ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে

চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে

168

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে এই অঞ্চল থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন ২৪ হাজার ১৭৫ শ্রমিক, যা গত বছরের এসময়ের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার ২১২ জন কম। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের শ্রম বাজার প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত সৌদি আরবে যে পরিমাণ শ্রমিক গেছে সেটি এবার এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এছাড়া কমেছে ওমান, কাতার ও কুয়েত, বাহরাইন ও মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকের সংখ্যাও। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তবে চলতি বছর সৌদি সরকার ১২ থেকে ১৬টি পেশাতে বাঙালিদের কাজ করার বিষয়টি সংকুচিত করে ফেলেছে। এছাড়া আরব আমিরাতের শ্রম বাজার পুরোপুরি চালু না হওয়ায় জনশক্তি রপ্তানি গত বছরের তুলনায় কমে গেছে। চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে আগের বছরের তুলনায় জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। চট্টগ্রাম থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬৬৮ জন শ্রমিক সৌদি আরবে পাড়ি দেন। কিন্তু চলতি বছরে আগস্টে সেটি নেমে এসেছে ৫ হাজার ৫০৪ জনে। যা গত বছরের তুলনায় ১২ হাজার ১৬৪ জন কম। এছাড়া কমেছে কাতারের শ্রমিকও। গত বছর কাতার পাড়ি দেন ৬ হাজার ৭৭২ জন, এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত কাতার গেছেন ৫ হাজার ৯১৪ শ্রমিক। এছাড়া ওমানে গেছেন ১০ হাজার ৪৯৮ জন শ্রমিক, আরব আমিরাতে ২৭০ জন, বাহরাইনে ৪৩ জন, কুয়েতে ১ হাজার ১২৪ জন, মালয়েশিয়াতে ৪৩৫ জন, জর্দানে ২৩ জন, সিঙ্গাপুরে ৭১ জন, দক্ষিণ কোরিয়াতে ১০ জন, ব্রুনাইয়ে ৬৭ জন এবং ইরাকে ৪১ জন শ্রমিক পাড়ি দেন। এছাড়া অন্যান্য দেশে পাড়ি দেন ১৭৫ জন শ্রমিক। এদিকে চলতি বছর আগষ্ট পর্যন্ত সারা দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও বিভিন্ন দেশের পাড়ি দেন ৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৫ জন। যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এক লাখ ৮১ হাজার ৮৯৭ জন কম।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার পুরোপুুরি চালু করতে না পারা, কূটনৈতিক অদক্ষতা ও প্রচলিত শ্রমবাজারে কর্মীর চাহিদা কমে যাওয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ব্যয় সাশ্রয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই ও প্রতিষ্ঠান ছোট করে আনার ফলেও জনশক্তি রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ফলে কমে আসছে বৈদেশিক আয়। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আর এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও অধিক কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ ভোগ করছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ তরুণ। এদের শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হলো রেমিটেন্স। জনশক্তি রপ্তানি এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। তাই এই দুটি দেশে জনশক্তি রপ্তানির বাড়ানোর দিকে সরকারের মনোযোগ দিতে হবে। একইসাথে আরব আমিরাতের দিকে নজর দিতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এমদাদ উল্লাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন,বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক যেতে পারছে। এরমধ্যে আবার সবচেয়ে বড় বজার সৌদি আরব, তিনজন পুরুষ কর্মীর বিপরীতে একজন নারী কর্মী পাঠানোর শর্ত জুড়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার নারীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম। এছাড়া কাজের দিকটাও তারা সংকুচিত করে ফেলেছে। আগের মতো তারা সব পেশাতে কাজ করতে পারছে না। ফলে সৌদি আরবে যাওয়ার সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক কমে গেছে। সৌদি আরবের সাথে কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণেও কাতারে বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ রয়েছে। যা যাচ্ছে তা উল্লেখযোগ্য নয়। সব মিলিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে বলা যায়।

এবিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, গত ২০১৬ সালে ওমানে রেকর্ড সংখ্যক শ্রমিক পাড়ি দেন। গত বছর ওমানের সেই জায়গাটি দখল করে সৌদি আরব। বরাবরের মতোই সৌদি আরব আমাদের দেশের একটি বড় শ্রম বাজার। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বেশি পাড়ি জমান। সৌদি সরকারের নীতিগত অবস্থানের জন্য চলতি বছর দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। বর্তমানে দেশটিতে বেশ কয়েকটি পেশাতে বাঙালিরা কাজ করতে পারছে না। যেমন এখন কোনো বাঙালি চাইলেও মোবাইলের দোকান খুলে ব্যবসা করতে পারবে না। ফলে সৌদি আরবে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। সৌদি আরবের বাইরে কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাতেও শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে আরব আমিরাতে কিছু নিম্নস্তরের কাজের ভিসা চালু রয়েছে। সেখানকার শ্রম বাজার পুরোপুরি চালু করতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বর্তমান সরকার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে দেশে উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কারণ ভবিষ্যতে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বিদেশের মাটিতে অর্থ উপার্জন করাটা কঠিন হয়ে পড়বে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!