গুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে কোথাও আগুন লাগলে পানির সংকট তৈরি হয়। ধার করা পানি দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব নয়। জাইকার অর্থায়নে ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রজেক্টটি চলমান রয়েছে। আমরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ বসানোর সুপারিশ করেছি। এতে চলমান পানি সরবরাহ প্রকল্পে পাইপ বসানোর কাজের সাথেই হাইড্রেন্টগুলো বসানো অনেক সহজতর হবে। এজন্য আমরা ওয়াসার সাথে কথা বলেছি। অর্থ সংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান জাইকাও এই বিষয়ে সম্মত রয়েছে। অগ্নিদুর্ঘটনায় এসব হাইড্রেন্ট খুবই উপকারে আসবে। এতে অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।
সূত্র : দৈনিক আজাদী